র‌্যাব নিজেরাই ক্রাইম করে

হোসেন আকন মুক্তি পেয়েছে। সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ঝালকাঠী চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট,  ঝালকাঠী কারাগার ও বরিশাল কারাগার হয়ে লিমনের জামিনের আদেশ নামার কপি বিকেলে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেলে পৌছে।

বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে শেবাচিম হাসপাতালের প্রিজন সেল থেকে মুক্তি  পায় লিমন। মুক্তকালে সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতরন হয়। মা হেনোয়ারা বেগম, বাবা তোফাজ্জেল হোসেন আকন লিমনকে বুকে জড়িয়ে কাঁদতে থাকেন। এদৃশ্য দেখে উপস্থিত সাংবাদিক ও সেখানে  বিভিন্ন স্থান থেকে আগত নারী পুরুষ অশ্র“সিক্ত হয়ে পড়ে। লিমনের জামিন নামার কপি পৌছানোর সময় উপস্থিত ছিলেন বরিশাল কারাগারের জেলার আবু সায়েম ও জেল সুপার সগির মিয়া।

অশ্রুসিক্ত লিমন সাংবাদিকদের বলেছে, হায়নার মত র‌্যাব সদস্যরা আমাকে থাবা দিয়ে বেধড়ক বাম পায়ে গুলি করে। জীবনে আমি আর ঠিকমত দাঁড়াতে পারবো না। বসে বসেই আমার জীবন একদিন শেষ হবে। একদিন জানতাম র‌্যাব সদস্যরা ক্রাইম দমন করে। এখন দেখলাম নিজেরাই ক্রাইম করে। যার জলন্ত প্রমান আমি নিজেই। তিনি তার বর্বোরোচিত হামলার ঘটনার ন্যায় বিচার চেয়েছেন। কিন্তু বিচার তো পেলামই না। উল্টো আমার বিরুদ্বে অস্ত্র ও সরকারী কাজে বাধা প্রদানের অভিযোগে র‌্যাব বাদী হয়ে মামলা দায়ের করলো। কে কেমন বর্বরতা। লিমন মুক্তি পাওয়ার পর আইন শালিস কেন্দ্র, মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড.মিজানুর রহমান ও সাংবাদিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেছে আমি তাদের ঋন কখনোই শোধ করতে পারব না। লিমন বলছে আর যেন কোন মা আমার মায়ের মত আহাজারী না করে। আর যেন কাউকে এরকম জঘন্য বর্বরতার শিকার না করতে পারে র‌্যাব। সে র‌্যাবের দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা থেকে মুক্তি পেয়ে পড়ালেখা করে বড় হতে চায়। লিমনের বাবা তোফাজ্জেল হোসেন বলেন আজ শেবাচিম হাসপাতালে চিৎিসার জন্য লিমনকে রাখা হবে। মঙ্গলবার তাকে রাজধানী ঢাকায়  উন্নত চিকিৎসার জন্য নেয়া হতে পারে।

ছাড়পত্রের কপি শেবাচিম হাসপাতালের প্রিজন সেলে পৌছার পর লিমনের মা হেনোয়ারা বেগম সাংবাদিকদের জানান ঘটনার দিন বিকেলে লিমনকে ডেকে নিয়ে বাম পায়ে র‌্যাব গুলি করে। প্রায় আড়াই ঘন্টা র‌্যাব সেখানে অবস্থান করে। সে ও তার স্বামী তোফাজ্জেল হোসেন ছেলের আহাজারী সহ্য করতে না পেরে তখন জ্ঞান হারা হয়ে যান। এক পর্যায় তার ছোট ভাই মোফাজ্জেল হোসেন লিমনকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে র‌্যাব সদস্যরা তার দু’পা পিটিয়ে ভেঙ্গে ফেলে। তিনি এখন পিরোজপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হেনোয়ারা দাবী করেন তার ছেলে নির্দোষ।  তার ছেলের ঘটনার সঙ্গে জড়িত র‌্যাব সদস্যের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির প্রধানমমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর কাছে। পাশাপাশি তার ছেলেকে পুনর্বাসনের দাবী জানান তিনি। তিনি আরও দাবী করেন, তার কিংবা তার ছেলের কোন প্রতিপক্ষ নেই।

প্রসঙ্গত গত ২৩ মার্চ ঝালকাঠির রাজাপুরের সাতুরিয়ায় র‌্যাবের অভিযানের সময় গুলিতে আহত হয় কলেজ ছাত্র লিমন। লিমনের দাবি, র‌্যাব সদস্যরা তাকে ধরে নিয়ে গুলি করেছিল। পরে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তার একটি পা কেটে ফেলতে হয়। ঘটনার দিনই র‌্যাবের ডিএডি লুৎফর রহমান বাদী হয়ে লিমনের বিরুদ্ধে রাজাপুর থানায় অস্ত্র আইনে একটি এবং সরকারি কাজে বাধা দান, হত্যা চেষ্টা এবং র‌্যাব সদস্যদের আহত করার অভিযোগে পৃথক দুটি মামলা করে। অস্ত্র মামলায় ৩ মে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয় ঝালকাঠির একটি আদালত। ঝালকাঠি কারাগার থেকে ওই দিন রাত ১১টার দিকে তাকে করিশাল কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে একই দিন দিবাগত রাত ৩টায় তাকে শেবাচিম হাসপাতালের প্রিজন সেলে ভর্তি করে। গত বৃহস্পতিবার কথিত বন্দুকযুদ্ধে আহত লিমনকে র‌্যাবের অস্ত্র মামলায় ৬ মাসের অন্তবর্তীকালীন জামিন দিয়েছে হাইকোর্ট। এর আগে সরকারী কাজে বাধা প্রদানের মামলায়ও সে জামিন পায়।