ঢাবি গেল রসাতলে নষ্টা-ছাত্রী-নেত্রী বানের জলে..

অপরাধ সকালে নেত্রীর বিছানা ও কাপড় চোপড় ধুয়ে ঠিক করে না রাখা।

ছাত্রীটি কাঁপা কাঁপা গলায় বলে, আপা আমার আজ পরীক্ষা ছিল, তাই সকালে সময় করতে পারিনি।

এক থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিব, মুখের উপর কথা বলিস। কোন লাট সাহেবের বেটি হয়েছিস, সময় করতে পারিসনি। হলে থাকলে চাইলে পরীক্ষা-টরীক্ষা বুঝিনা, যখন যা বলব তা করবি। যা সামনে থেকে, এখন গিয়ে সব ঠিক কর।

দৃশ্যপট-২
কেন্দ্রীয় এক নেতার ফোন। জি ভাইয়া, জি..। না ঠিক আছে, আমি নিজেই পাঠিয়ে দিব। আচ্ছা, রাত ১১ টার মধ্যেই পৌঁছে যাবে। সাথে একজনকে পাঠাব। সে আপনার কাছে আরো কয়েকবার গিয়েছিল। জি, জি, আপনি কোন চিন্তা করবেন না। কান্না-কাটি! না ভাইয়া, কান্নাকাটি করলে আমাকে সাথে সাথে বলবেন। লাথি দিয়ে হল থেকে বের করে দিব।

দৃশ্যপট-৩
এই তোরা সব আগামীকাল ১১ টায় চারুকলার সামনে আসবি। দেরি করলে কিন্তু অসুবিধা হবে। দেশরত্নের জন্মদিন। আনন্দ মিছিল হবে। এই তুই তো খুব বেড়ে গেছিস মনে হয়। গতবার মিছিলে আসিসনি কেন? আপা ক্লাস টেষ্ট ছিল। চুপ বেয়াদব! এটা কি মামাবাড়ির আবদার পেয়েছিস, ক্লাস টেষ্ট! আগামীকাল না আসলে চুলের ঝুটি ধরে বের করে দিব, মনে রাখিস!

দৃশ্যপট-৪
জয় বাংলা, জয়…বন্ধু! মিছিল শুরু। কিছুদুর যাওয়ার পর একটি ধাক্কা, পায়ের স্যান্ডেল খুলে যায়। ঠাস….!! সাথে সাথে থাপ্পড় আরেক নেত্রীর গালে। কিছু বুঝে উঠার আগেই চুলোচুলি শুরু। গালাগালি, চেচামেচি…। নেত্রীর চুল ধরে টেনে আরেকগ্রুপ মাটিতে শুইয়ে দিয়েছে। পায়ের নিচে দেশরত্নের ছবি। তুমুল মারামারি, চুলোচুলি, চেচামেচি, গালাগালি। গায়ের কাপড়-চোপড়ের অবস্থা তথৈবচ। নেত্রী গুরুতর আহত…

দৃশ্যপট-৫
হলে ফিরে নেত্রীকে আহত করার প্রতিবাদে নেত্রীর গ্রুপের মিছিল, প্রতিপক্ষ গ্রুপের কর্মীদের বহিঃস্কারের দাবীতে প্রভোষ্টের অফিস অবরোধ, ভাংচুর, প্রভোষ্ট লাঞ্ছিত! প্রক্টরের আগমন। প্রক্টরের সামনেই আবার দু'গ্রুপের চুলোচুলি শুরু, মারামারি। সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে প্রক্টর সহ কয়েকজন শিক্ষক আহত, লাঞ্ছিত। পুলিশের আগমন। ঘন্টা খানেক মারামারির পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।

দৃশ্যপট-৬
মারামারি, ভাংচুর ও শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনা তদন্তে ও দোষীদের বের করতে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিঠি গঠন, ৭ দিনের ভিতর রিপোর্ট প্রদানের নির্দেশ। ইতিমধ্যে বিবদমান গ্রুপ গুলো পরস্পরের বিরুদ্ধে দেহব্যবসা, নেতাদের মনোরঞ্জের জন্য ছাত্রীদের জোর করে পাঠানো, নির্যাতন, ফাও খাওয়া, মাদক ব্যবসা সহ নানা রকম অনৈতিক কাজের বর্ণনা দেয়া শুরু করেছে। বিভিন্ন পত্রিকায় তা নিয়মিত প্রকাশ হচ্ছে। এদিকে তদন্ত কমিঠি কয়েকবার সময় বাড়িয়ে সর্বশেষ প্রভোষ্ট, প্রক্টরের সামনে ঘটনা ঘটার পরও কাউকে চিহ্নিত করা করা সম্ভব হয়নি মর্মে রিপোর্ট পেশ, কিছু সুপারিশ!

দৃশ্যপট-৭
আপা হল কি মাদ্রাসা হয়ে গিয়েছে!? কেন? ২০৫, ৪৯৩, ৩২৩ নম্বর রুমে যারা থাকে তারা প্রতিদিন দেখি নামাজ পড়ে! মিছিলে যেতে বললে যায়না। আবার সবসময় মাথায় কাপড় দেয়, বোরকাও পরে! বলিস কি!? আগে জানাসনি কেন? কয়েকদিন চোখে চোখে রাখ, আর কারা কারা নিয়মিত নামাজ পড়ে তারও খবর নে, নেত্রীর নির্দেশ।
চলে যাওয়ার সময় নেত্রীর আবার ডাক, এই শোন, গতরাতে যে চেমরি গুলোকে বড় ভাইদের কাছে পাঠিয়েছিলাম তাদের খবর দিসনি কেন? পেমেন্টের খবর কি? আপা সব ঠিক আছে। শুধু দুজন নাকি বেশী কান্নাকাটি করেছিল। কোন দুটো? গোপালগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জের দুজন। এখনই গিয়ে থাপ্পড় দিবি। ন্যাকামি করে, না!? হলে থাকবে আবার কোথাও পাঠালে কান্না করবে। বেয়াদব কোথাকার!

দৃশ্যপট-৮
দু'জন ছাত্রীকে নামাজ রুম থেকে ধরে নেত্রীর কাছে নিয়ে আসা হয়েছে। আপা এ দুজনকে দেখলাম নামাজ রুমে বসে আছে। সাহস দেখেছেন?! আরো ৬ জনকে বিভিন্ন রুম থেকে ধরে আনা হয়েছে। তাদেরকে গেস্টরুমে আটক রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে। এর মধ্যেই প্রভোষ্টকে খবর দেয়া হয়েছে। প্রভোষ্ট, প্রক্টর হাজির। আটককৃতদের রুম সার্চ করা হলো, সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায়নি। তারপরও নেত্রীর হুকুম, তাদেরকে বহিঃস্কার করতে হবে। প্রভোষ্ট ও প্রক্টর নেত্রীর সাথে একমত হয়ে ৮ ছাত্রীকে হল থেকে বহিঃস্কার।

দৃশ্যপট-৯
ওফ! অনেক ধকল গেল। শোন, ওদের মতো আর কে কে আছে খোঁজ নিবি। নামাজ ও বোরকা পরা দেখলেই আমাকে খবর দিবি। এই তুই আমার বিছানা ঠিক কর। আর তুই আমার হাত-পা গুলো ম্যাসেজ করে দিবি। শরীর বেশী ক্লান্ত লাগছে…

দৃশ্যপট-১০
নেত্রীর নির্দেশে পর্দানশীল ও নামাজী ছাত্রীদের বের করে দেয়ার খবর..

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম রোকেয়া ও সামসুন্নাহার হল থেকে ৮ ছাত্রীকে হল থেকে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আজ সোমবার দুপুরে ওই ৮ ছাত্রীর সিট বাতিল করে হল থেকে বের করে দেয়া হয়। সেই ছাত্রীদের ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী ছাত্রী কর্মীদের কথা অনুযায়ী বহিঃস্কার করা হয়েছে। তাদের অপরাধ তারা বিকেলে হলের মাঠে বসে গল্প করছিল!! তাদের আরো কিছু অপরাধ আছে, তারা সবাই নিয়মিত নামাজ পড়ে, তারা পর্দানশীল!!! এই অপরাধে তাদেরকে হল থেকে বহিঃস্কার করা হয়েছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কে এম সাইফুল ইসলাম খান বলেন, ক্যাম্পাসে সহিংসতার আশঙ্কায় এদের হল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

সহিংসতার আশংকায় বহিঃস্কার?!! নামাজ পড়লে সহিংস হয়? পর্দা করলে সহিংস হয়? ছবিতে যাদেরকে দেখা যাচ্ছে তাদের কয়জনকে বহিঃস্কার করা হয়েছে? সেই ৮ জন ছাত্রীর অপরাধ তারা ছবির মতো মারামারি করেনা, চুলোচুলি করেনা? রাত বিরাতে কারো ডাকে বিভিন্ন জায়গায় যায়না? এসবই অপরাধ?!

-priyo.com