পুলিশের সহযোগীতায় বেপারোয়া ‘মান্নান বাহিনী’

বাড়িঘর ভাংচুর, লুটপাট, ছিনতাই, যৌন হয়রানী ও অস্ত্রের মহড়ায় লিপ্ত হয়ে পড়েছে। পুলিশ ও চেয়ারম্যান বাহিনীর ভয়ে পুরুষ, যুবতী ও মধ্য বয়সী নারীরা বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। এ কারনে ৭০একর জমির পাকা ধান কাটতে কৃষকেরা ক্ষেতে যেতে পারছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও চরদৌলত খাঁ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরদার মোঃ আবদুল মান্নান ও সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী কাউছার কবিরাজের সাথে আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রার্থীতা নিয়ে দ্বন্ধে গত সোমবার নতুন চরদৌলত খাঁ গ্রামে দফায় দফায় সংষর্ষ হয়। সংঘর্ষের ঘটনায় মান্নান বাহিনীর দবির সরদার ও পুলিশ বাদী হয়ে কাউছার কবিরাজের লোকজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই ২মামলায় পুলিশ ও মান্নান বাহিনীর প্রধান সরদার আবদুল মান্নানের নেতৃত্বে ভারাটে সন্ত্রাসীরা ঘরবাড়ি তল্লাশীর নামে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট করছে। পুলিশের হাতে গ্রেফতার ও মান্নান বাহিনীর নির্যাতনের ভয়ে পুরুষ, যুবতী ও মধ্য বয়সী নারীরা বাড়িঘর ছেলে অন্যত্র পালিয়ে বেড়াচ্ছে। মান্নান বাহিনী ৪শতাধিক সন্ত্রাসী ভাড়া করে জসিম ঢালী, কবুতর খান, এরকান্দার খান সোহরাব খান ঝিলু মিয়া, খোকন খান, রেজাউল খান ও মাহাবুব কবিরাজসহ ৮/১০টি বাড়িতে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট করেছে। রবিবার গভীর রাতে ওই গ্রামের দুলাল খাঁর ঘর পুলিশের উপস্থিতিতে ভাংচুর করেছে মান্নান বাহিনী। উপরোস্থ কর্তৃপক্ষকে দেখাতে পুলিশ মজিবর ফকির নামের একজন নিরহ বৃদ্ধকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠিয়েছে। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় কবির কবিরাজের স্ত্রী নুসেফা বেগম(৩০) ধান ক্ষেত থেকে বাড়ি যাওয়ার পথে মান্নান বাহিনীর লোকজন গলায় থাক স্বণের চেইন নিয়ে যায়। ওই দিন গভীর রাতে কালু সিকদারের বাড়িতে পুলিশের পরিচয়ে মান্নান বাহিনী ঘরে ঢুকে সবাইকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ১লক্ষ ২০হাজার টাকা ও ২ভরি স্বর্ণালংকারসহ প্রয়োজনীয় মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। পুলিশ ও মান্নান বাহিনীকে সার্বোক্ষনিক তথ্য দিয়ে সহায়তা করছে উক্ত এলাকার গ্রাম পুলিশ জামাল সরদার ও মীর হোসেন। ৩টি ব্লকের ধান পেকে গেলেও কৃষকেরা ক্ষেতে ধান কাটতে যেতে পারছেন না। ধান ক্ষেতের আশপাশে কাউকে দেখলেও পুলিশ ও মান্নান বাহিনী ধাওয়া দিচ্ছে। পুলিশ ও মান্নান বাহিনী একজোট হয়ে কাউছার কবিরাজকে প্রার্থী হতে না দেয়া ও তার সমর্থকদের নির্বাচন পর্যন্ত গ্রাম ছাড়া করে রাখার অপচেষ্টা করছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।

ওয়াজেদ কবিরাজের স্ত্রী আমেনা বিবি(৩৫) জানান, পুলিশের লোক বলে পরিচয় দিয়ে ঘরে ঢুকেই কাপর-চোপর ধরে টেনে হিচরে বাহিরে বের করে। বিভিন্ন গালিগালাজ দিয়ে আমার শরীরে হাতাহাতি করেছে।

উক্ত এলাকার সাহেবরামপুর কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী কালু সিকদারের মেয়ে সুখি(১৭) জানান, সন্ত্রাসীদের বখাটেপনায় নিজেকে রক্ষা করার জন্য আত্মীয়ের বাড়িতে থাকতে হচ্ছে। ওদের কারনে কোন মেয়েই বাড়িতে থাকতে পারছে না। আমার মত এ গ্রামের প্রত্যেকটি বাড়ির মেয়েরাই বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র গোপনে আশ্রয় নিয়েছে।

সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী কাউছার কবিরাজের স্ত্রী হাফসা খাতুন বলেন, ৪০/৪৫লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ মান্নান বাহিনীর লোকজন চেয়েছে। থানায় টাকা দিছে, প্রত্যেকদিন পুলিশ আনতে খরচ হয়েছে তার জন্য এই টাকা দিতে হবে। টাকা না দেয়া পর্যন্ত আমার স্বামীকে বাড়িতে আসতে দিবে না।
সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী চানমিয়া সিকদার জানান, বর্তমান চেয়ারম্যান আওয়ামীগের নেতা হওয়ায় পুলিশ প্রশাসনই তার। তাছাড়া তিনি বাহির থেকে লোক ভাড়া করে নিয়ে বাহিনী গঠন করেছেন। পুলিশ ও তার বাহিনীকে তিনিই নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের ভয়ে দিনেও একজন পুরুষ বা যুবতী নারী গ্রামে নাই।