পালিয়ে বেড়াচ্ছে টেক্সটাইল কলেজের ৩শতাধিক শিক্ষার্থী

ছাত্র-পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনার নাটের গুরু কলেজ অধ্যক্ষ সত্তারের কারনে কলেজের সাড়ে ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী ৫দিন পর্যন্ত পালিয়ে বেড়াচ্ছে। কলেজটির শিক্ষার্থীদের ৪ভাগের ৩ ভাগই মামলার আসামি।  পুলিশ ও অধ্যক্ষের পৃথক দুটি মামলার আসামি  এই শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ কোন পথে ধাবিত হচ্ছে। একজন অধ্যক্ষের কারনে এভাবেই কি নষ্ট হয়ে যাবে  শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ এরকমই প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা। একদিকে  শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে পুলিশের মামলা অপরদিকে খোদ কলেজ অধ্যক্ষের দায়ের করা মামলায় কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে  পরেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। দুঃশ্চিন্তায় যেমনি কাতরাচ্ছেন  অভিভাবকরা তেমনি মুসাফিরের ন্যায় খাওয়া দাওয়া ত্যাগ করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। ফলে চাপা ক্ষোভের সাথে অভিভাবকদের চোখ এখন অশ্রুশিক্ত। প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীদের পিতা-মাতাদের অভিষাপের ঝুলি ছুড়ে পরছে কলেজ অধ্যক্ষ  সত্তারের উপর। সন্তান পালিয়ে  থাকার দৃশ্য অভিভাবকদের হৃদয়কে  চরম ভাবে মর্মাহত করছে। এক ছাত্রের পিতা মিজানুর রহমান Gournadi.comকে জানান পাষন্ড অধ্যক্ষ সত্তার ঘটনার সুষ্ঠ সমাধান না করে পুলিশের সাথে হাত মিলিয়ে সন্তানদেরকে বাবা-মায়ের থেকে কোলছাড়া করে রেখেছেন।

প্রসঙ্গত ডিপ্লোমা কোর্স চালু, বিএসসিতে ৩০ শতাংশ কোটা বরাদ্দ ও চাকরির নিশ্চয়তাসহ ৩ দফা দাবিতে ছাত্ররা ক্যাম্পাসে ৯ জুন বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় শান্তিপূর্ন পরিবেশে মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। ওই সময়ে অধ্যক্ষ আবদুস সাত্তারের নির্দেশে পুলিশ কর্মসূচী পালনে বাধা প্রদান করে। পুলিশ সদস্যরা আন্দোলনকারীদের উপর ব্যাপক লাঠিচার্জ করে। এরপর উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। পুলিশ বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করতে কয়েক রাউন্ড  টিয়ার সেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।  বৃহস্পতিবার বিকেলে বরিশাল কোতোয়ালী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক কমলেশ বাদী হলে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে সরকারী কাজে বাধা প্রদান  ও পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করে। । মামলা নং-২২। মামলায় চিহ্নিত ১৬ জন সহ অজ্ঞাতনামা ৩’শ থেকে ৩৫০ জনকে আসামী করা হয়েছে। পুলিশ চিহ্নিত আসামীদের মধ্যে ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরন করা হয়। ঘটনার পরের দিন অধ্যক্ষ  বাদী হয়ে ১২ জনকে চিহ্নিতসহ অজ্ঞাতনামা ১’শ/দেড়শ ছাত্রকে আসামী করে মামলাটি দায়ের করেন। শুক্রবার বিকেলে মামলাটি রেকর্ড করা হয়। মামলা নং-২৬।

এদিকে বরিশাল বিএম কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি আ’লীগ নেতা আনোয়ার হোসাইন জানান ছাত্রদের নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের কর্মসূচী পন্ড করতে অধ্যক্ষ কর্তৃক ইন্ধন দিয়ে ছাত্র-পুলিশ সংর্ঘষের ঘটনাটি দুঃখ জনক। অধ্যক্ষ এটা ভুল করেছেন। নিয়ম হচ্ছে তিনি ছাত্রদের নিবৃত্ত করে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করবেন। এরবাইরে অধ্যক্ষ বাদী হয়ে শ’শ ছাত্রদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করাটা ন্যাক্কারজনক। অধ্যক্ষ আলোচনার মাধমে সমাধানের পথে না এগিয়ে জটিলতার পথে এগুচ্ছেন। ছাত্রদের বিরুদ্ধে অধ্যক্ষের মামলা করাটা কোনভাবেই ঠিক হয় নি। এটা মারাত্মক অন্যায় করেছেন। এতে পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হচ্ছে। এখন অধক্ষের উচিৎ হবে ছাত্রদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার ও আটককৃতদের মুক্তির ব্যবস্থা করে আলোচনার মাধ্যমে ঘটনাটির সমাধান করা।

এক সময়ে বামপন্থী ছাত্রসংগঠন ছাত্রমৈত্রীর তুখোর ছাত্রনেতা ও বর্তমানে বরিশাল নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব ডাঃ মিজানুর রহমান জানান টেক্স ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্রদের দাবীগুলো যৌত্তিক। এই যৌত্তিক দাবী আদায়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন কর্মসূচী পালন করতেই পারে। ছাত্রদের অধিকার রক্ষার আন্দোলনে অধক্ষের নির্দেশে হামলার বিষয়টি নিন্দনীয়। বাকসুর সাবেক জিএস ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি আ’লীগ নেতা অ্যাড.বলরাম পোদ্দার বাবলু জানান  ছাত্রদের দাবীর বিষয়গুলো জেনেছি। এটা তাদের যৌত্তিক দাবী। আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমেই ছাত্ররা তাদের অধিকার বাস্তবায়ন করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ছাত্রদের সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ন পরিবেশের আন্দোলনে অধ্যক্ষের ইন্ধনে পুলিশ-ছাত্র সংর্ঘষের ঘটনাটি পীড়াদায়াক। অধ্যক্ষ হয়ে তিনি ছাত্রদেরকে পুলিশী টর্চার কিংবা হামলা মামলার শিকার করতে পারেন না। 

ছাত্র অধিকার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী আমিনুল ইসলাম ফিরোজ (ফিরোজ মোস্তফা) Gournadi.comকে সেল ফোনে জানান অধ্যক্ষ পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে শান্তিপূর্ন কর্মসূচী অশান্ত করেছে। তার বিতর্কিত ভূমিকার জন্য তিনি অপসরনের দাবী জানান। একই সঙ্গে ছাত্রদের ন্যায্য দাবী অবিলম্বে বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এছাড়া গ্রেপ্তারকৃতদের নিঃশর্ত মুক্তিসহ মামলা প্রত্যাহারের দাবী জানান । তিনি জানান টাঙ্গাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ডিপ্লোমা কোর্স বহাল রয়েছে। সেখানকার ডিপ্লোমা শেষে বিএসসিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ রয়েছে। তাহলে এখানে কেন থাকতে পারবে না। এটা কি অযৌত্তিক দাবী। তিনি আরো বলেন অতীতে সাংবাদিকতার পাশাপাশি ছাত্রদের অধিকার আদায়ে আন্দোলন সংগ্রাম করার ইতিহাস রয়েছে। দেশের স্বনামধন্য এরকম অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তি রয়েছেন যারা ছাত্রদের ন্যায্য দাবীতে আন্দোলন করেছে আবার লেখনী শক্তিতেও ভূমিকা রেখেছেন।। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে আমার ছাত্রত্ব রয়েছে। আমি ছাত্রদের ন্যায্য দাবীতে নেতৃত্ব দিচ্ছি এটা অন্যায় কিছু না। কিন্তু এক বিশেষ মহল আমার প্রতিভার বিকাশ বা ইশ্বানিত হয়ে মিথ্যাচার করছে। ছাত্র অধিকার আন্দোলন কমিটির সদস্য সচিব কানিজ ফাতিমা কুইন সেল ফোনে জানান, কলেজের অধ্যক্ষ দূনীর্তিপরায়ন। শিক্ষার্থীদের স্বার্থ বা অধিকার বিষয়ে সে প্রতিপক্ষ হিসাবে কাজ করছে। তিনি জানান কলেজের সকল ছাত্ররা ন্যায্য দাবীতে একাতœতা প্রকাশ করে কর্মসূচীতে অংশ গ্রহন করেছে। নিয়মতান্তিভাবে শান্তিপূর্ন পরিবেশের কর্মসূচীতে অধ্যক্ষের নির্দেশে শিক্ষার্থীদের উপর বর্বরোচিত কায়দায় পুলিশ হামলা চালিয়েছে। আবার পুলিশ ও অধ্যক্ষ বাদী হয়ে মামলা দায়েরের মাধ্যমে হয়রানী করা হচ্ছে। তিনি অধ্যক্ষের অপসরনের দাবী জানান।

ছাত্রদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে অধ্যক্ষের ইন্ধনে হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রেজাউল ইসলাম খোকন জানান আন্দোলনকারী ছাত্রদের মৃক্তি ও মামলা প্রত্যাহার করা উচিৎ। বিএম কলেজ ছাত্র অধিকার আন্দোলন কমিটির আহবায়ক নুরুল আম্বিয়া বাবু জানান টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থীরা যৌত্তিক দাবীতে আন্দোলন করছে। কিন্তু অধ্যক্ষ কর্তৃক ছাত্রদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করাটা ঠিক হয় নি। কলেজ অধ্যক্ষ আবদুস সাত্তার জানান বিশৃঙ্খল পরিবেশ শান্ত করতে পুলিশ যথাযথ দ্বায়িত্ব পালন করেছে। তিনি আরো বলেন ছাত্র-পুলিশ সংর্ঘষের ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কবে কখন কে কে তদন্ত কমিটিতে রয়েছে এ বিষয়ে তিনি মন্তব্য করতে রাজী হননি।