লামা ও আলীকদমে হাম ও জলবসন্তের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে

ও গজালিয়াতে হাম ও জলবসন্তের প্রকোপ এখন নিয়ন্ত্রণে। আক্রান্ত পাড়াগুলোতে সেনাবাহিনী, স্বাস্থ্য বিভাগ ও এনজিও’র ৪টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। গত মাসে হাম আক্রান্ত হয়ে এ দু‘উপজেলার ২০ জন উপজাতি শিশু মারা গেছে মর্মে স্বাস্থ্য বিভাগ ও সেনাসূত্র জানিয়েছে। তবে স্থানীয়দেও মতে, মৃতের সংখ্যা ২৮ জন।

আলীকদম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. নুর-ই-আলম জানান, দুর্গম এলাকা থেকে একটি মেডিকেল টিম ফেরত এসেছে। সেনাসূত্রে এ পর্যন্ত সেখানে মৃতের সংখ্যা ১৮ জন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তিনি জানান, আক্রান্ত ব্যক্তিদের গায়ে প্রথমে লাল ও দানা যুক্ত ফোসকা শরীরে উঠার পর জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। আলীকদম সেনা জোন সূত্র জানান, হামে আক্রান্তদের মৃত্যু হয়েছে। মৃতরা সকলেই ১ থেকে ১৮ বছর বয়সী। এদিকে, ফেরত আসা স্বাস্থ্য বিভাগের মেডিকেল টিমের কাছে মৃত চার জনের তালিকা পাওয়া গেছে। এরা হলো- রুইনক মুরুং (২১), সংতাও মুরুং (৪), দনরই মুরুং (৩) ও রামদন মুরুং (৭)। স্বাস্থ্য টিম আক্রান্ত ব্যক্তিদের মল সংগ্রহ করে হাম কিনা পরীক্ষার জন্য নিয়ে এসেছে। অপর এক খবরে জানা গেছে, বর্তমানে উপজেলার চাইম্প্রা মৌজার দোছরী এলাকার আশপাশের পাড়াগুলোতে এই জলবসন্ত ও হামের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়েছে। তবে এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত সেখানে মেডিকেল টিম পাঠানো হয়নি বলে স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে।

লামা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শফিউর রহমান জানিয়েছেন, উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ৬টি মেডিকেল টিম চিকিৎসা সেবা প্রদান করছেন। হাম আক্রান্ত পাড়াগুলোর শিশুরা সুস্থ হয়ে উঠছে। নতুন করে কেউ হাম আক্রান্ত হওয়ার কোন খবর পাওয়া যায়নি। দুর্গম এলাকায় চিকিৎসা না পেয়ে কাঁঠালছড়া ও ওয়াক্রাও হানারী কারবারী পাড়ার ২ শিশু মারা গেছে। মৃতরা হলো সুমি ত্রিপুরা (৪) ও জলমা ত্রিপুরা (৩)। এছাড়াও বিভিন্ন পাড়ায় আক্রান্ত হয়েছে অন্তত ৭০ শিশু।

আলীকদমের দুর্গম মারাং পাড়া, সিন্দু পাড়া, ইয়াংরিং পাড়া, কামপুক পাড়া, পাহাড় ভাঙ্গা পাড়া, নিন্দ্রা পাড়া, আন্দালী পাড়া, চায়ানতলী পাড়া, রেনজক পাড়া, বড়বেতি পাড়া, হাতি বাজার ত্রিপুরা পাড়া, দরিংতংহ্লা পাড়া এবং লামা উপজেলার কাঠালছড়া পাড়া, ওয়াক্রাও কারবারী পাড়া, ইয়াংছা বাগান পাড়া, তাওছড়া মুরং পাড়া, চিয়ম মুরুং পাড়া, বড় বমু চাইলতাঝিরি পাড়া, তুলাতলী পাড়া এবং চিন্তাবর পাড়ায় এ রোগ ছড়িয়ে পড়ে।

সেনা বাহিনীর ডা. ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আশরাফুল আলমের নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী মেডিকেল টিম হাম আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করে আসছেন। এছাড়াও গ্রাউস ও সেভ দ্যা চিলড্রেন এনজিও এবং স্বাস্থ্য বিভাগের যৌথ মেডিকেল টিমও সেখানে কাজ করছে।

এদিকে, গত ৫ এপ্রিল থেকে আলীকদমের কুরুকপাতা-পোয়ামুহুরী এবং লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ও গজালিয়াতে প্রাথমিকভাবে হাম ও জলবসন্তের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলেও তা স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের নজরে আসেনি। কুরুকপাতা ও পোয়ামুহুরীর আক্রান্তদের খবর সর্বপ্রথম সেনাবাহিনীর নজরে আসে গতমাসের শেষের দিকে। লামা ও আলীকদম উপজেলার দুর্গম পাড়াগুলো ইপিআই কর্মসূচীর আওতায় না আসায় এসকল অঞ্চলের শিশুরা হামসহ ৬টি মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।