সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের কিন স্কুল ৭ বছর পেরিয়ে

বড়দের ক্যাম্পাসে ছোটরা পড়ালেখা করা এটা চাট্টিখানি কথা নয়। বিকেল হলেই হাতে বইয়ের ব্যাগ নিয়ে আসে ওরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের শতাধিক শিশু পড়ার জন্য আসছে প্রতিদিন। এমনিভাবে শত শত সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পদচারণায় মুখরিত হয় বিকেল বেলার কিন স্কুল। সারাদিন ক্লাস শেষে ক্লান্ত দেহ নিয়ে যখন একটু অবসর, একটু খেলার জন্য মাঠে যাওয়ার কথা। তখনই এসব শিশুরা আসে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘কিন’এর সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের স্কুলে। ‘চেনা হোক প্রতি মুখ শিক্ষার আয়নায়’ স্লোগানকে সামনে নিয়ে এ স্কুলে যাত্রা হয়েছিল ২০০৪ সারের ২১ ফেব্র“য়ারি। শুরুতে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের উৎসাহে স্কুলটি দীর্ঘ সাত বছর পূর্ণ করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনামধন্য শিক্ষক, জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক, বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের সরাসরি তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এ স্কুলে এসে শিশুরা শিখছে নুতন কিছু। যারা নিয়মিত স্কুলে যায় না তারাও এখানে আসে প্রতিদিন কারণ এখানকার শিক্ষকরা অনেক যত্ন নিয়ে তাদের পড়া শিখান। আর স্কুলের সবকিছুই ভালো লাগে এসব সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের। সেরকমই জানা গেলে সুমনের কথা থেকে। সুমন নগরীস্থ একটি বেসরকারি স্কুলের ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ে। আর ‘কিন’এর স্কুলে এসে তার কঠিন বিষয়গুলো সহজ সমাধান পাচ্ছে। সুমন জানায়, আমি মূলত গণিতের জন্যই এখানে আসি। মাঝে মাঝে ইংরেজিও বুঝে নিই। সুমনের মতো অনেকেই আসে বিকল্প শিক্ষকের সাহায্য নিতে। এখানে শিক্ষক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরাই স্বেচ্ছায় নিয়োজিত রয়েছে। এমনই একজন ইংরেজি বিভাগের ৪র্থ বষয় ২য় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী কিনের শিক্ষক লুবাবা রাহনুম বলেন, আমি অনেক দিন থেকেই ক্লাস নিচ্ছি। এসব শিশুদের কিছুটা হলেও সহযোগিতা করতে পেরে নিজের কাছে আনন্দ লাগছে। অন্যান্য শিক্ষকদেরও ছিল একই মত।  

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নানা আয়োজন : ’কিন’ এর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের ‘কিন স্কুল’-এর ৭ম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করা হয় নানা আয়োজনে মাধ্যমে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. সালেহ উদ্দিন এবং প্রফেসর. ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল স্কুলের শিশুদের সাথে নিয়ে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর কেট কাটেন। অনুষ্ঠানে ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. সালেহ উদ্দিন প্রধান অতিথির বক্তব্যে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, আমাদের সামনে অগ্রসর হতে হবে; তবে কাউকে পেছনে ফেলে নয়। দুখী-দরিদ্র-সুবিধাবঞ্চিত মানুষের উন্নয়নের চিন্তাও আমাদেরকে করতে হবে। কিন-এর সাথে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের ধন্যবাদ জানান তিনি। সেই সাথে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিন স্কুলের অবকাঠামো উন্নয়নসহ সম্ভাব্য সকল ধরনের সহযোগিতা করারও আশ্বাস প্রদান করেন। ’কিন’এর সভাপতি তানজিব হাসান জানান, কিনের স্কুলে শিশুদের পাঠদান দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আমাদের প্রচেষ্টা অব্যহত থাকবে। এক্ষেত্রে সবার সহযোগিতাও তিনি কামনা করেন।