ভবিষ্যতৎ অনিশ্চিত বরিশালের নির্মাণাধীন নৌবন্দরের

কীর্তনখোলা নদীতে চর জেগে উঠায় নৌ বন্দরের ভবিষ্যৎ নিয়ে আনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে ।

দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবির মুখে গত বছর আধুনিক নৌ-বন্দর টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু হয়। তখনই নৌবন্দর এলাকায় চর জেগে উঠায় এর ভবিষ্যত্ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল লঞ্চ মালিকরা। সে সময় বিআইডবি¬উটিএ ড্রেজিং করে চর অপসারণ ও নদীর মাঝখানে ১শ’ ফুট গ্যাংওয়ে নির্মাণ করে নৌবন্দর সচল রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু এখন যেভাবে নদী ভরাট হচ্ছে তাতে এ টার্মিনাল বরিশালবাসীর কতটুকু উপকারে আসবে সেটা নিয়ে এখন নৌ-বন্দর কর্তৃপক্ষই সন্দিহান। প্রয়োজনীয় ড্রেজিংয়ের অভাবেই এমন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে বলে লঞ্চ মালিক ও চালকরা জানিয়েছেন। তবে বন্দর কর্মকর্তাদের দাবি, ড্রেজিং করতে পারলে তেমন কোনো সমস্যা সৃষ্টি হবে না।

১৯৫৮ সালে বরিশাল নৌ-বন্দর প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই নৌবন্দর দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের প্রধান মাধ্যম হিসাবে বিবেচিত হয়ে আসছে। ২০০৪-০৫ অর্থ বছরে এ নৌবন্দরে আধুনিক টার্মিনাল ভবন নির্মাণের জন্য প্রথমে ৪১ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। কিন্তু কাজ শুরুও করা যায়নি। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ১৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে টার্মিনাল আধুনিকায়নের কাজ শুরু করে। নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান। আগামী জুন মাসে নির্মাণ কাজ শেষ হবে। কিন্তু টার্মিনাল ভবন নির্মাণ শুরু হওয়ার সাথে সাথে সেখানে চর জেগে উঠায় লঞ্চ চলাচল ব্যাহত হতে থাকে। এ অবস্থার অবসানে গত বছর অক্টোবর মাসে শুরু হয় নৌবন্দর এলাকায় ড্রেজিংয়ের কাজ। দু’মাস ড্রেজিং করেও কীর্তনখোলার নাব্যতা ফেরানো সম্ভব হয়নি। ডিসেম্বরের শুরুতে পলি অপসারণের কাজ অসমাপ্ত রেখেই দু’টি ড্রেজারের মধ্যে একটি সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।  এর ফলে কীর্তনখোলার বিশাল এলাকায় পলিমাটি জমে উঠে। নদীর পানি কমে যাওয়ায় এখন ঢাকা-বরিশাল রুটের লঞ্চগুলো চলাচল করছে বিআইডবি¬উটিসি’র স্টীমার ঘাট থেকে। যেখানে আধুনিক নৌবন্দর টার্মিনাল নির্মাণ হচ্ছে সেখান থেকে এখন নদীর দূরত্ব প্রায় দুইশ’ ফুট। একশ’ ফুট গ্যাংওয়ে নির্মাণ করলেও এ নৌবন্দর কোনো কাজে লাগবে না বলে লঞ্চ মালিক ও নৌযান শ্রমিকরা জানিয়েছেন।
তাদের বক্তব্য কীর্তনখোলার মূল স্রোত পর্যন্ত দুইশ’ গজ গ্যাংওয়ে নির্মাণ করলে আপাতত এই টার্মিনাল ভবন কাজে লাগতে পারে। দীর্ঘ গ্যাংওয়ে নির্মাণের জন্য নতুন করে অর্থ বরাদ্দ প্রয়োজন বলে বিআইডবি¬উটিএ’র প্রকৌশলী তারিকুল ইসলাম জানান। নৌবন্দর কর্মকর্তা ওয়াকিল নেওয়াজ জানান, আধুনিক নৌবন্দর নির্মাণ প্রকল্পে নদী ড্রেজিংয়ের জন্য তিন কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ইতিপূর্বে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্যাসিফিক মেরিনের দু’টি ড্রেজার দিয়ে কীর্তনখোলায় ড্রেজিং করা হয়েছে। সংশ্লি¬ষ্টরা জানিয়েছেন জেলখালের মুখ ভরাট হয়ে যাওয়া ও রসুলপুর চর বিস্তৃত হওয়ায় প্রতি বছর হাজার হাজার টন পলি এসে নৌবন্দর এলাকায় জমা হয়। যেভাবে পলি জমছে তাতে নৌ-বন্দরটি কার্যকর করা যাবে কিনা তা নিয়ে শংকা বাড়ছে।

লঞ্চ মালিকরা জানান, যদি নাব্যতা সংকটের কারণে লঞ্চ ভিড়তে না পারে তাহলে আধুনিক টার্মিনাল যাত্রীদের কোনো উপকারে আসবে না।
বিআইডবি¬উটিএ’র সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ড্রেজার সংকটের কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সঠিক সময়ে ড্রেজিং করতে পারলে বরিশাল নৌবন্দরের এই বেহাল অবস্থা সৃষ্টি হতো না।