আমরা কত অসহায়!

আমি বরিশালের হলেও এখন ঢাকার গর্বিত বাসিন্দা! আমি গ্রামে গেলে শুনেছি গ্রামের অনক বন্ধুরা বলে “মামা ঢাকা থেকে আইছ আইজকা কিন্তু চা- সগারেট খাওয়াবা” আমি জানিনা গ্রামের স্থায়ী ঐ সমস্ত  বন্ধুরা ঢাকা সম্পর্কে কি ধারনা পোষন করে! তারা নিচের লেখাটা পড়ে কিছু অনুভব করতে পারবে। যারা দেশের বাইরে আছেন তারা ভাববে গ্রমে কি Internate আছে? হ্যা আছে, আমার বন্ধু রাজ্জাক মাস্টার সহ অনেকেই আছে যারা এই ব্যপারে অগ্রগামী। আমি সাধুবাদ জানাই তাকে গ্রামে থেকেও সে নিজে শিখছে এবং অন্যকে শেখাচ্ছে, এটা লিখে বুঝালাম সময়ের অগ্রগামীতার কথা।

এবার মুল লেখায় আসি। ফার্মগেটে প্রতি দিনের মত দাড়িয়ে আছি, ১ ঘন্টার বেশি সময় হয়ে গেছে গাড়ির তেমন খবর নাই এমনিতে এখানে দারিয়ে থাকতে সমস্যা নাই কারন ১ যুগের ও বেশি সময়ের আড্ডা স্থান এটা, কোন না কোন পরিচিতকে পেয়ে সময় কেটে যায় গাড়িতেও স্বভাবিক ভাবে উঠতে পারি। কিন্তু বর্তমানে গাড়ি পাওয়া সোনার হরিন পাওয়ার মত। যাও দু একটা গাড়ি দেখা যায় তাও সিটিং সার্ভিস যেখানে নামবেন ১০ টাকা ভাড়া। দু একটা লোকাল গাড়িও আসছে কিন্তু তাতেও যুদ্ধ। ভারা একই রকম। আমার মত হাজার মানুষ অপেক্ষামান কিছু মহিলাও আমাদের মত দাড়িয়ে আছে। মেজাজ চরমে তার উপর প্রচুর গরম। রাত দশটার দিকে দু একটা করে লেগুনা নামক টেম্পু কিসিমের গাড়ি দেখা গেল। যার গায়ে লেখা মোহাম্মদপুর টু মিরপুর-১, বা মিরপুর-১ টু মহাখালি, সবাই উৎসাহ ওগুলোর দিকে আগাচ্ছে কেউ আবার নেমে যাচ্ছে। আমিও সাধারনের পথ অনুসরন করলাম। উঠতে গিয়ে বিপত্তির মুখে পরলাম। ভাড়া এখানেও ১০টাকা। অবাক হলাম ফার্মগেট থেকে মোহাম্মদপুরের দূরত্ব ২.৫-৩ কি.মি. পথ, যার বাস ভাড়া ২/১ মাস আগেও ৩টাকা ছিল। রাতরাতি দশ টাকা হয়ে গেল। ভয়াবহ অবস্থা, সবাই ক্ষুদ্ধ, তবু সহায় হরি, গাড়ি ভরে গেল। ক্ষুদ্ধ মানুষ প্রশ্ন করল। ১০টাকা ভাঢ়া কেন? উত্তরে হেলপার বলল, গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় ভাঢ়া বাড়ছে। এর পরের প্রশ্ন স্বাভাবিক ভাবেই আসে এটাতো এই রুটের গাড়ি না তাহলে এই রুটে কিভাবে চলছে। এর সদুত্তর তার কাছ থেকে পাওয়া গেলনা। পাবলিকও কথা বাড়াল না। এবার আমার মাথায় প্রসঙ্গিক কিছু প্রশ্ন উদয় হলো সেগুলো এমন, অন্য রুটের গাড়ি এই রুটে কিভাবে চলছে? এত কম পথে এত ভাড়া কিভাবে রাখছে? কারন এধরনের গাড়িতে একটা একটা কাগজ ঝুলাতে দেখেছি তাতে লেখা “সরকার তেল, গ্যাস, টায়ার এর মূল্য বৃদ্ধি করায় কি.মি. প্রতি ১.১০ পয়সার ভাড়া ১.৩৫ পয়সা নির্ধারন করা হলো এবং সর্বনিম্ন ভাড়া ৭ টাকা করা হলো”। এই বিজ্ঞাপনের কথা কি প্রশাষন জানে? এগুলো দেখভালের দায়ীত্ব প্রশাষনের না? তাই যদি হয় তারা কোথায়? তারা কি এসব দেখছেনা? তাহলে ধরে নিতে হবে প্রশাসন নাই থাকলেও ব্যর্থ।

গ্যাস এর মূল্য বৃদ্ধির ব্যাপারে প্রসঙ্গিক কিছু কথা বলি, গ্যাসের দাম কেন বৃদ্ধি করা হলো? সরকার নিজেদের আয় বৃদ্ধির লক্ষে তেলের দাম ২ টাকা সি.এন.জি গ্যাস এর দাম ঘনমিটার প্রতি ৮টাকা বৃদ্ধি করেছে, এতে সরকারের আয় কত বাড়বে? যদিও সরকার হিসাব দিয়েছে ১১০০ কোটি টাকার। কিন্তু যে দেশের ধনিরা ২১০০০ কোটি টাকা কর ফাকি দিচ্ছে, শত শত কোটি টাকা ঋন খেলাফি থাকছে সেদেশে তেল, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করে মানুষের ঘাড়ে চাপানো কতটুকু যুক্তিযুক্ত? এ ব্যাপারটা সুশিল সমাজ ভেবে দেখবেন। আর একটা ব্যাপার এ গ্যাসতো আমাদেরও জাতীয় সম্পদ, ইতিপূর্বে আমাদের বিগত দুই সরকারই এই সম্পদকে রফতানি করার জন্য উঠে পরে লেগেছিল। আমরা জানি কোন দেশের কোন সম্পদ তখনোই রফতানি করা যায় যখন তার পর্যাপ্ততা থাকে। আমরা বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে জেনেছি আমাদের দেশে গ্যাস এর সংকট আছে যার কারনে গত ১ যুগে গ্যাস এর মূল্য বেড়েছে কয়েক দফায় এবং এখন আবার গ্যাস এর মূল্য বৃদ্ধিও চক্রান্ত চলছে। এখানে দেখবার বিষয় গ্যাস যদি অপ্রতুল থাকে তাহলে সরকার তা রফতানি করতে চায় কিভাবে? আবার গ্যাস যদি রফতানি করার অবস্থায় থাকে তাহলে এর দাম বৃদ্ধি করে জনগনের ঘাড়ে চাপাবে কেন?

সরকার গ্যাস এর দাম বৃদ্ধি করে প্রথমেই ভাড়া বাড়িয়েছে সরকার নিয়ন্ত্রিত বি.আর.টি.সি বাসের, সাথে সাথে ভাড়া বাড়িয়ে অন্যান্য বাস মালিকরা। সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা, প্রসাঙ্গিক উদাহরন টানি মাত্র ৪/৫ বছর আগে ফার্মগেট থেকে ওয়ান লাইন নামক একটা গাড়িতে শিয়া মসজিদ যেতে ভাড়া লাগত ৩টাকা আর রংধনু নামক একটা গাড়িতে শিয়া মসজিদ থেকে শ্যামলি যেতে ভাড়া লাগত ৩টাকা। এখন উভয় রুটের ভাড়াই ১০ টাকা। বাজারের সবকিছুর মুল্য বৃদ্ধির সাথে সাথে গাড়ি ভাড়া, বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি যদি স্বাভাবিক হয়ে থাকে তাহলে আমাদের শ্রম মূল্যওতো বৃদ্ধি পাওয়া উচিৎ, কিন্তু মালিক পক্ষ এটা বৃদ্ধি করতে নারাজ। আমাদের সাধারনেরই এই করুন অবস্থা এবার ভেবে দেখুন দারিদ্র সীমার নিচে যারা আছে তাদের কি অবস্থা? সরকার কিন্তু এখন গার্মেন্টস শিল্পের শ্রমিকদের ন্যায্য ন্যূন্যতম বেতন কাঠাম মেনে নেয়নি। প্রতিদিন মিডিয়ায় সরকার এর উন্নয়নের কথা মালা শুনতে পাই কিন্তু তার বাস্তবায়ন কতদুর?

উন্নয়নের ধারার চরম অবস্থায় আমরা এমন অবস্থায় আছি। সবাই এবার ভাবুন সরকারের সাথে পুজিবাদিদের কত মিল? তারা সবাই একজোট হয়ে আমাদের পশ্চাদ দেশে লাথি মারছে, আর আমরা তা সহ্য করছি। জানি সরকার পরিবর্তন হবে আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হবেনা। অনেক আন্দোলন সংগ্রামে সিংহ ভাগ ভোটে যে সরকারের আগমন তারাও যখন জনগন নিয়ে এমন খেলা খেলে জনগন কোথায় গিয়ে দারাবে?

মাঝে মাঝে ভাবি মানুষ কত অসহায়, আমরা কত অসহায়!!!