নাদিয়া হত্যা মামলায় পুলিশের রহস্যজনক ভূমিকা

দাবি করেছেন মামলার বাদি ও হত্যভাগ্য কামরুন নাহার নাদিয়ার ছোট ভাই সজিব আহম্মেদ শাহ্রিয়ার সুজন। তিনি পুলিশের বিরুদ্ধে মামলার অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারে রহস্যজনক ভূমিকা পালনের অভিযোগ করেছেন। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় মোবাইল ফোনে তিনি গৌরনদী ডটকম-কে জানান, রিমান্ডের নামে পুলিশ বানিজ্যে নেমেছে। থানা হাজতে খুনী রেজাউল সিকদার জামাই আদরে রয়েছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

নাদিয়া হত্যা মামলাটি সঠিক তদন্ত পূর্বক খুনীদের ফাঁসির দাবিতে তিনি (সুজন) রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনগুলোর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তিনি আরো অভিযোগ করেন, ঢাকার হাজারীবাগ থানার ওসি রফিকুল ইসলাম খুনী রেজাউলের পূর্ব পরিচিত। তার (ওসির) সাথে খুনী রেজাউলের পূর্বের দহরম মহরম রয়েছে। যে কারনে মামলার ভবিষ্যত নিয়ে তাদের মধ্যে এখনই শংকা বিরাজ করছে।

সূত্রমতে, ২০০৬ সালে রেজাউল সিকদার বরিশালের গৌরনদী উপজেলার পাশ্ববর্তী কালকিনি উপজেলার পাঙ্গাসিয়া গ্রামের খালেক হাওলাদারের প্রথম কন্যা সূর্বনা আক্তারকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। ২০০৯ সালে সূর্বনার ছোট বোন (রেজাউলের শ্যালিকা) স্কুল ছাত্রী সুজিতা আক্তারকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে জোড়পূর্বক রেজাউল তৃতীয় স্ত্রী হিসেবে বিয়ে করে। ওইসময় এলাকাবাসি সন্ত্রাসী রেজাউল ও সহযোগীদের প্রতিরোধের চেষ্টা করলে গ্রামবাসীর সাথে রেজাউল ও তার বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে উভয় গ্রুপের কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়েছিলো। ওই ঘটনায় খালেক হাওলাদার বাদি হয়ে কালকিনি থানায় রেজাউল ও তার বাহিনীর ক্যাডারদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিলেন। পুলিশ চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ত্রাসী রেজাউল ও তার সেকেন্ড ইন কমান্ড বাপ্পী সরদারকে গ্রেফতার করেছিলো। পরবর্তীতে দহরম মহরমের মাধ্যমে পুলিশ মামলাটির ফাইনাল চার্জশীট দিয়েছিলো। তৎকালীন সময়ের কালকিনি থানার ওসি রফিকুল ইসলাম-ই হচ্ছে বর্তমান হাজারীবাগ থানার ওসি রফিকুল ইসলাম। যে কারনে ওসির সাথে খুনী রেজাউলের পূর্ব সম্পর্ক থাকায় মামলার অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতার, রিমান্ডের নামে প্রহসনসহ মামলার তেমন আর কোন অগ্রগতি হচ্ছে না বলে নাদিয়া হত্যা মামলার বাদি অভিযোগ করেন।

সিকদার সফিকুর রহমান রেজাউলের নিজ এলাকা বরিশালের গৌরনদীর টরকী বন্দরের একাধিক ব্যবসায়ীরা পিতৃ হত্যাকারী ও চতুর্থ স্ত্রীকে হত্যা করে লাশগুমের নায়ক খুনী রেজাউল সিকদারের ফাঁসির দাবিতে মসজিদ ও মন্দিরে মানত করেছেন বলেও খবর পাওয়া গেছে। এদিকে আগামি দু’একদিনের মধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে রেজাউলের টর্চার সেলের ভুক্তভোগীরা সরকারের কাছে খুনী রেজাউল সিকদারের ফাঁসির দাবি করবেন বলেও গৌরনদী ডটকম-কে জানিয়েছেন। প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে ভুক্তভোগীরা রেজাউলের সকল অপর্কমের সঠিক তদন্ত পূর্বক বিচারের দাবি করেছেন।

গতকাল শুক্রবার দুপুরে খুনী রেজাউল সিকদারের টর্চার সেল টরকী বন্দরের “সিকদার ভিলা” ঘুরে দেখা গেছে বাড়ির সম্মুখে তালাবদ্ধ। নৈঃশব্দের মতো শুনসান নিরবতা। কোথাও কোন মানুষের কোলাহল নেই। অথচ কয়েকদিন পূর্বেও সন্ত্রাসী রেজাউল সিকদারের ক্যাডারদের পদচারনা ও উল্লাসে মুখরিত ছিলো সিকদার ভিলাটি। স্থানীয়রা জানান, গত ২৪ এপ্রিল রাতে রেজাউল সিকদারের তৃতীয় স্ত্রী সুজিতা কাজের মেয়েদের ছুটি দিয়ে বাড়ির গেটে তালাবদ্ধ করে গাঁ ঢাকা দিয়েছে। সেই থেকে অদ্যবর্ধি বাড়িটি তালাবদ্ধ রয়েছে।