ক্ষুব্ধ বেগম জিয়া – কাঠগড়ায় তিন আসামী

এর জন্য দায়ী তিন আসামীকে প্রেসের সামনে হাজির করেছেন গত ৩১মে। এই তিন জন হলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহউদ্দিন আহমেদ, ও স্পীচ রাইটার সাংবাদিক শফিক রেহমান। এরা পদে সিনিয়র হলেও তাদের মূল বক্তব্য দিতে দেয়া হয়নি। দলের একজন ভাইস চেয়ারম্যান উপস্থিত থাকলেও দলীয় চেয়ারপার্সনের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেছেন খালেদা জিয়ার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান।

১৪ মে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দু’সপ্তাহব্যাপী যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সফরে ঢাকা ছাড়েন। ছয় বছর পরে খালেদার এ সফর নিয়ে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা ছিলো সরকারী, বেসরকারী, ও গণমাধ্যমের মধ্যে। ব্যয়বহুল এ সফরের আউটপুট নিয়ে ইতোমধ্যেই নিজ দলীয় ফোরামে এবং সরকারী দল থেকে বেশ কথা উঠেছে। যার ফলে কথা থাকলেও বেগম জিয়া নিজের অফিসে আয়োজিত মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকেন নি।

এ সফর আয়োজনের দায়িত্বে ছিলেন দুই সাবেক কূটনীতিক। লন্ডন সফরের দায়িত্বে ছিলেন সাবিহউদ্দিন আহমেদ, যিনি চার দলীয় জোট সরকারের সময় যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার ছিলেন। আর আমেরিকা সফরের দায়িত্বে শমশের মবিন চৌধুরী যিনি যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন ২০০৭ সাল অবধি। ওয়াশিংটন সফরকালে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কর্তা ব্যক্তিদের সাথে সাক্ষাৎ আয়োজনের জন্য শমশের চৌধুরী ভাড়া করেছিলেন প্রভাবশালী কেইসি লবিষ্ট ফার্মকে। তারা ধারণা দিয়েছিলো খালেদার সাথে সাক্ষাৎ হবে আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারী ক্লিনটনের। আর প্রেসিডেন্ট ওবামার সাক্ষাৎ না পাওয়া গেলেও ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে কথা হবে। ঢাকাতে কেন্দ্রীয় বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে এবং নিউইয়র্কে বাংলাদেশ ককাস প্রধান কংগ্রেসম্যান জোসেফ ক্রাউলিও হিলারীর সাথে সাক্ষাৎ হবে এরূপ তথ্য মিডিয়ায় প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু ৪ দিন ওয়াশিংটনে থেকেও হিলারীর সাথে দেখা হয়নি খালেদার। প্রেসিডেন্ট ওবামা বা ভাইস প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সাথে সাক্ষাৎ না হলেও হোয়াইট হাউজের চার পাশ দিয়ে ঘুরে বেরিয়ে এসেছেন বেগম জিয়া। একই রকম অভিজ্ঞতা হয় লন্ডনে। সেখানে সাক্ষাৎ আয়োজনে প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত সাবিহউদ্দিনকে সহায়তা করেছেন প্রবীণ সাংবাদিক শফিক রেহমান, যার সাথে বৃটেনের বিভিন্ন প্রভাবশালীদের যোগাযোগ রয়েছে। কিন্তু এরা অতীব চেষ্টা করেও বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুন বা বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সময় জোগাড় করতে পারেন নি। তবে বৃটিশ পার্লামেন্টের কিছু এমপিদের ডিনার পার্টির অনুষ্ঠানের মধ্যমনি ছিলেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত এমপি রুশনারা আলী। পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির বান্ধবী রুশনারাকে দিয়ে এই প্রোগ্রামগুলি আয়োজন করেছেন শফিক রেহমান ও অগ্রবর্তী দলের অন্যান্যরা।

লন্ডন ও ওয়াশিংটন সফরের কূটনৈতিক ব্যর্থতা খালেদা জিয়াসহ দলের সিনিয়র নেতাদের ক্ষুব্ধ করে তুলেছে স্বাভাবিকভাবেই। তাদের মতে, দলে অনেক সিনিয়র নেতাদের সাথে ঐ দু’দেশের কর্নধারদের সুসম্পর্ক থাকলেও বেগম জিয়ার সফরের আয়োজনে তাদের ভূমিকা রাখার কোনো সুযোগ দেয়া হয়নি। বরং তড়িঘড়ি করে সাবেক আমলাদের দ্বারা আগোছালো একটি সফর করিয়ে বেগম জিয়ার ইমেজ খাটো করার চেষ্টাটি সফল হয়েছে দারুনভাবে। লন্ডন সফরে তারেক রহমানের সাথে তিনবছর পরে মা-ছেলের সাক্ষাৎ আর নিউজার্সি সিনেটে খালেদাকে বিল পাশ করে সম্মান জানানো ছাড়া দু’সপ্তাহে উল্লেখ করার মত আর কোনো অর্জন চোখে পড়েনি।

দেশে ফিরে গিয়ে নানা সমালোচনার মুখে বেগম জিয়া সফরের সাফল্য প্রচারের সংবাদ সম্মেলনে নিজে হাজির হননি। প্রেস সচিব মারুফ কামালের দায়িত্ব পড়ে এ কাজটি করার। আর তিনি তার ওজন বাড়ানোর জন্য পাশে রাখেন শমশের মবিন, সাবিহউদ্দিন, শফিক রেহমান, ও আব্দুল আউয়াল মিন্টুকে। সংবাদ সম্মেলন নিয়ে একইরূপ ঘটনা ঘটেছিলো নিউইয়র্কে। ২৭ মে সেখানে বেগম জিয়ার সংবাদ সম্মেলনের কথা বলে সকল মিডিয়াকে হাজির করানো হয়। কিন্তু সংবাদ সম্মেলনে বেগম জিয়া উপস্থিত না থেকে কথা বলেন তার সফরসঙ্গীরা। খালেদা জিয়া কেনো নাই এমন প্রশ্নের জবাবে বলা হয়- তিনি অসুস্থ। এটা একটা চিরাচরিত ডায়লগ দাবী করে সাংবাদিকরা উত্তেজিত হয়ে উঠলে উপায়šতর না দেখে তড়িঘড়ি করে বেগম জিয়াকে এনে হাজির করানো হয়।

খালেদা জিয়ার আপাতদৃষ্টে ব্যর্থ এ সফরের দায়িত্ব নিয়ে বক্তব্য রাখতে অনুরোধ করেও দলের কোনো ষ্টান্ডিং কমিটির সদস্যকে পাওয়া যায়নি। বরং মারুফ কামালের দাবী করা “দারুন সফল সফর” অলংকৃত করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত ভাইস চেয়ারম্যান শমশের মবিন চৌধুরী ও উপদেষ্টা সাবিহউদ্দিন আহমেদ। দলীয় প্রটোকলে চেয়ারপার্সনের প্রেস সচিবের কোনো অবস্থান নাই। তাকে একজন সহকারী হিসাবেই গন্য করা হয়। প্রেস কনফারেন্সসহ পাবলিক অনুষ্ঠানে দলের জ্যেষ্ঠ পদাধিকারী কথা বলবেন এমনটাই নিয়ম, প্রেস সেক্রেটারী সেক্ষেত্রে কেবল সাচিবিক সহায়তা করবেন। এ সংবাদ সম্মেলন করতে গিয়ে যে দৃশ্য দেখা গেছে, তাতে সাদা চোখে মনে হতেই পারে দলীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও উপদেষ্টার মত পদাধিকারী শমশের ও সাবিহউদ্দিন কি প্রেস সেক্রেটারীর অধীনস্ত ? এভাবেই বেগম জিয়ার সফর আয়োজক তিন মহারথীকে ব্যর্থতার শাস্তি দেয়া হলো বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকমহল।