নিজস্ব সংবাদদাতা হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার মধ্য দিয়ে সৌখিন সাংবাদিকতা শুরু করেছিলেন সাংবাদিক জহুরুল ইসলাম জহির। ১৯৮২সনের জানুয়ারি মাসে মাওলানা আকরাম খানের প্রতিষ্ঠিত তৎকালীন সময়ের বহুল প্রচারিত দৈনিক আজাদ পত্রিকার গৌরনদী সংবাদদাতা হিসেবে জাতীয় দৈনিকে তিনি কাজ শুরু করেন। একটানা গত ৩০ বছর যাবৎ ঝুঁকিপূর্ণ এ পেশায় সৎ নিষ্ঠা ও সাহসীকতার সাথে সাংবাদিকতায় নিয়োজিতো থেকে মানুষের কল্যানে তিনি (জহির) কাজ করে যাচ্ছেন। বর্তমানে দৈনিক প্রথম আলোর গৌরনদী প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত রয়েছেন বরেন্য সাংবাদিক জহুরুল ইসলাম জহির।
সাংবাদিকতা জীবনে গত ৩০ বছরই তিনি ছিলেন সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে অবিচল, ছিলেন দল নিরপেক্ষ। সংগ্রাম করেছেন অন্যায়, অবিচার ও শোষনের বিরুদ্ধে। সাংবাদিকতার শুরু থেকেই ক্ষমতাসীনদের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে তাদের রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে লিখনী অব্যাহত রেখেছেন। এ জন্য তাকে সহ্য করতে হয়েছে নির্মম ও অমানবিক নির্যাতনসহ কারাভোগ।
১৯৮৫ সালে সাময়িক শাসক এরশাদ সরকারের সময়ে দুঃশাসনের বিরুদ্ধে লেখনী ও সেনা কর্মকর্তা জনৈক বেল্লাল কর্তৃক নিরহ মানুষের ওপর জুলম, দখল, হত্যা লুটতরাজ চালায়। এ সন্ত্রাস ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে ধারবাহিক লেখনীর জন্য সামরিক আদালতে বেল্লাল কর্তৃক দায়ের করা মিথ্যা রাষ্ট্রদ্রোহী মামালায় দু’মাস দশ দিন কারাভোগ করতে হয়েছে সাংবাদিক জহিরকে।
১৯৮৬ সনে প্রকাশিত সংবাদের সত্যতা প্রমান সাপেক্ষে ১ জুন জেল থেকে তিনি মুক্তি লাভ করেন।
১৯৮৭ সনে তৎকালীন সরকারের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী বাহীনির সন্ত্রাসী কর্মকান্ড নিয়ে লিখতে গিয়ে তিনি শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হন। ১৯৮৮ সালে স্মরনকালের ভয়াবহ বন্যায় ত্রান বিতরণে কারচুপি, দুর্নীতি ও অনিয়মের সংবাদ প্রকাশের কারনে তৎকালীন ক্ষমতাসীনদের ষরযন্ত্রে তাকে গৌরনদী উপজেলা সদরের আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন করা হয়।
১৯৯৯ সনের ১৩ ডিসেম্বর দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার গৌরনদী প্রতিনিধি হিসেবে তিনি যোগদান করেন। ২০০১ সনে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, চাঁদাবাজী, লুটপাট ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে লেখনী অব্যাহত রাখায় ওই বছরের ১৬ জুলাই তার (জহিরের) বাসভবনে ২৫/৩০জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা ঘেরাও করে প্রকাশ্য দিবালোকে ফোন ফ্যাক্স লুট করার পর হত্যার উদ্দেশ্যে তাকে বিষাক্ত ইনজেকশন পুশ করেছিলো।
২০০১ সনে গৌরনদী ও আগৈলঝাড়ায় ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা সংখ্যালঘু নির্যাতনের এক ভয়াবহ রাজত্ব কায়েম করে। ওই সময় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকে লেখনির কারনে সন্ত্রাসী বাহীনির হুমকী ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয় তাকে। এত নির্যাতনের পরেও সাংবাদিকতা থেকে পিছু হটেননি। আপোষ করেননি কোন অন্যায়ের সাথে। সততা ও সাহসীকতার ধারায় তার সাংবাদিকতার অগ্রযাত্রা অব্যহত রয়েছে। দেখতে দেখতে পার করেছেন ৩০ টি বছর। দীর্ঘ ৩০ বছরের সাংবাদিকতা জীবনে তিনি দৈনিক আজাদ, দৈনিক খবর, দৈনিক বাংলার বানী, দৈনিক দেশ জনতা, দৈনিক বাংলা বাজার পত্রিকায় কাজ করেন। তার কর্মদক্ষতা ও সাহসীকতার জন্য দৈনিক প্রথম আলো কর্তৃপক্ষ ২০০৬ সনে তাকে ওয়েজ বোর্ড প্রদান করেন। সততা নিষ্ঠা ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার জন্য তিনি ২০০৫ সনে সাংবাদিকতায় ২৫বছর অতিক্রম উপলক্ষে গৌরনদী প্রেসক্লাবের রজতজয়ন্তী পদক ও ২০০৫ সনে সাহসিকতা পদক লাভ করেন।
২০০৯ সনে সাংবাদিকতায় অবদান রাখার জন্য ভাষা সৈনিক কাজী গোলাম মাহাবুব পদক লাভ করেন। গৌরনদী প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কিছুদিন পরেই তিনি প্রেসক্লাবের সদস্য পদ লাভ করেন।
১৯৮৫ সনে প্রেসক্লাবের সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সন থেকে ১৯৯৭ এবং ১৯৯৯ সন থেকে ২০০৩ সন পর্যন্ত তিনি সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। গৌরনদী প্রেসক্লাব ও গৌরনদী সাংবাদিকতাকে মর্যাদার আসনে সু-প্রতিষ্ঠিত করতে তার অবদানের কথা স্মরনীয় হয়ে থাকবে। অরাজনৈতিকভাবে পেশাজীবি মনোভাব নিয়ে সততা, নিষ্ঠার সাথে দল নিরপেক্ষ সাংবাদিক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। ভাল কাজে ও মানুষের কল্যানে দল মতের উর্ধ্বে থেকে কাজ করে আজ তিনি গৌরনদীর সর্বস্তরের মানুষের কাছে সমাদৃত হয়েছেন।
বরেন্য সাংবাদিক জহুরুল ইসলাম জহিরের সাংবাদিকতায় ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২৮ মে গৌরনদী পৌর নাগরিক পরিষদ ও বন্ধু সভার যৌথ উদ্যোগে এক বর্নাঢ্য সংবর্ধনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। গৌরনদী উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি গণসংবর্ধনায় পরিনত হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতেই সাংবাদিক জহিরকে ফুলের তোরা উপহার দিয়ে সংবর্ধিত করেন গৌরনদী ডটকম, নাগরিক পরিষদ, ছাত্র সংসদ, শিশু একাডেমী, অটোটেম্পু শ্রমিক ইউনিয়ন, ব্যবসায়ী সমিতি, বন্ধুসভা, ইউসিসি লিঃ, সু-শাসনের জন্য নাগরিক (সুজন), আওয়ামীলীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সাংবাদিকসহ বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দরা। পরে তাকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সম্মননা ক্রেষ্ট প্রদান করা হয়।
প্রায় দু’ঘন্টাব্যাপী সংবর্ধনা শেষে আলোচনা সভায় পলাশ তালুকদারের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন সরকারি পটুয়াখালী কলেজের অধ্যক্ষ ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবীদ প্রফেসর নুর মহাম্মদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন গৌরনদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ নুরুল ইসলাম-পিপিএম সরকারী গৌরনদী কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন, সাবেক উপাধ্যক্ষ ও গৌরনদী প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, বিশিষ্ট রাষ্ট্র বিজ্ঞানী প্রফেসর ফ.ম শামছুল আলম। বক্তব্য রাখেন গৌরনদী প্রেসক্লাবের সভাপতি মোঃ আসাদুজ্জামান রিপন, সাবেক সভাপতি মোঃ গিয়াস উদ্দিন মিয়া, ইউপি চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু, কৃষ্ণ কান্ত দে, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার মোঃ মনিরুল হক, চন্দ্রদ্বীপ সাহিত্য সমাজের সম্পাদক কবি সিকদার রেজাউল করিম, কাল্বের ডিরেক্টর রাসেদুজ্জামান ঝিলাম, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সৈয়দ মাহাবুব আলম, পপুলার লাইফ ইন্সুরেন্সের ডিজিএম মনিরুজ্জামান চুন্নু প্রমুখ।
শেষে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। ৩০ বছর পেরিয়ে ৩১ বছরে পর্দাপন করায় আমরা বরেন্য সাংবাদিক জহুরুল ইসলাম জহিরের আগামির ভবিষ্যত আরো উজ্জল ও তার দীর্ঘায়ু কামনা করছি।