অবৈধভাবে উৎপাদিত হচ্ছে মিক্সড ফুডস হার্বাল পানীয়

শনিবার সকালে মাদারীপুরের কালকিনিতে অব্যবহৃত পৌর মার্কেটের ভিতরে পানরত অবস্থায় দেখে জিজ্ঞেস করতেই এক যুবক এ প্রতিবদেককে এ কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, ‘নেশা করা নিরাপদ না, সবাই খারাপও কয়, এইডা (রেড হর্স) খাইলেই মোর সব হয়, তবে দামটা একটু বেশী।’ কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজের শিক্ষার্থী আঃ কুদ্দস জানান, ‘রেড হর্স নামের ঐ ড্রিংকস নাকে নিলেই বিষাক্ত ওষুধের দুগন্ধ আসে। ভালো কেউ ওইয়া খায় না, বিক্রি হওয়া দোকানের পিছনের রুমে বসে উঠতি বয়সি নেশাখোরদেরই খেতে দেখা যায়।’

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ‘শুধুমাত্র প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য’ বোতলে লিখে সতর্কতাবানী দিয়ে একটি চক্র মিক্সড ফুডস হার্বাল পানীয় “রেড হর্স” অবৈধভাবে উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ করছে। এই চক্রটি ঢাকায় ভেজাল পানীয় উৎপাদন করে টিকতে না পারায় নিজ এলাকা উক্ত স্থানে ঘাটি গেড়েছে। নেশা জাতীয় দ্রব্য দিয়ে উক্ত রেড হর্স তৈরি করায় নেশাখোরদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। রেড হর্স ব্যাপকভাবে উৎপাদন হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি নাম দেয়া হয়ে হয়েছে ওয়ান স্টার ফুডস এন্ড বেভারেজ। উপজেলার সর্বত্র এই পানীয় পাওয়া যাচ্ছে। ঢাকা ও বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় রেড হর্স সরবরাহ করা হয়।

সুত্র জানায়, কোন কোম্পানী খাদ্য দ্রব্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ করতে হলে ইউনিয়ন বা পৌরসভা থেকে ট্রেড লাইসেন্স, উপজেলা সেনিটারী ইনস্পেকটরের লাইসেন্স ও বিএসটিআই থেকে লাইসেন্স নিতে হবে। পানীয় জাতীয় খাদ্য দ্রব্যের জন্য জেলা সিভিল সার্জনের লিখিত অনুমতি নিতে হবে। এরকম কোন লাইসেন্স বা অনুমতি ওয়ান স্টার ফুডস এন্ড বেভারেজ কোম্পানীর নাই। নেই এ্যালকোহল বা স্পিরিটি জাতীয় মেডিসিনের জন্য কোন পরীক্ষাগার। এমনকি পায়খানা সংলগ্ন স্থান থেকে মটার দিয়ে উত্তোলিত পানি ব্যাবহার করা হচ্ছে।

রমজানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গির হোসেন রাঢ়ী বলেন, ‘আমরা সাধারণত মুদি দোকানীদেও ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে থাকে কিন্ত  শিল্প প্রতিষ্ঠান হিসেবে কোন অনুমোদন নেয়নি।

দুটি রেড হর্সের বোতল উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ও প্রসিকিউশন কর্মকর্তা মিঞা ইউসুব আলীকে দেখালে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘জনস্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে এমন একটি পানীয় প্রতিষ্ঠানের খবর আমি জানতাম না! আমার অফিস বা জেলা সির্ভিল সার্জন অফিস থেকেও এরা কোন প্রকার অনুমতি নেয়নি। এমনকি বিএসটিআই থেকে লাইসেন্স না নিয়ে এই কোম্পানী বাজারজাতকরণ করছে কীভাবে?’

বোতল দুটি নাকে ঘ্রান নিয়ে তিনি বলেন, ‘এতে নেশা হয় এমন মেডিসিন রয়েছে। এগুলো মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে অবশ্যই মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হবে।’   

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়ান স্টার ফুড এন্ড বেভারেজ কোম্পানীর এক অংশীদার মোস্তফা পাইক বলেন, আপনারাতো আইনের লোক না যে আপনাদের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। মাদারীপুরের ম্যাজিষ্ট্রেট ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে ৫০হাজার টাকা জরিমানা করেছে। আমার প্রতিষ্ঠান অবৈধ হলে তো সিলগালা করে দিত। ম্যাজিষ্ট্রেটের ভ্রাম্যমান আদালতই প্রমাণ করে এই প্রতিষ্ঠান বৈধ।’

ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জরিমানা আদায় প্রসঙ্গে উপজেলা স্যানিটারি ও প্রসিকিউশন কর্মকর্তা মিঞা ইউসুব আলী বলেন, ‘এরকম কোন প্রতিষ্ঠানে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করতে হলে আমাদের অবগত করতে হবে কিন্তু কই, আমরাতো কিছুই জানিনা।’