কালকিনি পুলিশের উপর আস্থা হারাচ্ছে সাধারণ মানুষ!

অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এ কে এম শাহীন মন্ডল সেই পুরনো অবয়বে আবারো আবির্ভূত হয়েছেন। যোগদানের পর থেকেই তিনি পুলিশ বাহিনীকে জনসাধারণের মাঝে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পুলিশের অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতামূলক কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়ে পড়ায় মধ্য ও বিত্তশালী পরিবারের দিন কাটছে আতংকের মধ্য দিয়ে। সাধারণ মানুষের কাছে পুলিশ মূর্তিমান আতংক হয়ে উঠেছে। থানার অফিসার ইনচার্জ ওয়ান ইলেভেনের সময়কার ভূমিকায় আবারো যাওয়ায় পুলিশের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলছে সাধারণ মানুষ। অনিয়ম ও দুর্ণীতিতে জর্জারিত হয়ে পড়ায় ফুঁসে উঠছে ভূক্তভোগীরা। এতোমধ্যে পুলিশের পুলিশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ, স্মারকলিপি প্রদান, মানববন্ধন ও পুলিশ কর্মকর্তাদের শাস্তি দাবীতে সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত সোমবার (২রা মে) মাসিক আইন শৃঙলা সভায়ও তীব্র প্রতিবাদ ও পুলিশ সুপারের নিরব ভূমিকার সমালোচনা করা হয়েছে।

বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, উপজেলার চরদৌলতখাঁ এলাকায় ১০এপ্রিল দুপুরের পর থেকে পুলিশের একটি দল এলাকার মানুষদের ধাওয়া দিয়ে গ্রাম ছাড়া করে এবং স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য ওয়াজেদ আলী সরদারকে গ্রেফতার করে। পুলিশের এরমক স্বেচ্ছাচারী ও অনিয়মতান্ত্রিক কর্মকান্ডের প্রতিবাদে পরের দিন সকাল ৮টায় প্রায় ৫ থেকে ৬হাজার স্থানীয় মানুষ বিক্ষোভ সমাবেশ করে ইউএনও’র কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছে। পুলিশের বিরুদ্ধে এতো বিশাল বিক্ষোভ মিছিল এর আগে কখনো দেখা যায়নি। হিংসাপরায়ন হয়ে বিক্ষুদ্ধ স্থানীয়দের ওই শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিলে লাটি চার্জ করে ৫জনকে আহত করে। পহেলা বৈশাখের বর্ষ বরণের র‌্যালীতে রং ছুঁরে মারাকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের জের ধরে পুলিশের কর্মকর্তা আশফাক, আজিজ ও ফায়েকুজ্জামান লাটি নিয়ে চর ঝাউতলা গ্রামে গিয়ে তান্ডব চালিয়ে ঘর থেকে মহিলাদের টেনে হিঁচরে বের করে মধ্য অমানুষিক পিটুনি দেয়। মধ্যযুগীয় কায়দায় নিরীহ গ্রামবাসীর উপর পুলিশী হামালায় আহত হয় মহিলা ও শিশুসহ কমপক্ষে ৩০থেকে ৩৫জন। তাৎক্ষানিক ইউএনও’র উপস্থিতিতে আওয়ামীলীগ ও প্রশাসনের সংশি¬ষ্টরা জরুরী সভায় বসলে তোপের মুখে পড়ে অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এ কে এম শাহিন মন্ডল। তিনি তদন্ত করে দোষী পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিবেন বলে ক্ষতিগ্রস্থদের আশ্বাস দিয়ে মিথ্যাচার করার অভিযোগ উঠেছে। যাঁরা এখনো সিগারেটও পান করে না এমন দু শিক্ষার্থীকে সম্প্রতি পুলিশ গ্রেপ্তার করে মাদক আইনে কোর্টে চালান করেছে। একটি মারামারীর ঘটনার মামলায় বাঁশগড়ি এলাকার সবুজ বেপারী নামের এক আসামীকে আটকের পর হাতকড়া পড়িয়ে থানায় আনার সময় পুলিশের সহযোগীতায় বাদীপক্ষ তাকে দেশীয় অস্ত্রদিয়ে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করেছে। এনায়েত নগর এলাকায় একটি গুপ্তহত্যাকে কেন্দ্র করে পুলিশ দু’জনকে গ্রেফতার করে গভীর রাতে ২০হাজার টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দিয়েছে বলে ওই এলাকার সকলের মুখেই শোনা যাচ্ছে। মৃত লাশের বিনিময়েও পুলিশ কর্মকর্তারা ঘুষ নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। চরদৌলত খাঁ এলাকায় স্বামীকে তালাক দিয়ে প্রেমিকাকে বিয়ে করে সুন্দর একটি সংসার বাঁধছিল ইশরাত জাহান তন্নী নামের নববধূ। নানা ঘটনার জন্মদানকারী পুলিশ কর্মকর্তা আজিজুর রহমান হানা দিয়ে ওই সুন্দর সংসারটি ভেঙে চুরমার করে দিয়েছেন। চরদৌলত খাঁ এলাকায় জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়ে শালিস-মিমাংসা শেষে দাবী অনুযায়ী টাকা না পাওয়ায় গোপনে এক মাস পরে মামলা দিয়ে অর্থ বাণিজ্য করছে এসআই নাসির উদ্দিন। পুলিশ কর্মকর্তাদের অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতামূলক কর্মকান্ডে সাধারণ মানুষ অতিষ্ট হয়ে পড়েছে।

পুলিশের অনৈতিক কর্মকান্ডের তীব্র প্রতিবাদ ও সমালোচনা করা হয়েছে গত সোমবার উপজেলা অফিসার্স ক্লাবে অনুষ্ঠিত মাসিক আইন শৃঙলা সভায়। কালকিনি থানার অফিসার ইনচার্জ এ কে এম শহিন মন্ডল তোপের মুখে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন। এছাড়াও মৌখিক অভিযোগ ও পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলেও জেলা পুলিশ সুপার সরদার মোঃ তমিজউদ্দিন কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় তার নিরব ভূমিকারও সমালোচনা করা হয়।

উল্লেখ্য কালকিনি থানার বর্তমান অফিসার ইনচার্জ এ কে এম শাহিন মন্ডল তত্ত্বাবদায়ক সরকারের সময়ে এই থানায় কর্মরত থেকে জরুরী ক্ষমতার অপব্যবহারসহ সাধারণ মানুষকে বিভিন্নভাবে হয়রানী করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।