কলেজে ভর্তি হওয়া অনিশ্চিত গৌরনদীর তিন অদম্য মেধাবীর

বোরাদী গরঙ্গল গ্রামের দিনমজুর মোজাম্মেল হোসেন, তাঁরাকুপি গ্রামের দুঃস্থ্য খাদিজা খানম ও উত্তর বাউরগাতি গ্রামের দুঃস্থ্য শিলা আক্তার জিপিএ-৫ পেয়েছে। অভাব-অনাটনসহ কোন পিছুটানই তাদের সাফল্যের পথরুদ্ধ করতে পারেনি। আনন্দটুকুও তাদের মাঝে বেশিক্ষন আলো ছড়াতে পারেনি। তার পরেও তাদের অভিভাবকদের মুখে হাসি নেই। বরং ভালো ফলাফলই তাদের মাঝে নিয়ে এসেছে যত দুঃশ্চিন্তা। অর্থাভাবে অদম্য এ মেধাবীদের কলেজে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

মোজাম্মেল হোসেনঃ গৌরনদী উপজেলার নলচিড়া ইউনিয়নের বোরাদী গরঙ্গল গ্রামের মানসিক ভারসাম্যহীন ছিদ্দিক হাওলাদারের পুত্র দিনমজুর মোজাম্মেল হোসেন। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় উপজেলার পিঙ্গলাকাঠি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ব্যাবসায় শিক্ষা বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে। মোজাম্মেল হোসেন জানান, তার পিতা গত ৩ বছর ধরে মানসিক ভারসমম্যহীন অবস্থায় রয়েছে। ১ ভাই ও ৫ বোনের মধ্যে সে হচ্ছে চতুর্থ। দিনমজুর পিতা মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ার পর আট সদস্যর সংসারের হাল ধরতে সে দিনমজুরের কাজ শুরু করে। অর্ধাহারে অনাহারে তাদের সংসারের সদস্যরা দিনাতিপাত করে আসছে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে পড়াশুনা চালিয়ে যেত মোজাম্মেল। স্কুলের শিক্ষকদের কাছে কোনদিন সে  প্রাইভেট পড়েনি। তার স্বপ্ন উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ভাল চাকুরি করে অভাবের সংসারে সকলের মুখে হাসি ফোটানো। বিত্তবানদের আর্থিক সহযোগীতা পেলে তার ইচ্ছা পড়াশুনা করে ভবিষ্যতে ব্যাংকার হওয়ার। অর্থাভাবে তার কলেজে ভর্তি হওয়ার ভবিষৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। প্রতিবেশী আলহাজ্ব মোঃ জামাল উদ্দিন ফকিরের সহযোগীতা ও উৎসাহে লেখাপড়ায় হাল ছাড়েনি মোজাম্মেল। একদিকে সংসারের খরচ বহন করা অন্যদিকে লেখাপড়া কোন কিছুতেই পিছু ফেরাতে পারেনি তাকে।

খাদিজা খানমঃ গৌরনদী উপজেলার বার্থী ইউনিয়নের তাঁরাকুপি গ্রামের ভ্যানচালক মোঃ হাচেন আলী বেপারীর কন্যা খাদিজা খানম এবারের এসএসসি পরীক্ষায় বার্থী তাঁরা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে। খদিজা খানম জানায়, ভ্যান চালক পিতার আয়ে ৯ সদস্য বিশিষ্ট পরিবারের সংসার অর্ধহারে-অনাহারে জীবন যাপন করে আসছে। বর্ষা মৌসুমে তার পিতার ভ্যান চালানো বন্ধ থাকে। টাকার অভাবে সে (খাদিজা) পড়াশুনার খরচ, স্কুলে যাতায়াত ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ বহন করতে সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেনীর ৮/১০ জন শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াতো। স্কুল শিক্ষকরা তাকে ইংরেজী, গণিতসহ ৩ টি বিষয়ে ফ্রি প্রাইভেট পড়িয়েছে। প্রতিদিন সে ৮/১০ ঘন্টা পড়াশুনা করত। তার মা নুরজাহান বেগম অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে । ২ ভাই ও ৫ বোনের মধ্যে সে মেঝ। পড়াশুনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার স্বপ্ন তার থাকলেও অর্থাভাবে কলেজে ভর্তি হওয়ার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে।

শিলা আক্তারঃ গৌরনদী উপজেলার বার্থী ইউনিয়নের বাউরগাতি গ্রামের ভ্যানচালক মোঃ রতন গোমস্তার কন্যা শিলা আক্তার। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় উপজেলার বার্থী তাঁরা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ব্যবসায় শিক্ষায় শিলা জিপিএ-৫ পেয়েছে। শিলা আক্তার জানায়, ভ্যানচালক পিতার আয়ে ৭ সদস্য বিশিষ্ট পরিবার অর্ধহারে-অনাহারে জীবন যাপন করে আসছে। টাকার অভাবে সে (শিলা) পড়াশুনার খরচ, স্কুল ড্রেস ও স্কুলে যাতায়াত ভাড়ার জন্য ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেনীর ১০/১২ জন শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াত। দরিদ্র হওয়ার কারনে তার নিকট থেকে স্কুল কর্তৃপক্ষ কম বেতন নিত। প্রতিদিন সে ৬/৭ ঘন্টা পড়াশুনা করত। তার মা কহিনুর বেগম গৃহিনী। তার পিতার কোন আবাদি জমি নেই। ২ ভাই ও ৩ বোনের মধ্যে সে সবার ছোট। তার স্বপ্ন পড়াশুনা করে ভবিষ্যতে ব্যাংকার হওয়ার। অর্থাভাবে তার কলেজে ভর্তি হওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।