শাবি’র সাতছড়িতে ইংরেজি বিভাগের বনভোজন

সবার মনে জিজ্ঞাসা ছিল এবার কোথায় যাওয়া হচ্ছে। প্রথমে প্রকৃতি কন্যা হিসেবে খ্যাত সিলেটের জাফলং নির্ধারণ করা হলেও শেষে নির্ধারণ করা হয় হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলায় অবস্থিত সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান। ৭ মে ক্যাম্পাস থেকে গাড়ি সকাল আটটায় ছাড়ার কথা থাকলেও বনভোজনের প্রধান আয়োজন খাবার প্রস্তুতে খানিকটা বিলম্ব হতে থাকে। খাদ্য কমিটির সদস্যদের মুঠোফোনে শুধু ফোন বাজতে থাকে। সবার একই প্রশ্ন আর কতক্ষণ? অবশেষে শাহপরাণ হল থেকে একটি গাড়িতে করে খাবার নিয়ে আসা হয়। গাড়ি যখন গন্তেব্যের উদ্দেশ্যে ছাড়ে তখন ঘড়ির কাটা দশটা ছাড়িয়েছে। গাড়ির গতি যথই বাড়তে থাকে ততই গাড়ির ভেতরে চলে আনন্দ উল্লাস। গানে গানে সবাই ছিল আনন্দে মাতোয়ারা। শিক্ষার্থীদের সাথে ছিলেন বিভাগের পাঁচজন শিক্ষক। সহকারী অধ্যাপক হোসেন আল মামুন, মো. রাজিক মিয়া, সায়েফ আহমদ, মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ও প্রভাষক পান্না মজুমদার। বিভাগের সিনিয়র ব্যাচ মাস্টার্স ২য় সেমিস্টারের শিক্ষার্থীদের বাধ ভাঙ্গা উচ্ছ্বাসের এতোটুকু কমতি ছিল না। তাদের গাড়িতেই সবচেয়ে বেশি আনন্দ হয়েছে বলে জানান আব্দুস শহীদ মাহবুব। ছিল রাকিবুল, মাহবুবুল আরেফিন কামরান, বদরুজ্জামান বাপ্পি, ওয়ালিউল্লাহ, মৌসুমী দাস, দীপিকা, নিপা, জোছনা বেগম, রিমা রানি এবং সবার প্রিয় বাবুল ভাই মতো খ্যাতিমান শিল্পীদের অংশগ্রহণ। গাড়িতে আনন্দ দেখে অনুমান করা গেছে গন্তব্যে পৌঁছে কী রকম আনন্দ হবে। কয়েক ঘণ্টা পর গাড়ি যখন সাতছড়ি পৌঁছে তখন অনেকের শরীর ছিল ক্লান্ত। বৈশাখের তপ্ত রোদে গাড়ির ভেতরও ছিল অনেক গরম। তাই বিলম্ব না করেই ঢুকে পড়ে সবাই উদ্যানের ভেতর। সাতছড়ির সবুজ গাছের ছায়ায় কিছুটা স্বস্তিবোধ করে। মেহগনি, জারুল, পামসহ হরেক রকমের নানা জানা অজানা গাছের সমারোহ মুহূর্তের ভেতর সবার ভাল লেগে যায়। প্রকৃতির অপরূপ হাতছানি চারদিকে। নয়নাভিরাম দৃশ্যগুলোর সাথে নিজের ছবি রাখতে কার না মন চায়? টিলা আর পাহাড় বেষ্টিত সাতছড়ি উদ্যানে পিকনিকে এসে আনন্দ প্রকাশ করে সবাই। সারি সারি দীর্ঘ পামগাছগুলো শুধু ছায়া দিচ্ছে না, দিচ্ছে প্রকৃতির স্নিগ্ধ পরশ। গভীর অরণ্যে হারাতে কারোর বাধা ছিল না। তাই সুযোগ হাতছাড়া করতে কেউই রাজি হয়নি। নিজের মনের মতো করে অরণ্যের ভেতর নিজেকে প্রকৃতির সাথে মিশিয়ে রাখার চেষ্টা। ক্যামেরায় স্মৃতিগুলো ফ্রেমে বন্দি করে রাখার চেষ্টাও ছিল চোখের পড়ার মতো। এ উদ্যানের ভেতর ছোট বড় গাছ গাছালির সমারোহ নিমেষেই আগত পর্যটককে মুগ্ধ করে। আর এজন্য দেশের নানা প্রান্ত থেকেই প্রতিদিন আসছেন হাজারো কৌতূহলী পর্যটক। পিকনিক স্পট হিসেবেও রয়েছে সুপরিচিতি। বিকেল চারটায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরুর কথা থাকলেও শুরু হয় বিকেল পাঁচটায়। চতুর্থ বর্ষের লুবাবা রাহনুম ও মামুনের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠান শুরু হয় রবীন্দ্র সঙ্গীত দিয়ে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের চলে গানা, অভিনয়, ফানবক্সের মতো খেলা। শফিক স্যারের পাতার বাঁশি আর আব্দুস শহীদ মাহবুব ভাইয়ের বাঁশির সুরের মূর্ছনা আনন্দের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফাঁকে নেয়া শিক্ষকদের টার্ম টেস্ট। টার্ম টেস্টের রেজাল্ট নেয়ার জন্য সব শিক্ষকদেরই মঞ্চে আসতে হয়। তাদের গান, কৌতুক আর টার্ম টেস্টের মজার উত্তরও স্মরণীয় হয়ে থাকবে। সব আয়োজন শেষ করে যখন গাড়িগুলো সিলেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিল তখন সন্ধ্যা নেমে এসেছে। কিন্তু তখনও কারোরই এতোটুকু আনন্দের কমতি ছিল না। আসার মতেই হুই হুল্লোর আর গান চলতে থাকে। বনভোজনের পূর্ণ স্বাদই উপভোগ করেছে সবাই। এমনটি জানা গেলে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে। বিভাগের সর্ব কনিষ্ট ব্যাচ ১ম বর্ষ ১ম সেমিস্টারের শিক্ষার্থীরাই বেশি আনন্দ পেয়েছে। কারণ তারাই প্রথমবারের মতো বিভাগের সবাইকে একসাথে পেলো। এমনটি বলছিলেন নবীন ছাত্রী সাবিহা জান্নাত টুলি। তার মতে, পিকনিকের সব আয়োজনই অনেক মজার ছিল এবং স্মরণীয়। আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, মৌসুমী, টুম্পা, দেবশ্রী রায়সহ অনেকেই জানিয়েছে তাদের ভালো লাগার কথা। বিভাগের একটি বার্ষিক বনভোজনই পারে সব ব্যাচের সাথে সেতুবন্ধন তৈরি করতে। তাই এমন আয়োজন যেন নিয়মিতই হয় তেমনটি প্রত্যাশা বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।