বরিশাল টেক্সটাইল কলেজে ছাত্র-পুলিশ সংর্ঘষের নেপথ্যে অধ্যক্ষ

ছাত্র-পুলিশের মধ্যে সংর্ঘষের নেপথ্যে খোদ অধ্যক্ষ আবদুস সাত্তার। তিনিই শিক্ষাথীদের শান্তিপূর্ন পরিবেশে আয়োজিত কর্মসূচীতে পুলিশকে হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের যৌতিক দাবীতে নিয়মতান্তিক পন্থায় আন্দোলনে বাধা প্রদান করে কর্মসূচীতে অধ্যক্ষের ইন্ধনে হামলা চালানোর বিষয়টিতে ক্ষুদ্ধ কলেজের সকল শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। একই সঙ্গে এখানকার সচেতন মহলও বলছেন অধ্যক্ষর উচিৎ ছিল উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনা বা সমাধানের  চেষ্টা করা। কিন্তু তা না করে উল্টো পুলিশ ও অধ্যক্ষ কর্তৃক আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

মামলা দায়েরের পর শুক্রবার রাতে অধ্যক্ষ আবদুস সাত্তার সেল ফোনে আলাপকালে বলেন উশৃঙ্খল ছাত্রদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছি। মামলায় কত জন আসামী বা অভিযোগের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে মন্তব্য করেন অধ্যক্ষ। কেন জানেন না এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন মামলার ড্রাফট’র দ্বায়িত্ব তো একজনকে দিয়েছি সে এখনও কপিটি আমার নিকট পাঠায় নি। বরিশাল কোতোয়ালী থানার ওসি জানান অধ্যক্ষ  বাদী হয়ে ১২ জনকে চিহ্নিতসহ অজ্ঞাতনামা ১’শ/দেড়শ ছাত্রকে আসামী করে মামলাটি দায়ের করেন। শুক্রবার বিকেলে মামলাটি রেকর্ড করা হয়। মামলা নং-২৬। সূত্র জানায় মামলার চিহ্নিত আসামীরা হলো আমিনুল ইসলাম ফিরোজ, সজিবুর রহমান, কানিজ ফাতিমা কুইন, হাফিজুর রহমান, মোহাইনুল ইসলঅম, এনামুল হক, বাহাউদ্দীন, এনামুল ইসলাম, রাকিবুল ইসলাম, হাফিজুর রহমান, মোঃ ফিরোজ, আবু সায়েম। এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে বরিশাল কোতোয়ালী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক কমলেশ বাদী হলে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে সরকারী কাজে বাধা প্রদান ও পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করে। মামলা নং-২২। মামলায় চিহ্নিত ১৬ জন সহ অজ্ঞাতনামা ৩’শ থেকে ৩৫০ জনকে আসামী করা হয়েছে। পুলিশ চিহ্নিত আসামীদের মধ্যে ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরন করা হয়েছে। বাকীরা পলাতক রয়েছে। চিহ্নিত আসামীরা হলো আরিফুর রহমান,রাসেল আহমেদ, হাফিজুর রহমান মিলন, হাফিজুর রহমান, মং রাখাইন, সোহেল রানা, আবদুস সামাদ, সাইফুল ইসলাম, মাইনুল, ইকবাল হোসেন খান, মোঃ ইমরান, মেহেদী হাসান, রহমাতুল্লাহ। পলাতক আসামীরা হলো মজিবুর রহমান,আমিনুল ইসলাম ফিরোজ ও কানিজ ফাতিমা।

জানাযায়, ডিপ্লোমা কোর্স চালু, বিএসসিতে ৩০ শতাংশ কোটা বরাদ্দ ও চাকরির নিশ্চয়তাসহ ৩ দফা দাবিতে ছাত্ররা ক্যাম্পাসে বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় শান্তিপূর্ন পরিবেশে মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। ওই সময়ে অধ্যক্ষ আবদুস সাত্তারের নির্দেশে পুলিশ কর্মসূচী পালনে বাধা প্রদান করে। পুলিশ সদস্যরা আন্দোলনকারীদের উপর ব্যাপক লাঠিচার্জ করে। এরপর উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। পুলিশ বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করতে কয়েক রাউন্ড টিয়ার সেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। ইট দিয়ে ছাত্রদের মাথায় আঘাতও করেছে পুলিশ। পাশাপাশি অধ্যক্ষের নির্দেশেই পুলিশ বেপরোয়াভাবে পুলিশ ধরপাকর শুরু করে। পুলিশ হন্য হয়ে নগরীতে আবদুর রব সেরনিয়াবাদ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থীদের খুঁজে বেড়াচ্ছে।

ছাত্র অধিকার আন্দোলন কমিটির সমন্বয়কারী আমিনুল ইসলাম ফিরোজ (ফিরোজ মোস্তফা) সেল ফোনে জানান, কলেজের অধ্যক্ষ দূনীর্তিপরায়ন। শিক্ষার্থীদের স্বার্থ বা অধিকার বিষয়ে সে প্রতিপক্ষ হিসাবে কাজ করছে। তিনি জানান কলেজের সকল ছাত্ররা ন্যায্য দাবীতে একাত্মতা প্রকাশ কর্মসূচীতে অংশ গ্রহন করে। নিয়মতান্তিভাবে শান্তিপূর্ন পরিবেশের কর্মসূচীতে অধ্যক্ষের নির্দেশে শিক্ষার্থীদের উপর বর্বরোচিত কায়দায় পুলিশ হামলা চালিয়েছে। অধিকার আন্দোলনের নেতা ফিরোজ অধ্যক্ষের বিতর্কিত ভূমিকার জন্য অপসরনের দাবী জানান। একই সঙ্গে ছাত্রদের ন্যায্য দাবী অবিলম্বে বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এছাড়া গ্রেপ্তারকৃতদের নিঃশর্ত মুক্তিসহ মামলা প্রত্যাহারের দাবী জানান। তিনি আরো জানান হামলা মামলা নিপীড়ন নির্যাতন করে ছাত্রদের অধিকার আদায়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করাটা অন্যায়। দেশের সকল গনতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামে ছাত্রদেরই মূখ্য ভূমিকা রয়েছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন এখানে নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় যৌতিক অধিকার আদায়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে আসছে। এখানে অধ্যক্ষের প্রকাশ্য নির্দেশে পুলিশী হামলার মানে কি? এতসবের পরও পুলিশ ও অধ্যক্ষ পৃথক দুটি মামলা দায়ের করে শিক্ষার্থীদের হয়রানী করছে।

কলেজ অধ্যক্ষ আবদুস সাত্তার জানান ছাত্রদের দাবীর বিষয়টি এর আগে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রনালয়ে অবহিত করা হয়েছে। সেখান থেকে কোন সিদ্ধান্ত না আসার আগেই শিক্ষার্থীরা অযৌতিকভাবে আন্দোলনে মাঠে নামে। পুলিশকে হামলা চালানোর নির্দেশ প্রসঙ্গে বলেন বিশৃঙ্খল পরিবেশ শান্ত করতে পুলিশ যথাযথ দ্বায়িত্ব পালন করেছে।

প্রসঙ্গত আবদুস সাত্তার ৭ মাস আগে বরিশাল আবদুর রব সেরনিয়াবাদ ট্রেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন। তার বাড়ি বরিশালের আগৈলঝাড়ায়। এই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মেডিকেল কলেজে পড়ুয়া তার দু’ ছেলে মেয়ে কলেজের সরকারী গাড়ি অবৈধভাবে ব্যাবহার করার অভিযোগ রয়েছে।