প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনে প্রানহানীর আশংকা

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনকে পরিত্যক্ত ও  অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ও ১২টি ভবনকে ঝুকিপূর্ন ঘোষনা করেছে সংস্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীদের প্রানহানীর আশংকায় এসব ভবনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান না করার জন্যও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর পরেও শ্রেনী কক্ষ সংকটের কারনে বিদ্যালয়গুলোর প্রায় ১০হাজার ছাত্র ছাত্রীর পাঠদান চলছে পরিত্যক্ত ভবনে। ইতিমধ্যে উপজেলার দুটি স্কুলের ছাঁদ ধসে দু’শিক্ষক ও ২৫ জন শিক্ষার্থীর আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা আতংকের মধ্যে রয়েছেন। গত ৪ মে গৌরনদী উপজেলা শিক্ষা অফিস জরুরী এক চিঠিতে(স্বারক নং গৌ/শি/অ/-২৪২ তারিখ ৪/৫/২০১১ইং) বিষয়টি শিক্ষা অধিদপ্তরকে অবহিত করেছে।

সরেজমিনে গিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, গৌরনদী উপজেলা প্রকৌশল ও শিক্ষা অফিসের সংস্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলায় ৮৭টি সরকারি, ২৪টি রেজিষ্টারি, ৫টি কমিউনিটি ও ২টি অস্থায়ী রেজিষ্টারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। শিক্ষার্থীদের প্রানহানীর আশংকায় গৌরনদী উপজেলার পশ্চিম শাওড়া, বাশাইল, খাঞ্জাপুর, গেরাকুল,উত্তর পিংলাকাঠী, বেজগাতি মৈস্তারকান্দি, রামসিদ্ধি, বাটাজোর, জয়সুরকাঠী, মেদাকুল, ধানডোবা, পূর্ব হোসনাবাদ, উত্তর হোসনাবাদ, হাপানিয়া, কাঠালতলী, গেরাকুল, কটকস্থলসহ ১৮টি বিদ্যালয়ের ভবনকে পরিত্যক্ত ও অধিক ঝুকিপূর্ন হিসেবে ঘোষনা করেছে গৌরনদী উপজেলা প্রকৌশল ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। ঝুকিপূর্ন তালিকায় রয়েছে, মাগুরা মাদারীপুর, কমলাপুর, বাদুরতলা, উত্তর কান্ডপাশা, বিল্লগ্রাম, নলচিড়া, লক্ষনকাঠী, মহিষা, চন্দ্রহার, বাহাদুরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও টরকী, দক্ষিণ মাগুরা, পূর্ব মাহিলারা, দক্ষিণপশ্চিমপাড়া, দক্ষিণ কুরিরচর রেজিষ্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়। ৩০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ও ঝুকিপূর্ন চিহ্নিত করে গত ৪মে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছে জরুরী চিঠি দিয়ে বিষয়টি অবহিত করেছেন সংস্লিষ্ট স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি ধানডোবা ও গেরাকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাঁদ ধসে দু’শিক্ষকসহ কমপক্ষে ২৫ জন শিক্ষার্থী আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে উপজেলার অধিক ঝুঁকিপূর্ণ স্কুলে অধ্যায়নরত কোমলমতি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পরে। পশ্চিম শাওড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাসুদেব কুমার ও অভিভাবক মোঃ আকবর হোসেন মোল্লা জানান, তাদের স্কুল ভবনটি অধিক  ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিত্যাক্ত ঘোষনা করা হয়েছে তারপরে নিরুপায় হয়ে জীবনের ঝুকি নিয়ে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের পাঠদান করে থাকে। মৈস্তারকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা কল্পনা রানী ও অভিভাবক নিতাই মন্ডল জানান, ক্লাসে বসে আল্লাকে স্মরন করতে হয় যেন, ছেলে মেয়েরা নিরাপদে থাকে। ছাদ খসে পড়ে ইতিমধ্যে অনেক ছাত্র ছাত্রী ও শিক্ষক আহত হয়েছে।  বিল্লাগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদ, বাটাজোর সরকরি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক নান্না খলিফাসহ একাধিক অভিভাবকরা বলেন, যেভাবে একের পর স্কুল ছাদ ধসে ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষক আহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে তাতে আমরাও উদ্বিগ্ন। কারন আমাদের সন্তানদের স্কুলগুলোও অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে তালিকাভূক্ত। জরুরি ভিত্তিতে স্কুলগুলো পূর্ণ নির্মানের জন্য তারা কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান।
 
গেরাকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা খাদিজা বেগম জানান, ১৯৯৫ সালে গেরাকুল স্কুলটির নির্মান কাজ সম্পন্ন করা হয়। নির্মান কাজের গুনগত মান খারাপ হওয়ায় কিছুদিন আগে স্কুলের চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেনীতে পাঠদান অবস্থায় ছাঁদের বীম ধসে পরে দু’শিক্ষকসহ ১৫ জন শিক্ষাথী আহত হয়। এ ঘটনার পর থেকে ওইক্লাশ দুটিতে কিচু দিন পাঠদান বন্ধ রাখার পর বর্তমানে ক্লাশরুমের সংকট থাকায় পুনরায় ক্লাস নিতে হচ্ছে। একইভাবে ধানডোবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাঁদ ধসে ১০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। মেদাকুল  সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রতাপ সিংহ জানান, অধিক ঝুকিপূর্ন ঘোষনা সত্বেও ভবনে ক্লাস নিতে হয় । বৃষ্টি হলে তার স্কুলের ছাঁদ চুঁইয়ে পানি পরে শিক্ষার্থীদের বই পুস্তক ভিজে যায়। উত্তর হোসনাবাদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ফজিলাতুন নেছা জানান, ১৯৮২ সালে ওই স্কুলটি নির্মান করা হলেও অদ্যাবর্ধি স্কুলটি সংস্কার করা হয়নি। নানা সমস্যার কথা উল্লেখ করে তিনি (প্রধান শিক্ষক) একাধিকবার উপজেলা শিক্ষা অফিস ও প্রকৌশল দপ্তরে লিখিত আবেদন করেছেন । কর্মকর্তারা সরেজমিন পরিদর্শন করে স্কুলটি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহিৃত করলেও কাগজে কলমের মধ্যেই তা সীমাবদ্ধ রয়েছে। তিনি শিক্ষার্থীদের নিয়ে আতংকের মধ্যে পাঠদান চালাচ্ছেন বলেও জানান। এ ব্যাপারে উপজেলা  শিক্ষা অফিসার গোলাম রহমান চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৮টি বিদ্যালয়কে পরিত্যক্ত ও অধিক ঝুকিপূর্ন ১২টি ঝুকিপূর্ন ভবন ঘোষনা করা হয়েছে। অধিক ঝুকিপূর্ন বিদ্যালয়ে যে কোন সময় বড় দূর্ঘটনা ঘটতে পারে এবং প্রানহানীর আশংকা রয়েছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য একাধিকবার জরুরী চিঠি দিয়ে শিক্ষা অধিদপ্তরকে অবহিত করা হয়েছে।

গৌরনদী উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ আনোয়ার হোসেন জানান, বিভিন্ন সরকারের সময় ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী ঠিকাদারদের খামখেয়ালীপনা প্রভাবের কারনে তাদের কাছ থেকে সঠিক কাজ আদায় করা সম্ভব হয়না। ফলে নির্মান কাজের গুনগত মান বজায় না থাকায় স্কুল ভবনগুলো কম সময়ে পরিত্যক্ত হয়ে যায়।