১০নারী শ্রমিক স্থানীয় এক ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়ির কাজ করছে। গত এক সপ্তহ ধরে ওই শ্রমিকদের অনিয়মতান্ত্রিকভাবে বাধ্য করে ওই চেয়ারম্যান তার বাড়ির কাজ করাচ্ছেন। ইউএনও ও এলজিইডির কর্মকর্তাদের কাছে বলেও কোন সুফল না পেয়ে নারী শ্রমিকরা নিরুপায় হয়ে কাজ করতে বাধ্য হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
কালকিনি এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার প্রত্যেকটি ইউনিয়নে এলজিইডির সড়ক উন্নোয়ন কাজে ১০জন করে নারী শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছে। এরা সাধারণত এলজিইডির সড়কগুলোর মেরামত কাজে নিয়োজিত থাকেন। অত্যন্ত অসহায় কিন্তু কর্মক্ষম এমন নারীদের ৫বছরের জন্য চুক্তিভিক্তিক নিয়োগ করা হয়ে থাকে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ডাসার ইউনিয়নের সড়কগুলোর মেরামত কাজে নিয়োজিত রাশিদা, টুলু বেগম, শাহিদা, নমিতা, রানী, উর্মিলা, আলেয়া, রেবা বেগম, চায়না ও কমলামধু নামের ১০জন নারী শ্রমিক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ মনিরুজ্জামানের বাড়িতে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কাজ করছেন। ধানের মৌসুম এলেই প্রত্যেক বছর এদের কাজ করতে হয়।
উর্মিলা, চায়না ও আলেয়া গৌরনদী ডটকম-কে বলেন, ‘প্রত্যেক বছরই চেয়ারম্যানের বাড়িতে ধান উঠলেই কাজ করতে হয়। গত ৭/৮দিন ধরে বাড়ির সব ধরনের কাজ আমাদের দিয়ে করানো হচ্ছে। এইটা তো ইউএনও বা মোগো স্যারেরাও (এলজিইডি কর্মকর্তা) জানে। নিষ্ঠুরতার মতো রৌদ্রের মধ্যে সারা দিন কাজ করতে করতে আমরা কাহিল হইয়া পড়তেছি। মোগো বাঁচান।’
তারা আরো বলেন, গত বছর ধানের মৌসুমে চেয়ারম্যানের বাড়িতে ধান রৌদে দেয়া, কুটা শুকানো ও মাটি কাটার সময় ইউএনও ও এলজিইডি কর্মকর্তা আমাদের দেখে কাজ না করার জন্য বললেও চাকরী হারানোর ভয়ে নিরুপায় হয়ে কাজ করতে হচ্ছে।
এলজিইডির নারী শ্রমিকদের দলনেতা রাশিদা গৌরনদী ডটকম-কে জানান, ঈদ, ‘কোরবানীতে বা কোন অনুষ্ঠান চেয়ারম্যানের বাড়িতে হলে মোগো দিয়ে কাম করায়। কাম না করলে চাকরী থেকে বাদ দিয়ে দিবে বলে হুমকী দেয়। চাকরী হারানোর ভয়ে মোরা চেয়ারম্যানের বাড়িতে কাজ করি।’
স্থানীয়রা জানায়, এই ইউনিয়নের সড়কগুলোতে গাছের পরিচর্চার জন্য রেবা ও রিজিয়া নামের দু’জন নারী শ্রমিক রয়েছে। তারা দু’জনে মাসে দু’ এক দিন রাস্তায় আসায় সড়কের গাছগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। ওরা দু’জনে কাজ না করে বেতন নেয়ায় এলজিইডির সিও অর্ধেক বেতন প্রত্যেক মাসে কেটে রেখে দেন।
উপজেলা এলজিইড অধিদপ্তরের সিও (কমিউনিটি অর্গানাইজার) ইসরাইল হাওলাদার গৌরনদী ডটকম-কে বলেন, ‘শ্রমিকরা আমার কাছে বললে আমি চেয়ারম্যানকে কাজ না করানোর জন্য বলেছিলাম কিন্তু সে শুনেনি। চেয়ারম্যানদের কথা না শুনলে তারা আবার ইউএনও স্যারের কাছে অভিযোগ দিয়ে থাকেন।’
উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম গৌরনদী ডটকম-কে বলেন, ‘আমার কাছে অভিযোগ দিলে হালকাভাবে দেখতাম না। অবশ্যই ব্যবস্থা নিতাম।’
ডাসার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ মনিরুজ্জামান এলজিইডির নারী শ্রমিক দিয়ে বাড়িতে কাজ করানোর কথা স্বীকার করে বলেন, ‘বন্ধের একদিন মাত্র কাজ করিয়েছিলাম, এখন আর কাজ করছে না।’
যোগাযোগ করা হলে এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ রিয়াজ এ প্রতিবেদক কে বলেন, ‘আমার কাছে কেউ অভিযোগ দেয়নি। তাছাড়া বিষয়টি আমার জানাও ছিল। এ রকম হয়ে থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’