বাড্ডায় গৃহবধূ শিল্পীর রহস্যজনক মৃত্যুর জট খোলেনি

খোলেনি। নিহতের পরিবার শিল্পীকে গলা টিপে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেছে বাদী পক্ষ। এ ঘটনায় হত্যা মামলা হলেও পুলিশ বিশেষ কারণে আসামিদের গ্রেফতার করছে না। ফলে আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং নিহত শিল্পীর পরিবারের সদস্যদের মামলা প্রত্যাহারের হুমকি দিচ্ছে।
গত ১৪ এপ্রিল রাতে বাড্ডা থানাধীন উত্তর বাড্ডা তেতুলতলা রোডের আব্দুল মান্নান মাস্টারের বাড়িতে রহস্যজনকভাবে মারা যায় গৃহবধূ শিল্পী আক্তার। ঘটনাটিকে চাপা দিতে নিহতের স্বামী সুমন মল্লিক, দেবর সুজন মল্লিক ও মিন্টু মল্লিক এবং ননদ মাসুমা বেগম শিল্পীর মৃতদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও কর্মচারীরা তাদের আটক করে। এ সময় এলাকার পরিচয় দিয়ে দুজন পালিয়ে যায়। বাকি সুজন ও মাসুমাকে বাড্ডা থানা পুলিশে সোপর্দ করে।

এ ঘটনায় বাড্ডা থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা (নং-৪৯) হয়। পুলিশ তাদের অপমৃত্যু মামলায় সন্দিগ্ধ হিসেবে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। এদিকে নিহত শিল্পীর মামা মো. ফোরকান প্যাদা বাদী হয়ে গত ১৬ এপ্রিল বাড্ডা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। কিন্তু এর মধ্যেই দেবর সুজন ও ননদ মাসুমা জামিনে মুক্তি পেয়ে মামলা প্রত্যাহারের জন্য বাদীকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। বিষয়টি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অপারেশন মাহাবুবুর রহমান ও মামলা তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মশিউর রহমানকে জানানোর পরও পুলিশ সুমনসহ মামলার আসামিদের রহস্যজনক কারণে গ্রেফতার করছে না। এদিকে নিহত শিল্পী বাড্ডার তেতুলতলা রোডের যে বাড়িতে রহস্যজনকভাবে মারা যায় সেই বাড়ির লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সুমন মল্লিক প্রায় ২ মাস আগে তার স্ত্রী শিল্পীকে নিয়ে ভাড়া আসে। প্রায় প্রতিদিনই তাদের মধ্যে বাক-বিতণ্ডা হতো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বাড়ির একাধিক বাসিন্দা জানান, ঘটনার দিন দুপুরে স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া হয়। সন্ধ্যার পর শিল্পীকে সুমন মারধর করে। রাত ৮টায় সুমনসহ তার বোন মাসুমা, ভাই সেন্টু ও মিন্টু ঘরের দরজা আটকে দেয়। এরপরই ঘরের ভিতর শুরু হয় দাপাদাপি। প্রায় আধা ঘণ্টা পর বাড়ির লোকজন ঘটনাস্থলে গেলে শিল্পীকে বিছানার উপর পড়ে থাকতে দেখেন। এসময় মাসুমা ঘর থেকে বের হয়ে বালতি ভরে পানি নিয়ে শিল্পীর মাথায় ঢালতে থাকে। রাত সাড়ে ৯টায় শিল্পীর স্বামী সুমনসহ অন্যরা একটি সিএনজি অটোরিক্সায় করে শিল্পীকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। নিহতের মামা মামলার বাদী মো. ফোরকার প্যাদা জানান, শিল্পীকে হত্যা করা হয়েছে। কারণ যে ঘরে সে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার করা হয়েছে সে ঘরে কারো পক্ষে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলে আত্মহত্যা করা সম্ভব নয়। ঘটনার পর থেকেই পুলিশ এটিকে আত্মহনন বলে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। রহস্যজনক কারণে পুলিশ ঘাতকদের সহযোগিতা করছে। সঠিক তদন্তপূর্বক শিল্পীর খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক আমরা পুলিশের কাছে সে দাবি করছি।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মশিউর রহমান জানান, ঘটনার সংবাদ পাওয়ার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে সুজন ও তার বোন মাসুমাকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের প্রাথমিকভাবে অপমৃত্যুর মামলায় সন্দেজনক দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। হত্যা মামলায় গ্রেফতারের আগেই তারা জামিনে ছাড়া পেয়ে যায়। তিনি আরো জানান, পোস্টমর্টেম রিপোর্টে শিল্পী আত্মহত্যা করেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে তার আত্মহননের পিছনে কারো প্ররোচনা রয়েছে কিনা সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।  প্রমাণ পাওয়া গেলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।