অপ্রতিরোধ্য ভুমি অফিসের হেড ক্লার্ক আমিনুল

কমিশনার (ভূমি)র পদ শূণ্য রয়েছে। ফলে উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের জনগন তাদের জায়গা সম্পত্তি সংক্রান্ত জটিলতায় বছরের পর বছর ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ এভাবে বছরের পর বছর কর্মকর্তাহীন থাকায় সংশ্লিষ্ট অফিসের হেড ক্লার্ক আমিনুল ইসলাম সহ কতিপয় দুর্নীতিপরায়ণ কর্মচারীরা নিয়মনীতি ভেঙ্গে অবৈধ অর্থ আদায়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। হেড ক্লার্ক আমিনুল ইসলাম এতই বেপরোয়া যে তার কাছে সহকারী কমিশনার (ভূমি)র দ্বায়ীত্তে থাকা স্বয়ং ইউএনও অসহায় হয়ে পরেছেন! আমিনুলের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার মাধ্যমে বৈধ অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ভূমির মালিকরা। তিনি অঘটন ঘটানোর পটিয়সি হিসেবে ইতোমধ্যেই উপজেলা ব্যাপী পরিচিতি পেয়েছেন। জমি সংক্রান্ত মামলা মোকদ্দমায় জড়িয়ে সর্বশান্ত হচ্ছে এ উপজেলার সাধারণ জনগন। বর্তমানে ভুমি জরিপ চলমান থাকায় ভিপি সংক্রান্ত সমস্যায় জনগন দিশেহারা হয়ে পরেছে। চলমান ভূমি জরিপে মনগড়া কয়েকটি ভিপি তালিকার মাধ্যমে সৃষ্ট জটিলতার নিরসনের জন্য ২০০৭ সালের ভিপি তালিকার পরিমার্জিত সর্বশেষ ২০১০ সালের সংশোধিত তালিকা সেটেলমেন্ট অফিসে প্রেরণ ও সে অনুযায়ী কাজ করতে নির্বাহী কর্মকর্তা দীপংকর বিশ্বাস একাধিকবারহেডক্লার্ক আমিনুলকে নির্দেশ দিলেও নির্দেশ তিনি তা পালন করেনি। সর্বশেষ সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে ১৯৯৯ সালের ১১ এপ্রিল যোগদান করেন মীর খায়রুল আলম। তিনি ২০০১ সালের ৯ জুলাই পর্যন্ত দ্বায়ীত্ব পালনের পর পদোন্নতি পেয়ে অন্যত্র চলে যাবার পর থেকে এ পদে আর কোন ভূমি কর্মকর্তা আগৈলঝাড়ায় যোগদান করেননি। ২০০১ সালের ৯ জুলাই’র পর থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারাই সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ইউএনওরা উপজেলা প্রশাসনের প্রধান ব্যক্তি হওয়ায় বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজেই তাদের বেশিরভাগ সময় চলে যায়। ফলে ভূমি অফিসের কাজে তেমন সময় দিতে পারছেন না তারা। আর এ সুযোগে ভূমি অফিসের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সহজ সরল ও অশিক্ষিত জনগনকে জিম্মি করে ইউএনও’র নাম করে হাতিয়ে নিচ্ছে অবৈধ অর্থ। ২০০২সাল থেকে চলা ভূমি জরিপ কাজের জন্য একাধিক ভিপি তালিকার অজুহাতে সার্সিং এর নামে হয়রানির মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে হেড ক্লার্ক আমিনুল অবৈধ অর্থ। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছেনা।  তার চাহিদানুযায়ী টাকা ছাড়া কোন কাজই হয়না অফিসে। একারনে ভূমি সংক্রান্ত মামলার সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এদিকে প্রত্যার্পনযোগ্য সংশোধিত ভিপি তালিকা অফিসে থাকলেও তিনি তা সেটেলমেন্ট অফিসে সরবরাহ না করায় ভিপি সংক্রান্ত জটিলতা দিনদিন বেড়েই চলেছে। ফলে মামলার জট বাড়লেও সেটেলমেন্ট অফিস এর কোন সুরাহাই দিতে পারছেনা।

অফিস সূত্রমতে, ২০০৯ সালের ২৩ জুন প্রত্যার্পণযোগ্য ভিপি তালিকা ভূমি মন্ত্রনালয়ের কেস রেজিষ্ট্রার ও একই তারিখে উঃ ভূঃ অঃ /আগৈল/ বরি/ ৪৩৬ স্মারকে বরিশাল জেলা প্রশাসক বরাবরে পাঠালেও ওই তালিকা আমিনুল সেটেলমেন্ট অফিসে না দিয়ে নিজের অফিসে ফাইল বন্দি করে রেখেছেন। সেন্সস তালিকায় উপজেলায় মোট জমির পরিমান ১৫৯০.৫৩ একর। প্রত্যার্পণ তালিকায় জমির পরিমান ৫৬১.৪৫ একর। এর মধ্যে খাস জমি ২৯.৮৭ একর। সূত্রমতে, রাষ্ট্রপতির আদেশ বলে ১৯৮৪ সালের পর নতুনকরে আর কোন জমি ভিপি হবেনা জারি হলেও রাষ্ট্রপতির এআদেশ আগৈলঝাড়া সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে উপেক্ষিত হয়ে আসছে। এছাড়া একই বছর উচ্চ আদালত (হাই কোর্ট) উক্ত আদেশের উপর একটি রুলিং দেয়।

আমিনুল এর ভাষ্যমতে, তিনি ২০০৬ সালের ১২ মে আগৈলঝাড়ায় যোগদান করেন, তবে অফিস ফাইল থেকে জানাগেছে- তিনি ২০০৩ সালের ২৩ এপ্রিল আগৈলঝাড়ায় যোগদান করেন। তার বাড়ি পাশ্ববর্তী উজিরপুর উপজেলার মশাং গ্রামে। বরিশাল জেলা প্রশাসক ৮৬(৭)স্মারকে ২০০৭ সালের ২০ ফেব্র“য়ারি তাকে বাবুগঞ্জে বদলি করেন। তিনি ওই নির্দেশও অমান্য করে বাবুগঞ্জে না গিয়ে অদৃশ্য শক্তিতে আগৈলঝাড়ায়ই থেকেযান। তবে আগৈলঝাড়ায় নতুন করে যোগদানের কোন কাগজপত্র অফিসে পাওয়া যায়নি। ২০০৯ সালে বরিশাল অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) মো.মফিজুল করিম আগৈলঝাড়া ভূমি অফিস পরিদর্শন করেন এসময় তিনি পরিদর্শন বহিতে “আমিনুলের কাজের মান সন্তোষজনক নয়, তাকে অন্যত্র বদলী বা নিু পদে নামানোর জন্য জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন”। গত ৮ বছরে আমিনুল তার ইচ্ছে অনুযায়ী জনগনকে হয়রানি করে অফিস পরিচালনা করে প্রচুর অবৈধ বিত্ত বৈভবের মালিক হয়েছেন। তিনি অফিসসে আর অফিস মনে না করে বাড়ি মনে করেই অবৈধ  অর্থের লালসায় শুক্রবারও কাজ করে আসছেন। বিভাগীয় কমিশননারের নির্দেশ, জেলা প্রশাসকের বদলী আদেশ কোন কিছুই আকে নড়াতে পারেনি। তবে তাকে রোধ করার কোন শক্তিই কি কারো নেই ? এমন প্রশ্নই প্রশাসনের প্রতি এখন জনগনের।