বরিশাল শিক্ষাবোর্ডের স্বাক্ষর জাল করে জালিয়াতির জন্ম দিল এক অধ্যক্ষ

জালিয়াতির জন্ম দিলেন বরগুনার আমতলী বকুল নেছা মহিলা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ ফোরকান মিয়া। এর আগে তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্যের স্বাক্ষর জাল করে মন্ত্রনালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে ডিউলেটার পাঠানোর গুঞ্জন রয়েছে। তার বিরুদ্ধে জাল জালিয়াতিসহ নানাবিধ অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। এমনকি প্রথম স্ত্রীও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন।  

জানা গেছে, বকুল নেছা মহিলা কলেজের ডিগ্রি ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ৫টি নতুন সাবজেক্ট খোলার অনুমতি চেয়ে মন্ত্রনালয়ে আবেদন করেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফোরকান মিয়া। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রনালয়ে বরিশাল শিক্ষাবোর্ডকে পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়। পরিদর্শনের দ্বায়িত্ব পান বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক সরদার আকবর আলী ও সহকারী পরিদর্শক আবুল বাশার হাওলাদার। পরিদর্শন শেষে ২০১০ সালের ৬ এপ্রিল তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করে মন্ত্রনালয়ে প্রেরন করেন কলেজ পরিদর্শক। ওদিকে কলেজ পরিদর্শক ও সহকারী পরিদর্শকের প্রস্তুতকৃত প্রতিবেদনটি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিজের মনগড়া ভাবে তৈরি করে মন্ত্রনালয়ে পাঠিয়েছেন। এক্ষেত্রে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কলেজ পরিদর্শক ও সহকারী পরিদর্শকের স্বাক্ষর জাল করেছে। অভিযোগ উঠেছে শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শকের অফিস থেকে মুল প্রতিবেদনটি নিজে পাঠানোর কথা বলে করায়ত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত্ অধ্যক্ষ। এরপর তিনি জালিয়াতির প্রতিবেদনটি একই তারিখ উল্লেখ করে মন্ত্রনালয়ে পাঠান। মুল প্রতিবেদনে ২০০৮/০৯ শিক্ষাবর্ষে ছাত্রী সংখা ৭৬ জন এবং ২০০৯/১০ সালে ৬৫ জন দেখানো হয়। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত অধক্ষের জালিয়াতির প্রতিবেদনে ২০০৮/৯ শিক্ষাবর্ষে ৯৬ জন ও ২০০৯/১০ শিক্ষাবর্ষে ১১৩ জন দেখানো হয়েছে। প্রতি বিষয়েও ছাত্রী সংখ্যা বাড়িয়ে ভুয়া প্রতিবেদন তৈরি করেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ।

এ প্রসঙ্গে কলেজ পরিদর্শক সরদার আকবর আলী বলেন আমার প্রস্তুতকৃত প্রতিবেদনটি কিভাবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়েছে তা জানা নেই। তবে শিক্ষাবোর্ড কিংবা মন্ত্রানালয় থেকে নিয়েও জালিয়াতির প্রতিবেদন তৈরি করতে পারে। তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে মন্তব্য করেন।

অপরদিকে এর আগে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফোরকান মিয়া স্থানীয় সাংসদ ধীরেন্দ্র দেবনাথ সম্ভু’র স্বাক্ষর জাল করে আমতলী বকুল নেছা কলেজে কেন্দ্র পেতে মন্ত্রনালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে ডিউ লেটার প্রেরন করেন। এরফলে ২০০৯-১০  শিক্ষাবর্ষে সেখানকার আমতলী ডিগ্রি কলেজের কেন্দ্র বাতিল করে বকুলনেছা মহিলা কলেজে কেন্দ্রও নির্ধারন করা হয়। বিষয়টি ফাঁস হয়ে গেলে আমতলী ডিগ্রি কলেজ স্থানীয় সাংসদের স্বাক্ষর নিয়ে কেন্দ্র বহালের দাবীতে মন্ত্রনালয়ে ডিউলেটার পাঠান। এতে বকুলনেছা কলেজের কেন্দ্র বাতিল করে আগের আমতলী ডিগ্রি কলেজের কেন্দ্র বহাল রাখা হয়।

এদিকে জামায়াত পন্থী ফোরকান মিয়া ১৯৮৮ সালে বরগুনা দারুল উলম কামিল মাদ্রাসার পিয়ন হিসাবে কর্মরত ছিলেন। পিয়ন থাকাকালীন সময়ে ১৯৯০ সালে দাখিল পরীক্ষায় তিনি অংশ গ্রহন করেন। তৎকালীন সময়ে পরীক্ষার কেন্দ্রে লুচ চুরির দায়ে তিনি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যান। এ কারনে তার পিয়নের চাকুরীচ্যুত হন। ১৯৯৯ সালে তিনি বকুলনেছা মহিলা কলেজে শিক্ষক হিসাবে যোগদান করে একের পর এক অপকর্ম করে চলছেন। প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ব্যাতিত নিজ কলেজের ছাত্রীকে দ্বিতীয় বিয়ে করে আরেক বিতর্কের সৃষ্টি করেন। দ্বিতীয় বিয়ে করায় প্রথম স্ত্রী নুরুন্নাহার বেগম স্বামী ফোরকানের বিরুদ্ধে অধ্যক্ষের নিকট অভিযোগ দেন। ২০০৯ সালের ২৭ মে স্থানীয় জাহিদুল ইসলাম নামের এক ব্যাক্তি ফোরকানের বিভিন্ন নারীদের যৌন হয়রানী করার বিচার চেয়ে আইনগত ব্যাবস্থা নিতে মন্ত্রনালয়ে এক লিখিত অভিযোগও দেন।

সর্বশেষ গত ১২ এপ্রিল এইচএসসি’র ইংরেজী দ্বিতীয় বিষয়ে পরীক্ষা শুরুর ৩৫ মিনিট পর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফোরকান মিয়া ৫ ছাত্রীকে প্রশ্নপত্র দেয়ায় বেশ তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়। এজন্য অভিভাবক ও ছাত্রীদের তোপের মুখে পড়েন তিনি। অধক্ষের এরকম খামখেয়ালীপনার বিষয়টি জাতীয় ও স্থানীয় মিডিয়ায় ফলাউ করে প্রকাশ হয়েছে। আমতলী ডিগ্রি কলেজৈর অধ্যক্ষ মজিবুর রহমান বলেন দীর্ঘ বেশ কয়েক বছর ধরে আমতলী ডিগ্রি কলেজে কেন্দ্র বহাল রয়েছে। হঠাৎ করে জানতে পারি আমতলী ডিগ্রি কলেজের কেন্দ্র বাতিল করে বকুলনেছা কলেজ কেন্দ্র নিশ্চিত হয়। পরে স্থানীয় এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ সম্ভুর ডিউলেটারের মাধ্যমে আবার কেন্দ্র বহাল থাকে। তিনি (এমপি) আরো বলেন বকুলনেছা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধক্ষের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ নানা মহলে আলোচনায় আলোচিত হচ্ছে। যদিও তার বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করতে রাজী নই।

বকুলনেছা মহিলা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফোরকান মিয়া বলেন একটি মহল আমার নামে মিথ্যা বানোয়াট ভিত্তিহীন বিষয় অপপ্রচার চালাচ্ছে। ওই মহলটি আমার ও কলেজের সুনাম বিনষ্ট করতে উঠেপড়ে লেগেছে। তিনি বলেন অমি কখনোই জাল স্বাক্ষরের মাধ্যমে ডিউলেটার বা প্রতিবেদন তৈরি করে মন্ত্রনালয়ে পাঠাইনি।
(এজে/গৌরনদী ডটকম)