রাজাপুর সোহাগ ক্লিনিকে অপচিকিৎসার শিকার মাহফুজা

বা-চাচা এমন আর্তনাতে গতকাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠেছিল। মাহফুজার স্বজনদের কান্না দেখে পার্শ্ববর্তী লোকজনও থমকে যায়। লোকজন হারিয়ে ফেলেছে কান্নার ভাষা। দাঁড়ানো লোকজন সান্তনা দেয়ার ভাষা খুঁজে পায়না। রাজাপুর সোহাগ ক্লিনিকে অপচিকিৎসার শিকার মাহফুজা মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। আত্মীয় স্বজনদের মুখে নেই হাসি। গতকাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লেবার ওয়ার্ডের বারান্দায় মাহফুজার বেড। স্বজনদের কান্নার রোল। এক স্বজনকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, গত রোববার অন্তঃস্বত্ত্বা মাহফুজাকে রাজাপুর সোহাগ ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। ওইদিন সন্ধ্যায় সিজারের মাধ্যমে ডেলিভারি করা হয়। সোমবার থেকেই মাহফুজা অসুস্থ হয়ে পড়ে। ক্রমেই অবস্থার অবনতি হলে সোহাগ ক্লিনিকের মালিক সোহাগ বলে এখানেই চিকিৎসা সম্ভব। মাহফুজার অবস্থা আরো অবনতি এবং ফুলে ওঠলে আত্মীয় স্বজনরা বৃহস্পতিবার সোহাগ ক্লিনিকের কাউকে না জানিয়ে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে নিয়ে এসে ভর্তি করেন। ভর্তির পরপরই কর্তব্যরত ডাক্তার প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষার আদেশ দেয়। পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয় মাহফুজাকে।

মাহফুজার বাড়ি রাজাপুর উপজেলার মানকি সুন্দর গ্রামে। স্বজনরা অভিযোগ করে বলেছে সোহাগ ক্লিনিকে একটি কসাইখানা। মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। তাদের কাছে টাকাটাই প্রধান। মানুষের জীবন বড় নয়। তারা আরো অভিযোগ করে বলেন, সোহাগ ক্লিনিকে এপেনডিস, সিজারসহ গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন করা হয় অথচ নেই অবস চিকিৎসক সহ কোন স্থায়ী ডাক্তার। রাজাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার এনে অপারেশনের নামে মানুষ কাটা ছেড়া করা হচ্ছে। এর আগেও একজন লোকের মৃত্যু হয়েছিল এই সোহাগ ক্লিনিকে। সোহাগ একের পর এক অপচিকিৎসা করে যাচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গ্রামের সহজ সরল মানুষ।

সরকারি অনুমোদন, পরিবেশ অধিদপ্তরের সনদ, স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমোদন ছাড়াই ব্যবসার জন্য সোহাগ ক্লিনিক চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এখানে নেই আবাসিক কোন নার্স ও ডাক্তার। এ ব্যাপারে সোহাগ ক্লিনিকের মালিক সোহাগের মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি জানান, মাহফুজার গেটে গ্যাস হয়েছে। এখানে সব চিকিৎসা হয় ন। কেউ ভাল হবে আবার অনেকের খারাপ হবে। তিনি বলেন, সরকারী অনুমোদন রয়েছে তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। সোহাগ বলেন, রাজাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তাররা এসে এখানে কাজ করেন।

মাহফুজার আত্মীয় মাওলানা আঃ আউয়াল জানিয়েছেন ২ ব্যাগ এ পজিটিভ রক্ত লেগেছে মাহফুজার অপারেশনে। এ রক্ত সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেক দৌড়ঝাপ করতে হয়েছে। মাহফুজার বাচ্চার অবস্থাও খারাপ। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, আমরা সোহাগ ক্লিনিকে গিয়ে অপচিকিৎসার শিকার হয়েছি। সোহাগ ক্লিনিক মানুষ মারার ক্লিনিক। আমরা ওখানে যেয়ে ভুল করেছি। তিনি সোহাগ ক্লিনিকে অপারেশন করার মত কোন রোগীকে ভর্তি না করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, যদি কেউ অপচিকিৎসার শিকার হতে চায় তাহলে সোহাগ ক্লিনিকে যেন ভর্তি হয়।