দুর্গম পাহাড়ি গ্রামে সামরিক মেডিকেল টিমের কাজ শুরু

১১টি উপজাতীয় গ্রামের ২৫ জন হাম ও জলবসন্তে মারা যাওয়ার পর শত শত নারী-পুরুষ সেনাবাহিনীর বিশেষ মেডিকেল টিমের সদস্যদের কাছ থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করছেন। এ টিমের কাজ গত বুধবার থেকে শুরু হলেও টিম সদস্যরা এখনো সেখানে অবস্থান করছেন। ১২ সদস্যের একটি শক্তিশালী সেনা মেডিকেল টিম সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারযোগে বুধবার দুপুরে দুর্গম এলাকায় পৌঁছে। গত কয়েকদিনে সেখানে ২৫টি শিশু মারা যায় হাম ও জলবসন্ত রোগে। তবে দুর্গম ওইসব এলাকায় বিশেষ সেনা মেডিকেল টিম গিয়ে চিকিৎসা সেবা প্রদানের পর রোগ নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করেছে। সামরিক মেডিকেল টিমের সদস্যরা এবং গ্রাউস ও সেভ দ্যা সিলড্রেন এর মেডিকেল টিম আক্রান্ত এলাকায় অবস্থান করে আরও চিকিৎসা প্রদান করবেন বলে জানা গেছে।

বান্দরবান সেনা রিজিয়নের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় আলীকদম জোন থেকে ডা. ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলামের নেতৃত্বে বিশেষ মেডিকেল টিম সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে দুর্গম এলাকায় গিয়ে এ চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন। সেনা রিজিয়নের কর্মকর্তারা জানান, আলীকদমের দুর্গম পোয়ামহুরী ও কুরুপপাতা সেনা ক্যাম্প এলাকার ১১টি উপজাতী গ্রামে হাম ও জলবসন্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ১৮-২৬ এপ্রিল পর্যন্ত ৭দিনে ১৭টি উপজাতীয় শিশু মারা গেছে বলে তারা নিশ্চিত হয়েছেন। তবে ওই এলাকার গ্রামবাসীদের বরাত দিয়ে জনপ্রতিনিধিরা এ ২টি রোগে মৃতের সংখ্যা ২৫জন বলে জানিয়েছেন। উপদ্রুত এলাকায় এ পর্যন্ত ৩টি মেডিকেল টিম পৌঁছেছে বলে জানা গেছে। এরমধ্যে সামারিক মেডিকেল টিম ছাড়াও সিভিল সার্জেন এর প্রতিনিধি মেডিকেল অফিসার কৃঞ্চ কান্তি দাশের নেতৃত্বে গ্রাউস ও সেভ দ্য চিলড্রেন এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের যৌথ উদ্যোগে ৬ সদস্যের একটি মেডিকেল টীম কাজ শুরু করেছে বলে গ্রাউস সূত্রে জাননো হয়। গ্রাউসের মেডিকেল টীমের অন্যান্যদের মধ্যে মেডিকেল এসিস্ট্রন মিন্টু কান্তি পালও রয়েছেন। এরপূর্বে সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ইয়াছিন শরীফ চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি মেডিকেল টিম সেখানে পাঠানো হয়েছে।

এ রির্পোট লেখা পর্যন্ত সেনা সূত্র থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা যায় তাদের মেডিকেল টীম আক্রান্ত এলাকায় পৌছে গেছেন এবং রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার কাজ চলছে।তারা রোগীদের মাঝে বিনামুল্যে বিপুল পরিমাণ ওষুধপত্রও প্রদান করেন। মেডিকেল টিমের সদস্যরা প্রাথমিকভাবে ওই রোগকে হাম ও জলবসন্ত বলে জানিয়েছেন। তবে রোগের আলামত পরীক্ষার পর প্রকৃত অবস্থা জানা যাবে বলেও সুত্র জানিয়েছে। এদিকে আলীকদম উপজেলা সদর থেকে ৩০-৪০ কিলোমিটার দুরে কুরুকপাতাঝিরি ও পোয়ামুহুরী অঞ্চলের ম্রো ও ত্রিপুরা অধ্যূষিত প্রায় ৫০টি গ্রামে গত ২মাস ধরে নানা রকমের রোগব্যাধি দেখা দিয়েছে। এলাকায় বিশুদ্ধ পানীয়জল সমস্যা ছাড়াও রোগের ব্যাপারে অজ্ঞতার কারণেই ওইসব গ্রামে অসংখ্য লোক ইতিমধ্যেই অকালে মারা গেছে। শত শত লোক বিভিন্ন রোগব্যাধিতে ভুগছেন বর্তমানে। সরকারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের লোকজন সেখানে যায়না বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে স্থানীয়ভাবে থাকা নিরাপত্তা বাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্পগুলো থেকে দুর্গম এলাকার উপজাতীয় গ্রামবাসীরা প্রাথমিক চিকিৎসা এবং জরুরি প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর আর্থিক সহায়তায় হেলিকপ্টারেও রোগীদের জেলা সদর ও চট্টগ্রামে চিকিৎসা সেবা পেয়ে আসছেন বলে উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম জানিয়েছেন।।