শেবাচিমের তদন্ত কমিটির দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ

মেডিকেল কলেজে থানা পুলিশ কোন অভিযান না চালালেও পুলিশ আতংকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাস ছেড়ে বরিশালের বাহিরে অবস্থান নিয়েছে ছাত্র কল্যান পরিষদের ভিপিসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দরা। এদিকে গত সোমবারের সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তের জন্য কলেজ থেকে গঠন করা কমিটির প্রধানসহ সকল সদস্য দায়িত্ব পালনে তাদের অপারগতা স্বীকার করেছেন। অপরদিকে কলেজ ছাত্রলীগ নেতা ও ছাত্র কল্যান পরিষদের ভিপি সৈকত এবং এজিএস মারুফ এক সময় শিবিরের সমর্থক ছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন সোমবার থেকে পালিয়ে বেড়ানো শিবির নেতারা।

তথ্যমতে, বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ শাখার শিবির ছাত্র নেতার জামিনে মুক্তি পেয়ে বুধবার বরিশাল চীফ জুডিশিয়াল মেজিস্ট্রেট আদালতে চাদাবাজি, হামলা, হুমকী ও সাধারন শিক্ষার্থীদের মাঝে আতংক সৃস্টির অভিযোগ তুলে শিবির নেতা মোঃ ফয়েজুল্লাহ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় কলেজের ছাত্র কল্যান পরিষদের ভিপি মাসরেফুল ইসলাম সৈকতকে প্রধান আসামী করা হয়। এ মামলার অন্যান্য আসামীরা হলেন এজিএস আবু তালিব মোঃ আবদুল্লাহ মারুফ, সুখরঞ্জন দাস, হারুনউর রশীদ, মেহেদী, নাজমুল সাকিব সূচক, রিপন রায়, নিয়াজ মাহমুদ, খন্দকার আব্দুল কাইউম, রাফি, প্রিন্স মাহমুদ, প্লাবল ও সুদিপ্ত। আদালতের বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তদন্তের দায়িত্বে দেন।

এদিকে শিবিরের দায়ের করা মামলার পর গত ৭২ ঘন্টায়ও থানা পুলিশ রহস্যজনক কারনে কলেজ ক্যাম্পাস কিংবা ছাত্রাবাসে কোন অভিযান চালায়নি। এমনকি ক্যাম্পাসে নেই পুলিশের উপস্থিতি। এরপরও পুলিশ আতংকে শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাস ছেড়ে বরিশালের বাহিরে অবস্থান নিয়েছে ছাত্র কল্যান পরিষদের ভিপি সৈকত ও এজিএস মারুফসহ মামলার অধিকাংশ আসামী। তবে তারা পুলিশ আতংকে নয়, পারিবারিক কাজে বরিশালের বাহিরে আছেন বলে দাবী করেছেন। এখনো বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা কর্মী কলেজে থেকে পরাশুনা করছেন বলে তারা জানান। ও দিকে মামলার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলে দাবী করেছে কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তবে আইনী প্রক্রিয়া বা আদালতের নিদের্শে ছাত্রবাস কিংবা ক্যাম্পাস থেকে কাউকে আটক করলে কলেজ কর্তৃপক্ষের কোন দায়িত্ব থাকবে না বলে জানিয়েছেন অধ্যাক্ষ প্রফেসর ডাঃ আবু তাহের। তিনি বলেন, তদন্ত করে ওই মামলার ঘটনার সাথে জড়িত থাকার প্রমান পাওয়া গেলে আসামীদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেয়ার অধিকার আছে পুলিশের। তাই পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালন করবেই। সে ক্ষেত্রে কলেজের প্রশাসনিক বিভাগ থেকে তাদের বাধা দেয়া হবে না।

অপরদিকে সোমবারের ঘটনায় কলেজ কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার বায়োকেমিস্ট বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ সাব্বির আহাম্মেদ খানকে প্রধান করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করেছিল। ডাঃ সাব্বির আহম্মেদ তদন্ত কমিটি গঠনের চিঠি পাওয়ার সাথে সাথে দ্বায়িত্বে অপারগতার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি তার পারিবারিক সমস্যার কথা বলে এড়িয়ে গেছেন। একই সাথে কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন স্বাচিপ নেতা ডাঃ এ ডি আই মুজাহিদ উদ্দিন ও ভাস্কর সাহাও বিভিন্ন অজুহাত তুলে এ দ্বায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন। তাই কলেজ অধ্যাক্ষ ডাঃ আবু তাহের শনিবার জরুরীভাবে একাডেমি কাউন্সেলের সভার ডাক দিয়েছেন। তিনি বলেন, একাডেমি কাউন্সিলের সভার এ বিষয়ে আলাপ আলোচনার পর নতুন তদন্ত কমিটির সদস্যদের নাম ঘোষনা করা হতে পারে। এ ব্যাপারে কলেজ মামলার বাদী মোঃ ফয়জুল্লাহ অভিযোগ করে বলেন, সোমবারের  পূর্বে কলেজের একাধিক ছাত্রশিবিরের নেতা কর্মি ও সমার্থকদের কাছে চাঁদা দাবী করে আসছিল ভিপি সৈকত, এজিএস মারুফ ও হারুন উর রশীদসহ অন্যান্য ছাত্রলীগের নেতারা।

এ ঘটনার পর বিষয়টি নিয়ে চাদাদাবীকারীদের পরিবারের সাথে আলাপ আলোচনা করা হয়েছে। তারাও শিবির নেতা-কর্মিকে আশ্বস্তও করেছিল। কিন্তু এতে সৈকত, মারুফ ও হারুনরা শিবির নেতা-কর্মিদের উপর ক্ষিপ্ত হয়। এরই সূত্র ধরে ওই দিন শিবিরের উপর হামলা চালানো হয়েছে। শিবির নেতা মোঃ ফয়জুল্লাহ আরো অভিযোগ করেন বলেন কলেজের বর্তমান ছাত্রলীগ নেতা দাবীদার ও ছাত্র কল্যান পরিষদের ভিপি সৈকত এবং এজিএস মারুফ এক সময় শিবিরের সমর্থক ছিলেন। তারা রেটিনায় কোচিং করেছিলেন। সৈকতের বেশ কয়েকজন অত্মীয়ও শিবিরের অন্যতম নেতা হিসেবে পরিচিত লাভ করেছে। তারা বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর কলেজে এসে ছাত্রলীগে যোগদান করেন। তারা ছাত্রলীগে যোগদান করার পূর্বে শিবিরকে কথা দিয়েছিল শিবিরের কার্যক্রমে বাধা প্রদান করবে না। কিন্তু নিজেদের দলীয় আধিপত্ত বিস্তারের জন্য সোম বার ওই ঘটনা ঘটিয়েছে।

শিবির নেতা মোঃ ফয়জুল্লাহ এ অভিযোগগুলো মিথ্যে ও ভিত্তিহীন দাবী করে ভিপি মাসরেফুল ইসলাম সৈকত বলেন, রেটিনায় কোচিং করলেই সে শিবির বা শিবিরের সমার্থক হয়না। তাছাড়া তিনি রেটিনায় নয়, থ্রি-ডক্তরস কোচিং সেন্টার থেকে পড়াশুনা করেছেন বলে দাবী করেছেন। মামলার ব্যাপারে সৈকত বলেন, শিবিরের নেতা-কর্মীরা হামলা চালিয়েছে বলে কলেজ অধ্যক্ষ তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। তারা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে যে মামলা করেছে এর কোন ভিত্তি নেই। এটি রাজনৈতিকভাবে সড়যন্ত্রমূলক মামলা। তাই রাজনৈতিক ভাবেই এ মামলা নিষ্পতি করা হবে। কলেজে কোন জঙ্গিবাদদের আশ্রয় হবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন। তার মতো একই মন্তব্য ছিল কলেজের অন্যান্য ছাত্রলীগ নেতাদের। সবমিলিয়ে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি এখনো থমথমে পরিবশে বিরাজ করছে। এখনও কলেজে ফিরে আসেনি শিবির নেতা কর্মীরা।