সেনা মেডিকেল টিমের ১১২ জন রোগীকে চিকিসা প্রদান

ও জলবসন্তের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে এসেছে। বৃহস্পতিবার (৫ মে) আলীকদম জোনের প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত সেনা মেডিকেল টিম ১১২ জনকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন। যারমধ্যে ২১ জন হাম, ১ জন জলবসন্ত (চিকেনপক্স), ৯০ জন ডায়রিয়া ও জ্বরসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত ছিল।

আলীকদম জোন কমা-ার লে.কর্ণেল এসএম ইমরানউজ্জামান আমারদেশকে বৃহস্পতিবার জানান, গত ২২৪ এপ্রিল স্থানীয় মুরুংরা পোয়ামুহুরী আর্মি ক্যাম্পে সংবাদ দেয় যে, ক্যাম্পের আশেপাশে ১১টি মুরুং পাড়ায় বিভিন্ন বয়সী শিশুরা একটি অজানা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। সেনা বাহিনীর হিসেবে গত ৬ এপ্রিল হতে অজ্ঞাত রোগে মৃতের সংখ্যা ১৭ জনে দাড়ায়। গত ২৪ এপ্রিল এ সংবাদের সূত্র ধরে সেনাবাহিনীর পোয়ামুহুরী আর্মি ক্যাম্প থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ স্যালাইনসহ জ্বর ডায়েরিয়া এবং ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ হিসেবে কিছু সাধারণমাত্রার ওষুধ আক্রান্ত পাড়াসমুহে পাঠানো হয়।

জোন কমান্ডার আরো বলেন, আক্রান্ত শিশুদের ধরণ দেখে জোন সদরের মাধ্যমে বিষয়টি বান্দরবান সেনা রিজিয়নকে অবগত করানো হয়। এরপর চট্টগ্রাম ডিভিশন ও রিজিয়ন সদরের প্রত্যক্ষ সহায়তা ও নির্দেশনা মোতাবেক আলীকদম জোনের তত্ত্বাবধানে ক্যাপ্টেন আব্দুল মালেকের নেতৃত্বে জোনের মেডিকেল অফিসার ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আশরাফুল আলম, আলীকদম স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা ডাঃ মোখলেসুর রহমানসহ জোনের ২ জন মেডিকেল এসিস্টেন এবং এবং কিছু সংখ্যা প্রাথমিক চিকিৎসা যোগ্যতাসম্পন্ন সৈনিকের সমন্বয়ে একটি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়। এ মেডিকেল টিমটি গত ২৭ এপ্রিল সামরিক হেলিকপ্টারযোগে পোয়মুহুরী আর্মি ক্যাম্পে গমন করে এবং ওইদিন থেকেই তারা আক্রান্ত পাড়াসমুহ পরিদর্শন এবং চিকিৎসা সেবা প্রদান শুরু করেন।

সেনা মেডিকেল টিম কর্তৃক বিস্তারিত নীরিক্ষণে রোগটি মূলতঃ হাম হিসেবেই নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে বৃহস্পতিবার প্রদত্ত প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। এতে আরো জানানো হয় যে, মৃত ১৭টি শিশুর মধ্যে একজনের রোগ জলবসন্ত  (চিকেন পক্স) এবং অল্প কয়েকজনের হামের সাথে ডায়রিয়া ছিল। সেনা জেনা কর্তৃক প্রেরিত মেডিকেল টিমের সদস্যদের অক্লান্ত এবং নিরলস পরিশ্রমের কারণেই দ্রুত মহামারী রূপ ধারণ করা রোগসমুহকে স্বল্পসময়ের মধ্যেই নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা সম্ভব হয়। সেনা মেডিকেল টিমের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ এবং দক্ষ সেবার কারণেই দুর্গত এলাকায় রোগাক্রান্ত হয়ে নতুন করে কোন মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।

জোন কমান্ডার লে.কর্ণেল ইমরানউজ্জামান জানান, সেনা মেডিকেল টিমের প্রত্যক্ষ ভূমিকার কারণেই বর্তমানে আক্রান্ত পাড়াসহ অন্যান্য পাড়াসমুহের সার্বিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। অতিরিক্ত পদক্ষেপ হিসেবে ইতোমধ্যে সেনাবাহিনী প্রচারণামূলক সভাও করে যাচ্ছে। যাতে ভবিষ্যতে এ রোগে আক্রান্ত কোন মৃত্যু না ঘটে সে বিবেচনায় গত ৪ মে সেনা মেডিকেল টিমের উদ্যোগে পোয়ামুহুরী এলাকার বাসিন্দাদের নিয়ে একটি জনসচেতনতামূলক আলোচনা করা হয়। সভায় এ ধরণের রোগে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে হাতে-কলমে পরামর্শ ও শিক্ষাদান করা হয। এ মেডিকেল টিমটি বৃহস্পতিবার দুপুরে সামরিক হেলিকপ্টারযোগে ফেরত এসেছে।

সর্বশেষ তথ্য হিসেবে দেখা যায়, সেনা বাহিনীর হিসেবে চিকিৎসা শুরুর পূর্বে আক্রান্ত ১৮ জন মারা গেছে। গত বুধবার পর্যন্ত সেনা মেডিকেল টিম ১১২ জনকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন। যারমধ্যে ২১ জন হাম, ১ জন জলবসন্ত (চিকেনপক্স), ৯০ জন ডায়রিয়া ও জ্বরসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত ছিল। রোগীদের চিকিৎসা সেবা পাশাপাশি মেডিকেল দল আক্রান্ত পাড়াসমুহের দুঃস্থ ও অসহায় জনগণের মাঝে দুধ, বিস্কুট, চা পাতা ও ভোজ্য তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রিও বিতরণ করেন।