বরিশাল বিএনপি না আ’লীগ – কোন পথে হাটছে

মধ্যবর্তী নির্বাচন দেয়া হলে বর্তমান বরিশালের রাজনীতির প্রেক্ষাপটে কোন দল বিজয়ের মুকুট পরবেন। সুশিল সমাজ থেকে শুরু করে সাধারন জনগনের বর্তমান এই ভাবনার ইতি কি? দলীয় অভ্যন্তরীন ক্রোন্দল এখানকার বিএনপিকে ৪ খন্ডে ও আ’লীগকে ২খন্ডে রুপান্তরিত করেছে। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে বরিশালের আ’লীগ ও বিএনপি কোন পথে হাটতে শুরু করেছে। অভ্যন্তরীন ক্রোন্দল প্রধান এই দুটি দলকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে।

এখানকার বিএনপির ৪বারের সাংসদ মজিবুর রহমান সরোয়ারের সেই বিএনপি এখন আর নেই। তার একক আধিপত্যর মানতে নারাজ হওয়ায় বিএনপির এই দলটি ৪টি খন্ডে পরিনত হয়েছে। স্ব-স্ব গ্র“প ভিন্ন ভিন্ন ভাবে কেন্দ্রীয় যে কোন প্রোগ্রাম বা কমসূচি পালন করছে। সর্বশেষ বিএনপির এই গ্র“পিং রাজনীতি সংঘাতে রুপ নিয়েছে। যে মামলার আসামী খোদ সাংসদ মজিবর রহমান সরোয়ার। কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম রাজনকে কুপিয়ে আহত করার ঘটনায় এই মামলা দায়ের হয় সাংসদ সরোয়ার সহ দলীয় কয়েক নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। তবে সেদিক থেকে বিচার বিবেচনায় বিএনপির থেকে বরিশাল আ’লীগের সাংগঠনিক শক্তি তুলনামূলক জোরদার হয়েছে। যদিও বরিশাল আ’লীগের নেতা-কর্মীরাও মানষিকতার দিক থেকে হাসানত বনাম হিরন নামক দুটি গ্র“পে বিভক্ত।

তবে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ ও হিরনকে জুড়ে যে গ্র“পিং’র গুজব রয়েছে মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে আ’লীগে তা কোন ধরনের প্রভাব ফেলবেনা। কারন গ্র“পিং এর কারনে এখানকার আ’লীগে মেয়র হিরনের কোন প্রতিদ্বন্ডির সৃষ্টি হয়নি। যদি ও এই গ্র“পিংকে কখনোই স্বীকার করেনা এখানকার আ’লীগ। তবে সর্বশেষ এখানকার আ’লীগে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা গ্র“পিং এর বিষয়টি অনেকটাই পরিষ্কার করে দিয়েছে। বাকেরগঞ্জে ছাত্রলীগের কমিটিকে ঘিরে বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক মিলন ভূইয়া ও যুগ্ন আহবায়ক কাজী মনির উদ্দিন তারিককে মারধরের ঘটনায় অভ্যন্তরীন গ্র“পিং এর বিষয়টি জন সাধরনের নিকট অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

ওদিকে বিএনপির একটি সূত্রের দাবী এখানে সরোয়ারের ৩শক্ত প্রতিদ্বন্ডি কামাল, চান ও রাজন আস্তে আস্তে তাদের দল ভারী করায় বিএনপি এখন ৪টি গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে। বরিশাল সদর আসনের ৪বার নির্বাচিত এমপি সরোয়ার তার একক আধিপত্যের কারনে দলটিকে কয়েকটি খন্ডে পরিনত করেছেন। এমতাবস্থায় চলতে থাকলে বিএনপির দাবী অনুযায়ী মধ্যবর্তী নির্বাচনে বরিশালে বিএনপির ভরাডুবি অবিশ্যম্ভাবী। বলা যায় পদ পজিশনের লোভ বা প্রত্যাশাই মূলত এর জন্য দায়ী। ওদিকে মহানগর বিএনপির কমিটি ঘোষনা হওয়ার পর জেলা বিএনপির কমিটি নিয়ে বিএনপির রাজনীতিতে বর্তমানে চলছে নতুন এক সিরিয়াল। দলীয় নেতা-কমীরা কখনো বলছে আহসান হাবিব কামাল আসছেন জেলা সভাপতি পদে এবং সাধারন সম্পাদকের পদে আসছেন ওবায়দুল হক চান। আবার কখনো বলছে সাধারন সম্পাদক পদে আসছেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি বিলকিস জাহান শিরিন।

কথা থাকে হাসানাত বনাম হিরন সমর্থিতদের মানুষিক  দ্বন্দ্বের বিষয়টি আ’লীগের অস্বিকার। আ’লীগের একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলছে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহকে যারা হিরনের প্রতিদ্বন্ডি মনে করে তারা আসলে ভূল করবেন। কারন মেয়রের দায়িত্ব গ্রহনের পরপরই শওকত হোসেন হিরন দলীয় নেতা-কর্মীদের হাল ধরবেন বা ধরেছেন বা এটাই স্বভাবিক। আর এ কারনে বরিশাল আ’লীগের কর্নধর আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ’র রাজত্বে সৃষ্টি হয়েছে নতুন এক নেতৃত্বদানকারী অভিভাবক। যা নগরবাসী হাসানাত বনাম হিরন দৃষ্টিতে দেখছে। তবে সুশিল সমাজ মনে করেন মেয়র হিরনের কোন প্রতিপক্ষ নেই। নেতা কিংবা অভিভাবক হিসেবে বরিশালের রাজনীতিতে হাসানাত হচ্ছেন অদ্বিতীয়। ক্ষমতা কিংবা জনসর্মথনে যার অবস্থান মেয়র হিরনের চারগুন উপরে। ফলে মধ্যবর্তি নির্বাচনে আ’লীগে কোন গ্র“পিং হওয়ার সুযোগ নেই। তদুপরি দলীয় নেতা-কমীরা কেন দুটি মানষিকতায় বিভক্ত? হাসানাত সমর্থিত একটি সূত্র বলছে মূলত হঠাৎ করে জাতীয় পার্টি থেকে আ’লীগে যোগ দানের বছর খানেকের মাথায় হিরনের এই উত্থানের বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি হাসানাত সমর্থিতরা। তারা বলছে, দলীয় নেতা কর্মীদের নিজ শিবিরে আনতে একটু একটু করে অনেকটা কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। প্রথম দিকে বিভিন্ন টেন্ডার বা কাজ দিয়ে অনেকটাই সু-চুতুর কৌশলে ব্যক্তি দল ভারি করেছেন মেয়র হিরন। তবে মেয়র শিবিরের বেশীর ভাগ সৈন্য হল বর্তমান বরিশাল মহানগর যুবলীগ ও ছাত্র লীগ।

আ’লীগের নিরপেক্ষ কর্মীদের মধ্যে অপর একটি সূত্র বলছে বরিশালে মেয়র শিবিরের অন্যতমদের তালিকায় যুবলীগের মোমেন শিকদার, বহিস্কৃত যুবলীগ নেতা আবুয়াল হোসেন অরুন, মেজবাহ উদ্দিন দ্বিপু, ট্যারজান তমাল। এছাড়া মহানগর ছাত্রলীগের আসদুজ্জামান আসাদ, বিএম কলেজ ছাত্রলীগের মঈন তুষার, নাহিদ সেরনিয়াবাত, শেখর দাস, বরিশাল কলেজের সাবেক এজি এস সোহাগ , জসিম ও পলিটেকনিক কলেজের ছাত্র লীগ ক্যাডার মিজান। তবে বেশীর ভাগ ছিনিয়ার আ’লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ মেয়র শিবিরের বিপরীতে অবস্থান করছেন। যাদেরকে দলীয় কর্মীরা হাসানাত সমর্থিত বলে দবী করছে ।

উল্লেখ্য ২০০৮ সালে মেয়র হিরন রহস্য জনক ভাবে মেয়র ইলেকশনে  জয়ী হবার পর মাত্র ২বছরে পাল্টে দিয়েছেন নগরীর চিত্র। যে কারনে নগরবাসীর আস্থা কিছুটা হলেও তিনি অর্জন করেছেন। বিপরীতে বিরোধীদল বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়েও দলীয় কোন কর্মকান্ডে স্বক্রিয় ভাবে অংশ গ্রহন করতে পারছেনা। যার নেপথ্য কারন দলটির চেইন অব কমান্ডরা কয়েকটি গ্র“পে বিভক্ত। মজার বিষয় এখানকার বিএনপির রাজনীতিতে বিএনপির বিরুদ্ধে বিএনপি ই অপশক্তি পরিচালনা করছে। আর তাই ক্রমান্বয়ে সংকীর্ন হতে চলেছে বরিশালের বিএনপি। তবে অসমর্থিত একটি সূত্র বলছে নির্বাচন নাগাদ পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটলে বিএনপি তার সাবেক অবস্থা ফিরে পাবে। বিপরীতে হাসানাত সমর্থিত-হিরন সমর্থিতদের এই গ্র“পিং রাজনীতি মধ্যবর্তী নির্বাচনে তেমন কোন প্রভাব ফেলবেনা। যতটুকু প্রভাব ফেলবে বিএনপির উপর। এদিকে খোদ বিএনপির প্রধান প্রতিপক্ষ সরোয়ার বর্তমানে দলের ভাঙ্গা-গড়া নিয়ে মহা-দুশ্চিন্তাগ্রস্থ। যে বরিশালে এমপি মজিবর রহমান সরোয়ার দলের উপর এক চাটিয়া প্রভাব বিস্তার করতেন সেখানে এখন ৪টি ফাটল ধরেছে। সমকক্ষ নেতা হতে চাইছেন কামাল, চান ও রাজন। অবশ্য বলা হয় র‌্যাব কর্তৃক ক্রস-ফায়ারে নিহত ভিপি মশিউল আলম সেন্টু বিএনপির রাজনীতিতে ছিলেন সরোয়ারের শক্তিধর হাতিয়ার। যার মৃত্যুতে ছত্র ভঙ্গ হয়েছে বরিশাল জেলা ও মহানগর ছাত্র দলের ইউনিটি। তবে বিএনপির ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দদের মধ্যে বেপরয়া কিছু ছাত্রদল নেতারা দলের এই র্দূদিনে নিজ আখের গুছাতে ব্যাস্তহয়ে পরেছেন। যাদের মধ্যে অন্যতমদের তালিকায় রয়েছেন মনোয়ারুল ইসলাম জিপু। যার বির্তকিত কর্মকান্ড ইতি মধ্যে মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। সব মিলিয়ে ছাত্র দল, যুব দল ও বিএনপির বড় ধরনের এই ফাটলের ধারা অব্যহত থাকলে মধ্যবর্তী নির্বাচনে বরিশালের আসনে বিএনপির ভরাডুবি অনিবার্য।

এ সব ঘটনার আংশিক সত্যতা স্বিকার করে নজরুল ইসলাম খান রাজন জানান, দলীয় অভ্যন্তরীন ক্রোন্দল আসলে নির্বাচনে অনেকটাই প্রভাব পরে। তবে নির্বাচনের পূর্বে এসব গ্র“পিং দলের নেতারা এক শিবিরে আসলে যে কোন বিজয় নিশ্চিত করা সম্ভব। ও দিকে মেয়র শওকত হোসেন হিরন গ্র“পিং এর বিষয়ে বরিশালের একটি দৈনিক পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে বলেন বরিশাল আ’লীগ কোন গ্র“পিং বা বিভাজনের রাজনীতি বিশ্বাষ করেন না। তারা সাবেক চীফ হুইপ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর অভিভাবকত্বে বিশ্বাষ করে রজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করেন। সুতরাং মধ্যবর্তী নির্বাচন বা যে নির্বাচনই হোক না কেন আ’লীগ বরিশালে কথায় নয় কজে বিশ্বাষী। বরিশালে বিগত বিএনপি সরকারের উন্নয়নের চিত্র আর বর্তমান আ’লীগ সরকারের উন্নয়নের চিত্র   দেখে যা সাধারন জনগনই তা ভাল উপলব্ধি করেত পারবেন।