টাকায় মেলে মেডিকেল সনদ!

নাম কেটে দেয়া ও টাকা দিলে সুস্থ্য ব্যক্তিকে মারাত্মক জখম বানিয়ে সনদ প্রদান করা হচ্ছে। প্রতিটি মেডিকেল সনদ বিক্রি হচ্ছে ৫শত টাকা থেকে ৩হাজার টাকায়। চিকিৎসকরা এরকম অসাধুপায় অবলম্বন করায় সাধারণ মানুষ চিকিৎসা সেবা ও ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং মামলার তদন্তে পুলিশকে পড়তে হচ্ছে চড়ম বেকাদায়। মেডিকেল সনদ নিয়ে এমনই বাণিজ্য চলছে মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

হাসপাতাল, পুলিশ ও ভূক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, আদালতে বা থানায় মামলা-মোকদ্দমা করতে হলে প্রমাণস্বরুপ মেডিকেল সনদের প্রয়োজন হয়। এমনকি এটি বিশেষ ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলকও। এই সুযোগে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা মশিউর রহমান এবং আবাসিক মেডিকেল প্রতিনিধি শামিম চৌধুরী রোগীদের মেডিকেল সনদ প্রদানে হাতিয়ে নিচ্ছেন হাজার হাজার টাকা। টাকা ছাড়া যেন মেডিকেল সনদ পাওয়াই যায় না। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়া হয়। রোগীর আত্মীয়-স্বজনদের সাথে মেডিকেল সনদ বিষয়ে ডাক্তার-নার্স-কর্মচারীদের সমন্বয়ে গঠিত সিন্ডিকেট লেনদেন করে থাকে। টাকা নেয়ার প্রতিবাদ করা হলে সনদ প্রদান করা হয় না। আবার হাসপাতালে ভর্তি না হয়েও টাকার বিনিময়ে মিলছে মেডিকেল সনদ। সংঘর্ষ, নির্যাতন বা শত্র“তামূলক কোন কারনে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে তখন মেডিকেল সনদ বাণিজ্য হয় প্রকাশ্যেই। প্রভাবিত হয়ে ডাক্তাররা মেডিকেল সনদ দেয়ায় মামলার তদন্তে পুলিশকে হিমশীম খেতে হয়।

সূত্র জানায়, উপজেলার বালিগ্রাম ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ২০১০সালের ১জুলাই নিয়োগ পান ডা. শামীম আহম্মেদ। কিন্তু তিনি একদিনের জন্যও ওই উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে যাননি। অবশেষে ঐ বছরেরই ডিসেম্বর মাসে তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান। তার স্ত্রী ডা. সায়েমা আফরোজ গোপালপুর ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিযুক্ত থাকলেও তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়োজিত রয়েছেন। শামীম চৌধুরী স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা মশিউর রহমানের সহযোগীতায় ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্ণীতি করে যাচ্ছেন দেদারছে।

উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ডের পরিষদ সদস্য আবদুল হালিম হাওলাদার বলেন, ‘কিছুদিন পূর্বে আমার এক আত্মীয় হাসপাতালে ভর্তি থাকলে মামলার জন্য মেডিকেল সনদ প্রয়োজন হলে ডাক্তার শামীম চৌধুরীর কাছে যাই। টাকা না দেয়ায় তিনি সনদের জন্য ১৫/১৬দিন আজ দেই কাল দেই বলে ঘুরাতে থাকেন। পরে নুর ডায়াগনেষ্টিক সেন্টারে সনদের বিষয়ে জানতে গেলে শামীম চৌধুরী আমাকে লাঞ্চিত করেন এবং সনদ না চাওয়ার জন্য শাসিয়ে দেন।’

গত ২জুন পৌর এলাকার লক্ষীপুর গ্রামে বিয়ে বাড়িতে সন্ত্রাসী হামলা একই গ্রামের জব্বার শরীফ(৪৫) মারাত্মক আহত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়। শারীরিকভাবে অত্যন্ত দুর্বল হওয়ায় তিনি এখনো বসে বা দাড়িয়ে থাকতে পারেন না। এদিকে প্রতিপক্ষের প্ররোচণায় আবাসিক মেডিকেল প্রতিনিধি শামীম চৌধুরী তার নাম কেটে হাসপাতাল থেকে বের করার চেষ্ঠা করেন। বিষয়টি মিডিয়া কর্মীরা জানলে স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা মশিউর রহমান ঐ রোগীর ভর্তি বহাল রাখেন। টাকার জন্য চিকিৎসা সেবা ও মেডিকেল সনদ নিয়ে এমন ঘটনা ঘটছে অহরহ।

কালকিনি থানার অফিসার ইনচার্জ এ কে এম শাহীন মন্ডল বলেন, ‘অনেক সময় মেডিকেল সনদের সাথে ঘটনার মিল পাওয়া যায় না। সনদ শুধুমাত্র ঘটনা ঘটছে তার প্রমাণ। কিন্তু ঐ সনদ কোন কারনে কীভাবে লেখা হয় তা বিগত অনেক ক্ষেত্রেই সকলের জানা হয়ে গেছে।’

টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা মশিউর রহমান এবং আবাসিক মেডিকেল প্রতিনিধি শামীম চৌধুরী বলেন, ‘পুলিশ চাইলে আমরা মেডিকেল সনদ দেই। এখানে রোগী বা রোগীর আত্ময়ীয়-স্বজনদের সাথে কথা বলার কোন সুযোগ নেই। আর টাকার প্রসঙ্গ ওঠা নিত্যন্তই অমূলক।’