একজন শিক্ষক বেতন-ভাতাদি তুলেছেন দু’জনের!

সহকারী প্রধান শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়ে দু’পদেরই বেতন-ভাতাদি তুলেছেন তিনি একই সাথে। ১৪মাস প্রর্যন্ত এভাবে তিনি সরকারী কোষাগার থেকে উত্তোলন করেছেন ১লক্ষ ২০হাজার টাকা। বিষয়টি জানাজানি হলে গঠিত হয় তদন্ত কমিটি। এ অনিয়ম ও দুর্ণীতি ধরা পড়লে রহস্যজনকভাবে ধামাচাপা পড়ে। ফলে সরকারের উক্ত টাকা আত্মসাৎ হয়ে যায়। সংশ্লি­ষ্টদের অসাধুপায়ে এভাবে সরকারী টাকা আত্মসাতের ঘটনার অভিযোগ পাওয়া গেছে মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে।

সংশ্লি­ষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কালকিনি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০০৫সালের জানুয়ারী থেকে ২০০৭সালের ডিসেম্বর মাস প্রযন্ত আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণের লক্ষে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তাকে প্রধান করে গঠিত হয় একটি তদন্ত কমিটি। ২০০৮সালের ২২জানুয়ারী সমবায় কর্মকর্তা এস এম সরোয়ার আলম উক্ত বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে তদন্ত কার্য সম্পন্ন করে ২পদের সরকারী ১লক্ষ ২০হাজার টাকাসহ ঘরভাড়া, ভুয়া চেকের মাধ্যমে খরচ দেখানো, মাঠ ভরাট, মোবাইল ফ্লেক্সি লোড, বিদ্যালয়ের টিন ক্রয় মেরামতে বর্তমান প্রধান শিক্ষক এইচ এম নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্ণীতি খুঁজে পান।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট দাখিলকৃত তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭সালের ফেব্র“য়ারী মাসে এমপিও কোড-৭ অনুসারে বেতন-ভতা বাবদ বিল আসে এবং উক্ত মাস থেকে ৭নং কোডে প্রধান শিক্ষকের বেতন-ভাতাদি প্রাপ্য। কিন্তু তিনি সহকারী প্রধান শিক্ষক কোড-৯ অনুসারে বেতন-ভাতাদি অতিরিক্ত উত্তোলন করেন যার কোন বৈধতা নেই। সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসাবে বেতন স্কেল ৬হাজার ৮শ’ টাকায় তিনি প্রতি মাসে উত্তোলন করেছেন ৫হাজার ৯শ’ ৭৫টাকা। এদিকে প্রধান শিক্ষকের ৯হাজার টাকার স্কেলে ২০০৪সালের অক্টোবর মাসে বেতন-ভাতাদি প্রাপ্ত হন ৬হাজার ৩শ’ ৫৮টাকা কিন্তু তিনি অক্টোবর মাসে উত্তোলন করেন ৪হাজার ৫শ’ ৩৯টাকা (কারণ তখনও তিনি সহকারী প্রধান শিক্ষকের বেতন গ্রহন করেন), তাছাড়া ২০০৪সালে অক্টোবর মাসের সিনিয়র শিক্ষকের স্কেল ৪হাজার ৩শ’ টাকা হলেও তিনি উত্তোলন করেছেন ৪হাজার ৫শ’ ৩৯টাকা, কিন্তু বেতন-ভাতাদি বাবদ প্রধান শিক্ষকের ৯হাজার টাকার স্কেলে ৬হাজার ৩শ’ ৫৮টাকা। এতে দেখা যায় তিনি প্রধান শিক্ষক  হিসেবে এমপিও ভূক্ত হন ২০০৫সালে ডিসেম্বর মাসে। তাই ২০০৪সালের অক্টোবর থেকে ২০০৫সালের নভেম্বর পর্যন্ত ১৪মাসে উত্তোলিত ১লক্ষ ২০হাজার ৪শ’ ২১টাকা ছিল সম্পূর্ণ অবৈধ।

ইউএনও ও মাধ্যমিক শিক্ষা আিফসের একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, উক্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সরকারী টাকা আত্মসাতের প্রমাণ সদ্য বিদায়ী ইউএনও হাবিবুর রহমান, শিক্ষা কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ রায় ও সহকারী

শিক্ষা কর্মকর্তা লিটু চ্যাটার্জী অবগত আছেন। কিন্তু তাঁরা রহস্যজনভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। পরিচালনা পর্ষদের প্রাক্তন দাতা সদস্য মেজবাহ্ চৌকিদার বলেন, ‘তার এই দুর্ণীতির সঠিক সমাধান হওয়া জরুরী, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেছে’।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উক্ত বিদ্যালয়ের এক সিনিয়র শিক্ষক বলেন, ‘বিদ্যালয়ের না এটা প্রধান শিক্ষকের দূর্ণীতি। যারা দুর্ণীতি প্রতিরোধে প্রশাসনে আছেন তাঁরাও এর সাথে আড়ালে জড়িত আছে কি-না এখন সেই প্রশ্ন সবার মাঝে দেখা দিয়েছে’।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ রায় বলেন, ‘দুই পদের সরকারী টাকা উত্তোলন করেছে কি-না আমার জানা নাই। তবে এটা একটা সম্পূর্ণ অনিয়ম ও দুর্ণীতি। কেউ অভিযোগ দিলে ব্যাবস্থা নেয়া হবে’। ‘এ ব্যাপারে আমার জানা নাই। তবে সে এরকম অনিয়ম করলে তদন্ত করে ব্যাবস্থা নেয়া হবে’ বললেন উক্ত বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মীর গোলাম ফারুক।

অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক এইচ এম নজরুল ইসলামের সাথে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি অনিয়ম ও দুর্ণীতির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে একটি ষরযন্ত্রমূলক অডিট করানো  হয়েছিল। যা আমি মানি নাই। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অডিট করেছে তাতে আমার বিরুদ্ধে কোনো অনিয়ম পায় নি’।