চলতি সপ্তাহেই ঘোষনা হচ্ছে বরিশাল জেলা বিএনপির কমিটি

অবশান হতে চলেছে। চলতি সপ্তাহেই ঘোষনা করা হবে জেলা বিএনপির কমিটি। সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামাল সভাপতি ও সাবেক এমপি বিলকিস জাহান শিরিন কে সম্পাদক করে ঐ কমিটি চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রিয় কমিটির একটি সূত্র।

দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বিদেশ সফরের পূর্বেই বরিশাল জেলা বিএনপির এই কমিটি চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে সূত্রটি নিশ্চিত করেছে। এর বাইরে দীর্ঘদিন যাবৎ সভাপতি পদের জন্য এই কমিটিতে জোর লবিং ও তদ্বির চালিয়েছেন আহসান হাবিব কামালের পাশাপাশি সাবেক এমপি আবুল হোসেন খান ও ওবায়দুল হক চান। আর সম্পাদক পদের জন্য লবিং করছেন সাবেক এমপি বিলকিস জাহান শিরিনের পাশাপাশি এ্যাড নজরুল ইসলাম খান রাজন ও আব্দুর রহমান তপন। তথ্যঅনুযায়ী, ২০০৪/০৪ সালে বিএনপি জামাত জোট সরকার ক্ষমতার আমলে বরিশাল নগরীর এ.কে স্কুলে সর্বশেষ সম্নেলনের মাধ্যমে এখানকার জেলা বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিতে এ্যাড.মজিবর রহমান সরোয়ারকে সভাপতি ও এ্যাড. নজরুল ইসলাম রাজনকে সাধারন সম্পাদক করে ওই কমিটি গঠন করা হয়। যে কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ন হয় ২০০৫/০৬ সালে। সেই থেকে অদ্যবদি মেয়াদ উত্তীর্ন কমিটি দিয়েই চলছে বরিশাল জেলা বিএনপির কার্যক্রম।

দল ক্ষমতায় থাকতেই একের পর এক গ্রুপিং এর জন্ম নেয় বিএনপির রাজনীতিতে। ০৬ সালের ওয়ান ইলেভেনের পর পট পরিবর্তন ঘটে বিএনপির রাজনীতিতে। বিএনপি থেকে বহিস্কৃত নেতা সাবেক মহানগর সভাপতি আহসান হাবিব কামালের বহিস্কার আদেশ প্রত্যাহার করে নেয়ার পর প্রকট আকার ধারন করে বরিশাল বিএনপির গ্রুপিং রাজনীতি। যা পরবর্তীতে রক্তক্ষয়ী সংঘাতে রুপ নিয়ে মামলা মোকাদ্দমা পর্যন্ত গড়ায়। প্রথম থেকেই জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মজিবর রহমান সরোয়ার ও আহসান হাবিব কামাল দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে স্ব-স্ব গ্রুপের নেতা-কর্মীদের নিয়ে দীর্ঘ দিন যাবৎ ভিন্ন ভিন্ন ভাবে দলীয় কর্মসূচি পালন করছে। তৎকালীন শহর শাখার সাবেক সভাপতি আহসান হাবিব কামাল মহানগর কমিটির সভাপতি পদের দাবীতে ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে শেষ পর্যন্ত ব্যার্থ হয়। একইভাবে জেলা বিএনপির সভাপতি এ্যাড. মজিবর রহমান সরোয়ার বাগে নিতে সক্ষম হয়  মহানগর বিএনপির সভাপতির পদটি। পরবর্তীতে এই কমিটি গঠন নিয়ে কেন্দ্রেও দেখা দেয় জটিলতা। পরে বিএনপির হাই কমান্ড আহসান হাবিব কামালকে জেলা সভাপতির পদ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কমিটি ঘোষনার নকশা চূড়ান্ত করা হয়। কিন্তু সম্পাদক পদে কে আসীন হবেন এ নিয়ে কিছুটা রহস্য থেকেই যায়। সর্বশেষ বিলকিস জাহান শিরিনকে সম্পাদক পদে চূড়ান্ত করে কমিটি অনুমোদন করা হয়েছে। কামালকে সভাপতি পদে আসীনের খবরে কিছুটা আশ্বস্ত হলেও সম্পাদক পদে কামাল পন্থিদের কেউ না থাকায় কামাল গ্রুপের জটিলতা বর্তমানে জটিল রুপ ধারন করেছে কামাল পন্থিদের মধ্যে। প্রথম দিকে নজরুল ইসলাম রাজনকে জেলার সম্পাদক পদে আসীন করার কথা থাকলেও পরে ভিতরে ভিতরে ওবায়দুল হক চানকে সমার্থন দেন আহসান হাবিব কামাল। পরে চাঁনকে সমর্থনের বিষয়টি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় কেন এরকম প্রতারনা করছেন এ মর্মে কামালকে সরাসরি প্রশ্ন তুলেন বিক্ষুদ্ধরা। বিক্ষুব্দদের মধ্যে রয়েছে যুবদলের কেন্দ্রীয় সদস্য মোমিন শিকদার, মহানগর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড.মহসিন মন্টু সহ কামাল সমর্থক ছাত্রদলের অধিংকাংশ নেতারা। বিদ্রোহে একাত্মতা প্রকাশ করে কামালের বিরুদ্ধে নিরব প্রতিবাদ জানায়েছে নগরীর ২৫ টি ওয়ার্ডের নেতা-কর্মীরা। ক্ষোভের বিষ্ফোরন জানান দেয়া হয় বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জৈষ্ঠ পুত্র তারেক জিয়ার  কারা মুক্তি দিবস পালনের কর্মসূচীতে অংশ গ্রহন না করে। ফলে আহুত কর্মসূচী পালনও সে সময় ভেস্তে গিয়েছিল।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির একটি সূত্র জানায়, দলের চেয়ার পার্সন বেগম খালেদা জিয়া লন্ডন সফরের পূর্বেই বরিশাল জেলা কমিটির খসরা চূড়ান্ত করে যান। তিনি দেশের বাইরে থাকায় এই কমিটি ঘোষনায় বিলম্ব হয়। সফর শেষে তিনি দেশে ফিরায় যা এখন শুধু ঘোষনার অপেক্ষায়।

বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাড. মজিবর রহমান সরোয়ার এ সম্পর্কে জানান, যে কোন মুহুর্তে ম্যাডাম বরিশাল জেলা বিএনপির কমিটি ঘোষনা করতে পারেন। তিনি বলেন ইতিমধ্যে কমিটির খসরা চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে কমিটিতে কে কে আসছেন এ প্রশ্নের জবাব তিনি এরিয়ে যান।

বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক রিজভী আহম্মেদ কমিটি ঘোষনার দিনক্ষন স্পষ্ট করে না বললেও যে কোন সময় ঘোষনা হওয়ার পূর্বাভাস দেন। তার মতে সব কিছু ঠিকঠাক রয়েছে এখন শুধু ঘোষনার পালা।