জমির জন্য শিকল বেঁধে নির্যাতন!

অমানবিক নির্যাতনকরেছে শ্বশুর বাড়ির লোকজন। এ অভিযোগে বুধবার বরিশালের একটি আদালতে মামলা করেছেন নির্যাতিতা সালেহা বেগম। তিনি শিকলে বাধা

অবস্থায় বাড়ি থেকে পালিয়ে এসে আদালতে মামলাটি দায়ের করেন বলে জানান নির্যাতিতার আইনজীবী বশির আহম্মেদ সবুজ। আদালত ঘটনাটিকে অত্যন্ত নিষ্ঠুর ও অমানবিক উল্লেখ করে নির্যাতিতার নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তা আদালতকে অবহিত করার জন্য বাকেরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে অভিযোগ তদন্ত করে ৫ জুনের মধ্যে পুলিশি প্রতিবেদন জমা দানের নির্দেশ দিয়েছেন বরিশাল চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিট্রেট আদালতের বিচারক আলতাফ হোসাইন। অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার ফরিদপুর গ্রামের বাসিন্দা সালেহা বেগম প্রতিবেশী জিতেন নাথ দাসের কাছ থেকে দীর্ঘ দিন আগে ১৫ শতাংশ জমি ক্রয় করে তাতে ঘর তুলে মানসিক প্রতিবন্ধী স্বামী বজলুল সিকদারকে নিয়ে বাস করছিলেন।

কিন্তু ওই জমি জোরপূর্বক আত্মসাৎ করার জন্য তার শ্বশুড়বাড়ির লোকজন তৎপর ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১ মে সকালে জোরপূর্বক জমিতে থাকা গাছ কেটে নিতে চেষ্টা করেন তারা। এসময় তিনি বাধা দিলে ক্ষিপ্ত হয়ে ভাসুর সোবাহান সিকদার, দেবর গনি সিকদার, ভাসুরের ছেলে ফারুক সিকদার এবং ননদ রানী বেগম তাকে রান্না ঘরের খুঁটির সঙ্গে লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে রেখে নির্যাতন করে।  সালেহা বেগম সাংবাদিকদের জানান, শিকল বাঁধা অবস্থায় পাড়া প্রতিবেশীর কাছে তিনি অনেক কাকুতি-মিনতি করেছেন। কিন্তু নির্যাতনকারীদের ভয়ে  কেউ তার সাহায্যেেএগিয়ে আসতে রাজি হয়নি। এরই এক পর্যায়ে সুযোগ বুঝে কোনওমতে পালিয়ে আসেন ৩দিন আগে। কিন্তু তার শিকল খুলে দেয়নি কেউ। এমনকি পালানোর পর ৩দিন তিনি গ্রামের এখানে সেখানে আত্মগোপনে থাকেন। শেষ পর্যন্ত বুধবার বিকেলে লোহার শিকল থেকে মুক্ত হন সালেহা বেগম। তিনি জানান, বুধবার সকালে স্থানীয় শর্ষী পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে গেলে সেখানে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরাও শিকল খুলে দিতে অস্বীকার করেন। এমনকি অভিযোগটুকু পর্যন্ত গ্রহণ করেননি তারা। তবে তারা তাকে আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেন।

পরে শিকল পরা অবস্থায়ই বরিশাল আদালতে উপস্থিত হয়ে নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করেন সালেহা বেগম। সালেহার আইনজীবী বশির আহম্মেদ সবুজ বলেন, প্রথমে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিট্স্ট্রেট মৃত্যুঞ্জয় মিস্ত্রির আদালতে নালিশী অভিযোগ দায়ের করা হয়। তবে ঘটনাটি নিষ্ঠুর ও অমানবিক উল্লেখ করে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিট্রেটের কাছে নালিশী অভিযোগটি পাঠান হাকিম মৃত্যুঞ্জয়। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিট্রেট আলতাফ হোসাইন এ ধরনের ঘটনা যাতে পুনরায় না ঘটে সেজন্য সালেহা বেগমের নিরাপত্তামুলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বাকেরগঞ্জ থানর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে এ ব্যাপারে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা আদালতকে অবহিত করতে বলেন বিচারক। এছাড়া সালেহা বেগমের শিকল খুলে দেওয়ার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয় বলে জানান আইনজীবী।