নিয়ম ভেঙ্গে বিসিসি মেয়র হিরনের ঘন ঘন বিদেশ সফর

বিধানকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে আসছেন। চলছেন নিজের মনগড়া নিয়মে। অবৈধ কিংবা অনিয়মের মাধ্যমেই তিনি নিজের অধিপত্য বিস্তারের শক্তিমত্তা বাড়িয়ে তুলছেন। অত্যান্ত প্রভাবশালী এই দাপুটে ব্যাক্তির নাম শওকত হোসেন হিরন। যিনি বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র। এর বাইরে তিনি ক্ষমতাসীন দল আ’লীগের মহানগর শাখার আহবায়ক। বিশেষ করে কর্পোরেশনে ভারপ্রাপ্ত কাউকে দ্বায়িত্ব না দিয়ে নিয়ম ভেঙ্গে ঘন ঘন মেয়রের বিদেশ সফর করে আরেক বিতর্কের জন্ম দিচ্ছেন তিনি।

জানা গেছে, ২০০৯ সালের শেষের দিকে মেয়র হিরন বিদেশ সফরে যাওয়ার প্রাক্কলে নিয়মানুযায়ী ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দ্বায়িত্বে বসিয়ে যান ১ নং প্যানেল মেয়র আলতাফ মাহমুদ শিকদারকে। ১৫ দিনের অধিক ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দ্বায়িত্বও পালন করেছিলেন তিনি। মেয়রের অনুপস্থিতিতে আলতাফ মাহমুদ কর্পোরেশনের যথাযথ দ্বায়িত্ব পালনে নগরবাসীর প্রশংসাও কুড়াতে সক্ষম হন। তবে এতদিন মেয়রের বিদশে মিশনে আ’লীগের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বলা হয়, বিএনপি পন্থী প্যানেল মেয়রকে দ্বায়িত্বে বসিয়ে রেখে মেয়র হিরনের বিদেশ সফর করাটা ঠিক হয় নি। এরকম পরিস্থিতির পর থেকে বেশ কয়েক বার মেয়র হিরন বিদেশ গেলেও দ্বায়িত্বে বসিয়ে যাননি কাউকে।সর্বশেষ চলতি বছরের এপ্রিল মাসের শেষের দিকে ব্যাক্তিগত কাজে সিঙ্গাপুর যান মেয়র হিরন। এরপর সেখান থেকে মে মাসের শুরুতে এসে কয়েক দিন থাকেন নগরীতে। গত ১০ জুলাই ভারত সফরে যান মেয়র। মেয়র নেই; স্থবির বিসিসির কার্যক্রম। মেয়রবিহীন নৈত্যনৈমিত্তিক ফাইলে স্বাক্ষর হচ্ছে না। নগরবাসীর নানামুখী সমস্য হচ্ছে বস্তাবন্দী। সিটি কর্পোরেশনের আইনে বলা হয়েছে যে, মেয়র অনুপস্থিত বা অসুস্থ থাকলে অবশ্যই জেষ্ঠ্যতার দিক থেকে ভারপ্রাপ্ত মেয়রকে দ্বায়িত্ব দিয়ে যেতে হবে। সিটি কর্পোরেশনের এই বিধান কে মানেন না মেয়র হিরন। কারন তিনি ক্ষমতাধর! এজন্য তিনি আইন অমান্য করে বার বার দেশত্যাগ করছেন।

মেয়রের ব্যাক্তিগত সহকারী মঞ্জুরুল ইসলাম জানান, মেয়র ভারতের দিল্লী গেছেন। সেখানে মেয়রদের এক কনফারেন্সে অংশ গ্রহন করবেন। কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি চলে আসবেন। এর আগে মেয়র সিঙ্গাপুর গেছেন।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিসিসির এক প্যানেল মেয়র বলেন, ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দ্বায়িত্বে না বসিয়ে কর্পোরেশন অভিভাবক শূন্য করে দেশের বাইরে যাওয়াটা সম্পূর্ন অবৈধ। একই সঙ্গে অনুমোদন নিতে হবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের।জনৈক প্যানেল মেয়র বলেন, মেয়র ক্ষমতাসীন দলের ক্ষমতাসীন ব্যাক্তি। তার নানাবিধ অন্যায় অপকর্মের প্রতিবাদ করলে আমাকে বেকায়দায় পড়তে হবে। এজন্য নিরব রয়েছি। তিনি আরো বলেন মেয়র হিরনের সকল বিতর্কিত কর্মকান্ডের বিষয়গুলো উন্মোচিত হবে যখন তিনি দ্বায়িত্বে বা ক্ষমতায় থাকবেন না।বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য নাজিম উদ্দীন আহমেদ জানান. বরিশাল সিটি কর্পোরেশন ২০০১ সালের ১১ নং আইনের ১৮ ধারায় বলা হয়েছে মেয়র যে কোন কারনে অনুপস্থিত থাকলে সেক্ষেত্রে প্যানেল মেয়রকে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দ্বায়িত্ব নির্ধারন করতে হবে।বিসিসির প্যানেল মেয়র কেএম শহিদুল্লাহ বলেন, মেয়রকে দেশের বাইরে যেতে হলে সেক্ষেত্রে কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়রদের মধ্যে থেকে সিনিয়রিটিনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত মেয়র নির্ধারন করতে হবে। কর্পোরেশনের অভিভাবক নির্ধারন করে যাওয়াটা আবশ্যক। তিনি আরো বলেন, বিদেশে স্বল্প আর লম্বা ছুটি এরকম কোন বিধান নেই। অসুস্থ অথবা অনুপস্থিত থাকলে প্যানেল মেয়রকে দ্বায়িত্ব দেয়ার বিধান রয়েছে। মেয়র দেশে আর বিদেশে থাক সে তো অনুপস্থিত। এ কারনে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসাবে জেষ্ঠ্যতানুসারে দ্বায়িত্ব দেয়া উচিৎ ছিল.

বিসিসির ৩০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মেয়রের ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত ফরিদ হোসেন বলেন, আমার জানামতে মেয়র হিরন ভারতে গেছেন।কট্রর হিরনপন্থী ছাত্রলীগ নেতা জসিম উদ্দীনও জানান, মেয়র দেশের বাইরে রয়েছেন।বিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিখিল চন্দ্র দাস বলেন, মেয়র বিদেশ গেছেন। এ সপ্তাহে তিনি দেশে ফিরবেন। তিনি বলেন, লম্বা ছুটিতে বিদেশ গেলে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দ্বায়িত্বে বসিয়ে যেতে হবে। কিন্তু তিনি(মেয়র) তো কয়েক দিনের জন্য বিদেশ গেছেন। এক্ষেত্রে ভারপ্রাপ্ত হিসাবে কাউকে দ্বায়িত্ব না দিলে সমস্যা নেই। এছাড়া মেয়র না থাকায় অফিশিয়াল কোন কাজে বিঘ্নও ঘটছে না।এদিকে বিসিসি মেয়র শওকত হোসেন হিরনের ব্যাক্তিগত সেল ফোনে একাধিক বার ডায়াল করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া গেছে।স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের সিটি কর্পোরেশন বিভাগে যোগাযোগ করা হলে তারা বরিশালের মেয়র শওকত হোসেন হিরনের বিদেশ সফরের কথা নিশ্চিত করেন তবে তিনি কবে গেছেন এবং কোন দেশে গেছেন এ প্রশ্নের উত্তরে তারা কিছুক্ষন পর ফোন করতে বললেও একাধিকবার ফোন করার পরও কেউ ফোন ধরেননি।

প্রসঙ্গত  ১৯৯৮ সালে শওকত হোসেন হিরন জাতীয় পার্টি থেকে দল ত্যাগ শেষে সাবেক চীফ হুইফ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ’র আর্শিবাদ নিয়ে আ’লীগে যোগদান করেন। ২০০৩ সালে শহর কমিটি ভেঙে গঠন করা হয় মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটি। আহবায়কের দায়িত্ব পান হিরন। জাপার রাজনীতির সময়কালে হিরনের আর্শিবাদপুষ্ঠরাও আ’লীগে ভীড়ে। ২০০৮ সালের ৪ আগষ্ট বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে আ’লীগের ব্যানারে প্রতিদ্বন্ধিতায় মেয়র পদে অধিষ্ঠিত হন হিরন। মুলত হিরনের মেয়র পদে আসীনের পর থেকে নগরীতে বেপরোয়া হয়ে উঠে আর্শিবাদপুষ্ঠ তার আপন ভাই মামুন, যুবলীগ নেতা নিজামুল ইসলাম নিজাম, আ’লীগ নেতা মেজবাহ উদ্দীন দিপু, যুবলীগের বহিস্কৃত নেতা আবুয়াল হোসেন অরুন। টেন্ডারবাজীতে কাজ ভাগিয়ে নেয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন পন্থায় অবৈধ পথে অগাধ সম্পদের মালিক হন হিরনপন্থীরা।

অপরদিকে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার এবং তত্তাবধায়ক সরকারের আমলে একের পর এক হাসানাতের বিরুদ্ধে দায়ের হয় মামলা। দীর্ঘ সময়ে হাসানাতের অনুপস্থিতে হিরন নিজেই গ্রুপিং রাজনীতির জন্ম দিয়ে অনুসারী তৈরি করে বিতর্কের অধ্যায় রচনা করেন।