বরিশাল আওয়ামী লীগের মেয়াদ হীন কমিটিই এখন শেষ ভরসা

দলের সাংগঠনিক কর্মকান্ড জোরদারের ।  বিরোধী দলের আন্দোলন মোকাবেলায় দলের শক্ত অবস্থান নেইবললেই চলে । কারন হিসেবে তৃনমূল নেতারা বলছেন গত দেড় যুগের পুরানো কমিটি এখন নিভূনিভূ । ঐ কমিটির অনেকেই মারা গেছে আবার কেউ এখন আর দলের খোজ রাখেন না । যারা দলীয় কর্মসূচীতে সক্রিয় তাদের অধিকাংশেরই দলে কোন পদ পদবী নেই । ফলে বরিশাল জেলা-মহানগর ও উপজেলা কমিটি গুলো চলছে জোড়া তালিদিয়ে ।  

দলের তৃনমূল নেতাদের একাধিক সূত্র জানায়, গত এক দশকে যে সব উদীয়মান তরুনরা দলে ভিড়েছেন তারাও পাননি কাঙ্খিত কোন পদ-পদবি। পদ দখল করে রাখা অধিকাংশই এখন সংগঠনে নিস্ক্রিয়। কেউ কেউ দল ছেড়ে ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে সংসার মুখী হয়েছেন। আবার কেউ কেউ ইহলোক ত্যাগ করে পরলোকের বাসিন্দ হয়েছে। জেলা মহানগরের মতই উপজেলা আওয়ামী লীগের অবস্থা। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অবস্থা আরো করুন। যুগ যুগ ধরে ইউনিয়ন ও উপজেলা কমিটিতে থাকা নিস্ক্রিয়দের বাদ দিয়ে দলের উদীয়মান তরুন নতুন নেতৃত্বকে পদ দেয়ার জন্য বার বার দাবী তোলা হলেও তা উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। দলের নীতি নির্ধারকরা মনে করছেন নতুন ও পুরনোদের সম্বণয় কমিটি গঠনের বিকল্প নেই। দল ক্ষমতায় আসার পর পরই চলে যোগদানের হিরিক। বিএনপি ও জাতীয় পার্টি থেকে অসংখ্য নেতাকর্মী যোগ দিয়েছে দলে। সাবেক ও বর্তমান বেশ কয়েকজন কাউন্সিররসহ মাস্টাররোল এসব নেতা-কর্মীদের সংখ্যা কত তা জানেনা খোদ শাসক দলের নেতারাও। তবে দল ক্ষমতায় আসার পরপরই নতুন-পুরনো দ্বন্দ্ব শুরু হয়। দিন যতই যাচ্ছে দ্বন্দ্ব ততই চাঙ্গা হচ্ছে । কিন্তু সম্মেলনের কোন সু-বাতাস নেই দলের মধ্যে। সম্মেলন না হলেও নতুনদের হাতে ক্ষমতা ছাড়ার আভাস দিয়েছেন বর্তমান জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সাবেক চীপ হুইপ আবুল হাসানাত আব্দুলহ। কিন্তু দলের অধিকাংশ নেতারা জানিয়েছেন হাসানাতকেই সংগঠনের সভাপতি করে দলকে এখন ঢেলে সাজানো উচৎ। দলের ত্যাগী ও সংগ্রামী নেতাদের পদ-পদবি দিয়ে সংগঠনকে চাঙ্গা করার বিকল্প নেই।

দলীয় সূত্র জানায়, সর্বশেষ ১৯৯৭ সালে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের মাধ্যমে নির্বাচিত হওয়া সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ ২০০৪ সালে মারা যান। সেই থেকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডাঃ মোখলেছুর রহমানকে দিয়ে চলছে দলের কার্যক্রম। এবার সভাপতির আসনে হাসানাতকে দেখতে চান অধিকাংশ নেতা-কর্মীরা। কিন্তু সাধারণ সম্পাদকের পদে রয়েছে একাধিক যোগ্য প্রার্থী। ঐ পদের জন্য সংসদ সদস্য তালুকদার মোঃ ইউনুস, মশিউর রহমান মিন্টু, জনতা ব্যাংকের পরিচালক বলরাম পোদ্দার ও মনিরুল আহসান মনিরের নাম শোনা যাচ্ছে। তবে সম্ভাব্য সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীরা মনে করছেন এ ক্ষেত্রে আবুল হাসানাত আব্দুল¬াহর সিদ্ধান্তই হবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। তিনি যাদের যোগ্য মনে করবেন তারাই নতুন কমিটিতে ঠাঁই পাবে। জেলা আওয়ামী লীগের চেয়ে বেহাল দশায় আছে উপজেলা  আওয়ামী লীগ। জেলার অধিনে থাকা ১০ টি  উপজেলার সর্বশেষ সম্মেলন কবে অনুষ্ঠিত হয়েছে তা অধিকাংশ নেতারাই জানে না। অধিকাংশ উপজেলা চলছে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে । গৌরনদীসহ কয়েকটি উপজেলায় সংগঠনের কোন কমিটি নেই। বরিশাল সদর উপজেলায় সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৮ সালে। তখন বিবাদমান দু’টি গ্র“প সাহেবেরহাট ও শায়েস্তাবাদে দু’টি সম্মেলন করে। গঠন করা হয় সদর উপজেলার দু’টি কমিটি। ভারত থেকে দেশে ফিরে আবুল হাসানাত আব্দুল¬াহ তখন সাহেবের হাটে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের মধ্যদিয়ে নির্বাচিত সিরাজূল ইসলাম মানিকের কমিটিকে বৈধ ঘোষণা করেন। ঐ কমিটির সাধারণ সম্পাদক গাজী শাহ জামাল উদ্দিনকে বহিস্কার করা হয়।

জামাল গাজী যোগদেন জাতীয় পার্টিতে। পরে সংগঠনের সদর উপজেলা কমিটির জন্য একটি কো-কমিটি গঠন করা হয় ঐ কমিটিতে হিমাংশু দাস নাথুকে আহ্বায়ক করা হয়। এভাবেই চলছে ২০০১ সাল পর্যন্ত। নাতুন কমিটির কোন কার্যক্রম না থাকায় বিএম কলেজের সাবেক ভিনি আনোয়ার হোসাইনকে আহ্বায়ক করে নতুন উপজেলা কমিটি গঠন করা হয়। ভিপি আনোয়ার হোসাইন জানিয়েছেন তিনি ২০০৬ সাল পর্যন্ত ৬২৮ টি ওয়ার্ড এবং ইউনিয়ন কমিটি গঠন করেন। ঐ বছর ২৪ জুলাই চরমোনাইতে সদর উপজেলার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। কমিটি গঠনের পূর্বেই সেখানে দু’গ্র“পের সংসর্ষের কারণে তা পন্ড হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত পুরনো আহ্বায়ক কমিটি বহাল রাখা হয়।  বাকেরগঞ্জের সভাপতি ইসমাইল হাওলাদার ২৮ বছর যাবত সংগঠরনের সভাপতি পদে আছেন।

গৌরদীতে ২০০৪ সালের পর উপজেলা আহ্বায়ক কালিয়া দমন গুহকে বহিস্কার করা হয়। সেই থেকে নেই কোন কমিটি। আগৈলঝাড়ায় ২০০১ সালে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এসব কমিটির ৯০ দিনের মধ্যে সম্মেলন করার কথা থাকলেও ০৯-১০ বছরের কোন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি। ইউনিয়ন কমিটির অবস্থা আরো করুন। তারা ক্ষমতার সময় সুবিধা ভোগ করলেও সাংগঠনিক কার্যক্রমে তেমন একটা সক্রিয় নেই। বরং নবাগতরা এখন মিছিল-মিটিংয়ের অগ্রভাগে থাকছে। আর পুরনো ইউনিয়ন নেতাদের অধিকাংশই চাওয়া পাওয়ার হিসাব মিলানোর পাশাপামি টেন্ডারবাজীতে ব্যস্ত।

এ দিকে মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন নিয়ে তৈরী হয়েছে নতুন জটিলতা। কারণ মহানগরীর ভিতর আরো নতুন তিনটি থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এসব এলাকায় নতুন করে তিনটি থানা কমিটি গঠন করতে হবে। মোট চার থানার সভাপতি সম্পাদকের পাশাপাশি সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি বহাল থাকবে। কিন্তু মহানগর আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে কি ত্রিশ ওয়ার্ডের ৬০ জন সভাপতি সম্পাদক ডেলিগেট থাকবেন নাকি চারটি থানার ৮ জন সভাপতি সম্পাদক ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন তা এখনো নেতা-কর্মীদের কাছে স্মষ্ট নয়। সিনিয়র নেতারা জানিয়েছেন সম্মেলনের সময় হলে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সম্মেলনের সময় কবে হবে তা জানে না এখানকার কেউ।