নানকের নাম ভাঙ্গিয়ে যুবলীগ নেতা নিজামের চাঁদাবাজী

মেয়র শওকত হোসেন হিরনের নাম ভাঙ্গিয়ে বরিশাল মহানগর যুবলীগের আহবায়ক নিজামুল ইসলাম নিজামের বিরুদ্ধে চাঁদাদাবীর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে এলাকায় সম্পত্তি ক্রয় বিক্রয় করতে গেলে তাকে বাধ্যতামূলক চাঁদা দিতে হচ্ছে। অনুরূপ সম্পত্তি বিক্রি করায় ডাঃ হুমায়ুন কবিরের নিকট ৫ লাখ টাকা চাঁদা চেয়ে হুমকী দিয়েছেন। বিষয়টি প্রশাসনকে অবহিতও করা হয়েছে।

জানা গেছে, গত বছরের ১১ অক্টোবর  ডাঃ হুমায়ুন কবির নগরীর ফকির বাড়ি রোডের ০.৭ শতাংশ জমি চরকাউয়া এলাকার  মৃত্যু এছাহাক আলীর পুত্র আমিনুল ইসলাম মুন্সীর নিকট বিক্রি করেন। সম্পত্তিতে তিন তলা ভবন রয়েছে। যার নিচ তলায় দুটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সম্পত্তি বিক্রির সময় চুক্তিতে বলা হয় দাতা ভাড়াটিয়া তুলে দিয়ে সম্পত্তি গৃহীতাকে বুঝিয়ে দিবে। চুক্তিনুযায়ী দাতা হুমায়ুন কবির ভাড়াটিয়াদের ভবন ত্যাগ করতে তিন মাসের সময়সীমা বেধে দেয়। কিন্তু সম্পত্তি বিক্রির মাস ছয়েক অতিক্রম হলেও ভাড়াটিয়ারা ভবন ত্যাগ করেন নি। একই সঙ্গে কোন ভাড়া টাকাও পরিশোধ করেন নি। মুলত ভাড়াটিয়াদের সেখানে থাকার জন্য শেল্টার দিয়ে আসছেন মহানগর যুবলীগের আহবায়ক সাবেক কমিশনার নিজামুল ইসলাম নিজাম ও ১৭ নং ওয়ার্ডের বর্তমান কমিশনার নব্য আ’লীগ নেতা আকতারুজ্জামান হিরু। নেপথ্যে রয়েছে এই দুই নেতার মোটা অংকের চাঁদাদাবীর বিষয়টি। তারা ডাঃ হুমায়ুনকে বলেছে তার এলাকায় সম্পত্তি বিক্রি করতে হলে তাদেরকে বখড়া দিয়ে করতে হবে। নচেৎ সেই বিক্রিত সম্পত্তি কেউ ভোগ দখল করতে পারবে না। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার  দুপুরে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের নগরীর পৌর সুপার মার্কেটের অফিসে এক বৈঠকে বসে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ক্রেতা আমিনুল ইসলাম মুন্সী,বিক্রেতা হুমায়ুন কবির, যুবলীগ নেতা নিজামুল ইসলাম নিজাম ও কাউন্সিলর আকতারুজ্জামান হিরু, কালীবাড়ি রোডের ব্যবসায়ী মাহেদুর রহমান সুমন। বৈঠকে নিজাম বলেছে এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক ও বিসিসি মেয়র শওকত হোসেন হিরনও আমাকে না জিজ্ঞাসা করে এই এলাকার জমি ক্রয় বিক্রয়ের কোন সিদ্ধান্ত নেন না। তিনি বলেন জমি’র ক্রেতাকে ৫ লাখ টাকা দিতে হবে। নির্ধারিত টাকা না দেয়া পর্যন্ত জমির দখল নিতে দেয়া হবে না। এসময় কাউন্সিল হিরু যুবলীগ নেতা নিজামের কথার সঙ্গে একাতœতা প্রকাশ করেন। কাউন্সিলর হিরুও সভায় বলেছেন ধার্যকৃত টাকা দেয়া হলেই সম্পত্তি দখলে নিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। ওদিকে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে জমির বিক্রেতা হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে সম্পত্তিতে বসবাসরতদের সরিয়ে দেয়া প্রসঙ্গে বরিশাল কোতোয়ালী মডেল থানায় সাধারন ডায়রী করেছেন। যার নং-১১০। থানায় ডায়রী হিসাবে অন্তভুক্ত হওয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান জানান ঘটনাস্থলে গিয়ে আলাপাকালে ভাড়াটিয়ারা বলেছে বিক্রেতা হুমায়ুন কবির আমাদেরকে সপ্তাহখানেক আগে মৌখিকভাবে জানিয়েছে। কিন্তু লিখিতভাবে ভবন ত্যাগ করার নোটিশ দেননি। তদন্তকারী কর্মকর্তা আরো জানান বিক্রেতা সম্পত্তি বিক্রির পর তাদেরকে তিনি মাসের মধ্যে চলে যেতে বলেছে। ভাড়াটিয়ারা এখন মিথ্যার  আশ্রয় নিচ্ছে বলে তদন্তকারী কর্মকর্তা মন্তব্য করেন। ক্রেতা আমিনুল ইসলাম জানান সম্পত্তি কিনে এখন বিপাকে পড়েছি। এখনও সম্পত্তির ভবন থেকে বসবাসরত লোকজন যাচ্ছে না। যুবলীগ নেতা নিজাম ও কাউন্সিলর বসবাসরতদেরকে ভবন ছেড়ে চলে যেতে নিষেধ করেছে। কারন নিজাম আমার নিকট মোটা অংকের চাঁদা ধার্য করেছে। তিনি আরো বলেন নিজাম ও হিরু ক্ষমতাসীন দলের লোক। তারা নিজেদেরকে জাহির করেন মন্ত্রী ও মেয়রের আস্তাভাজন। এজন্য তারা যে সিদ্ধান্ত দিবে সেটাই মেনে নেয়ার হুমকী দেন। এখানকার প্রশাসনও নাকি তাদের কথায় চলে। বিক্রেতা ডাঃ হুমায়ুন কবির বলেন এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী ও বিসিসি মেয়রের নাম ভাঙ্গিয়ে নিজামুল ইসলাম নিজাম তাকে বলছে নগরীর কোন বিষয়ে আমার সিদ্ধান্তের বাইরে প্রতিমন্ত্রী নানক ও মেয়র হিরনও  সিদ্ধান্ত নেয় না। সুতারং আমি যেটা বলব সেটা করতে হবে। এজন্য ক্রেতা কর্তৃক কমপক্ষে পাঁচ লাখ টাকা তাকে দিলেই ভবনে বসবাসরত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের লোকজনদেরকে সরিয়ে দেয়া হবে।

এদিকে যুবলীগ নেতা নিজামুল ইসলাম নিজাম জানান কাউন্সিলর হিরুর অফিসে জমি সংক্রান্ত বিষয়ে এক বৈঠক হয়েছে। তবে কারো নিকট কোন চাঁদার টাকা দাবী করা হয়নি বলে জানান। কাউন্সিলর আকতারুজ্জামান হিরু বৈঠকের সত্যতা স্বীকার করে জানান সম্পত্তিতে বসবাসরতদের তো সময় দিতে হবে। ভবনের নিচ তলায় দু’টি দোকান রয়েছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তো হঠাৎ করে পরিবর্তন করা যায় না।  ভবনে বসবাসরতদের সরিয়ে দিতে দিনক্ষন নির্ধারন করা হবে। তিনি আরো বলেন সম্পত্তি ক্রয় বিক্রয়ে তার এলাকায় কোন চাঁদাবাজী কিংবা চাঁদাদাবীর কোন ঘটনা ঘটছে না। আর এতে আমার সম্পূক্ততা থাকার তো কোন প্রশ্নই আসে না।