বরিশাল আওয়ামীলীগে কাঁদা ছোঁড়াছুড়ি

নেত্রবৃন্দদের ধরে ধরে মারধর ও অপমানের পর্ব। তবে এবার একটু ভিন্ন আঙ্গিকে অপমান করার কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। সিনিয়র এক নেতাকে লাঞ্চিত করার উপহার স্বরুপ ঘোষনা করা হয়েছে ১০লক্ষ টাকা। জেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক মিলন ভূইয়া ও যুগ্ন আহবায়ক কাজী মনিরুল ইসলাম তারিককে অপমান অপদস্থ করার পর এবার বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক মহানগর আ’লীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য  তারিক বিন ইসলামকে ঘিরে এই অপমান অপদস্থ করার ঘোষনা দেয়া হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে বিসিসি মেয়র শওকত হোসেন হিরনের ইঙ্গিতেই বরিশাল আ’লীগ এই নোংরা রাজনীতি চলছে। ফলে পালাক্রমে হিরন পন্থি ছাত্রলীগ নেতাদের এবার টার্গেট তারেক বিন ইসলাম। সর্বশেষ হিরন পন্থিদের হাতে লাঞ্চিত ২ নেতার দাবী, এ সবই মেয়র হিরনের ষড়যন্ত্র। তার বশ্যতা বা আনুগত্য স্বীকার না করায় এসব ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে দাবী তাদের। তাদেরকে লাঞ্চিত করার বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা ওয়াসিম দেওয়ান জানান, সেদিন আমাকেও হিরন সমর্থিত সেই গ্রুপটি লাঞ্চিত করেছিল। ওয়াসিম আরও জানান, বিভিন্ন কৌশলে মেয়র শওকত হোসেন হিরন তার দলের ক্যাডার দিয়ে হাসানাত পন্থিদের অপমান অপদস্থ বা মারধর করাচ্ছেন। প্রমান স্বরুপ তিনি বলছেন, ইতিপূর্বে বাকেরগঞ্জের ছাত্রলীগের কমিটিকে কেন্দ্র করে বিএম কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ন আহবায়ক মঈন তুষার ও নাহিদ সেরনিয়াবাদের নেতৃত্বে এক দল ছাত্রলীগ ক্যাডার ফকির বাড়ি রোডের একটি চেম্বারে ঢুকে হামলা চালিয়েছিল কাজী মনির উদ্দিন তারিকের উপরে এবং তার ঠিক আধ ঘন্টা পর হাসপাতাল রোড এলাকার হোটেল প্যারাডাইসের সামনে মারধর করাছিল মিলন ভূইয়াকে। ওই দিন অর্ধশত মটরসাইকেল মহড়ায় তারিক বিন ইসলামকে খুঁজে বেড়িয়েছিল। তাদের টার্গেট ছিল তারিক বিনকে পেলে নির্যাতন করে স্টাম্পে স্বাক্ষর রাখা। যাতে আর কখনো তারিক বিন ইসলাম তাদের বিরোধিতা না করে। অর্থ্যাৎ তারিককে বাধ্য করবে হিরনের বশ্যতা স্বীকার করা। এক্ষেত্রে হিরন গ্রুপে ভীড়ে যেতে হবে নচেৎ রাজনীতিতে নিরব ভূমিকা থাকতে হবে তারিককে।

এ বিষয়ে আ’লীগের যুগ্ন আহবায়ক এ্যাডঃ আফজালুল করিম জানিয়েছেন, মিলন ভূইয়া ও কাজী মনির উদ্দিন তারিককে লাঞ্চিত করার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন কারা হয়েছে। কমিটির দায়িত্বশীলরা হলেন- জেলা যুব লীগের সভাপতি জাকির হোসেন, বি এম কলেজের সাবেক ভিপি আনোয়ার হোসেন, মেজবাহ উদ্দিন জুয়েল এবং খান মামুন। ১৫ দিনের মধ্যে তাদেরকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। আগামি ৩/৪দিনের মধ্যে প্রতিবেদন হাতে আসলে আ’লীগের কর্নধর আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এর নির্দেশ অনুযায়ী ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে। তবে কেন তারেক বিনকে লাঞ্চিত করার এ ঘোষনা দেয়া হয়েছে এ নিয়ে তদন্ত করতে গেলে জানা যায় ভিন্ন আরেকটি খবর। মেয়র হিরন সমার্থকদের একটি সূত্র দাবী করেছেন, টেন্ডারের মাধ্যমে জাইকা প্রকল্পের ২ কোটি ৪০ লক্ষ টাকার হিজলার একটি রাস্তা ও কালভাটের কাজ গুছ প্রক্রিয়ায় ভাগিয়ে নিয়েছেন তারিক বিন ইসলাম। কিন্তু এলজিডির সহঃ ইঞ্জিনিয়ার রুহুল আমিন জানিয়েছেন ভিন্ন কথা। তিনি জানান, জাইকা প্রকল্পের কোন কাজ গুছ প্রক্রিয়ায় হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। সেটি ছিল ওপেন টেন্ডার। তারিক বিন এ আর খান এন্ড কোং এন্টারপ্রাইজের মাধ্যমে সিডিউল কিনেছিলেন। কিন্তু তিনি কাজটি পাননি। কাজটি সর্বনিম্ন লেচে পেয়েছেন তনিমা এন্টারপ্রাইজের পিন্টু সাহেব।

ও দিকে তারিক বিন ইসলামকে পুরুষ্কার ঘোষনার মাধ্যমে লাঞ্চিত হওয়ার খবরে বরিশাল জেলাধীন বিভিন্ন উপজেলার সাবেক ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হচ্ছেন, মুলাদী উপজেলার সাবেক ছাত্রলীগ নেতা কামাল পাশা, ইকবাল আজাদ, আল হাসানাত জাপান, বাবুগঞ্জ উপজেলার মোস্তফা কামাল চিশতি, ইকবাল আজাদ, এ্যাডঃ সামসুজ্জামান সোহেল, হাসানুর রহমান হাসান। হিজলা উপজেলার মোঃ এনায়েত হাওলাদার কাজী লিয়াকত, বানরীপারা উপজেলার সুব্রত লাল কুন্ডু, জাকির সরদার, ইকবাল হোসেন মনিরম বাকেরগঞ্জ উপজেলার লোকমান হেসেন ডাকুয়া, মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার রামকৃষ্ঞ দেবনাথ সহ অনেকে। ও দিকে হাসানাত সমর্থিত একটি সূত্র জানিয়েছে, হিরন সমর্থিত যে গ্রুপটি পূর্বে লাঞ্চিত করার ঘটনা ঘটিয়েছে সেই গ্রুপটি-র দ্বারাই এবার তারিক বিন ইসলামকে অপমান অপদস্থ করানোর সম্ভাবনা রয়েছে।

এ বিষয়ে মহানগর ছাত্রলীগের মিলন ভূইয়া জানান, আমিও শুনেছি এ ধরনের একটি ষড়যন্ত্র চলছে তবে আমি মনেকরি তারিক বিন ইসলামকে অপমান করা মানে বরিশাল আ’লীগকে অপমান করা। এর পূর্বে আমাকে এবং আমার যুগ্ন আহবায়ক কাজী তারিককে মারধর করা হয়েছে। তবে আপনারাই ভাবেন এটা কেমন রাজনীতি। যুগ্ম আহবায়ক কাজী মনির উদ্দিন তারিক জানান, মেয়র হিরন সবকিছুর নাটের গুরু। তার ইন্ধনে বরিশালে সব কিছু হচ্ছে।

মহানগর ছাত্র লীগের যুগ্ন আহবায়ক তৈহিদুর রহমান ছাবিদ জানান, সবে তো শুরু হয়েছে। কোনদিন যেন আমাদের ও ঘর থেকে টেনে নিয়ে মারধর করা হয়। বিএম কলেজের যুগ্ন আহবায়ক মঈন তুষার ও নাহিদ সেরনিয়াবাদ জানান, আমরা এ ধরনের কোন বিষয় জানিনা এবং শুনিওনি। তবে এ বিষয়ে তারিক বিন ইসলাম জানান, আমিও বিষয়টি কয়েকদিন আগে শুনেছি। কাউকে অপমান করার রাজনীতি কারো জন্যই ভাল না। এতে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আরও জানান, এ আর এন্ড কোং এর নামে আমি নেন্ডার ড্রপ করেছিলাম। কিন্তু আমি কাজটি পাইনি। কাজ পেয়েছে তনিমা এন্টারপ্রাইজ। আমি প্রতিদিনের মত আমার রাজনৈতিক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছি। কোন বির্তকিত কর্মকান্ডে আমি বিশ্বাষী নই। তবে কে বা কারা তাকে মারার জন্য এই ১০ লক্ষ টাকা পুরুস্কার ঘোষনা করেছেন এ বিষয়ে তিনি বলেন, যারা বর্তমানে দলের সুদিনে উপস্থিত হয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার মালিক হয়েছেন তাদের ইশারায় আমার মান ক্ষুন্ন করার জন্য এ ধরনের অপপ্রচার চালান হচ্ছে। তবে এ নিয়ে তিনি কিঞ্চিত পরিমান শঙ্কিত নন বলে জানিয়েছেন।