গ্রিল কর্তন ও মোটরসাইকেল গায়েবের কীর্তি

গ্রিল কেটে চুরি করতে সিদ্ধহস্ত, তাদের। ডিজিটাল চোর আখ্যা মোটরসাইকেল চুরি করে যারা, তাদের প্রাপ্য। মোটরসাইকেল আর গ্রিল, কোনটা চুরিতে যে বেশি থ্রিল—তা বাপু আমরা জানব কেমন করে? চোর বাবাজিরাই জানে ভালো। তবে মোটরসাইকেল চোরচক্রের মধ্যে এমন গুণী লোকেরও হদিস পাওয়া গেছে, যার দেশি-বিদেশি উভয় প্রকার ডিগ্রিই রয়েছে। সে জন্য সম্মান করে তার বিদ্যাকে ডিজিটাল বলে আখ্যায়িত করা। দুটি খবরের উত্সই চট্টগ্রাম। বীর চট্টলা বলে এই জেলার প্রভূত খ্যাতি আছে। নানা কারণেই চট্টগ্রাম গুরুত্বপূর্ণ আমাদের জাতীয় জীবনে। যদিও চট্টগ্রামবাসী তাদের ন্যায্য অধিকার ও পাওনা থেকে বঞ্চিত উপেক্ষিত দীর্ঘ দীর্ঘকাল ধরে। এজন্য পলিটিশিয়ানদের ক্ষুদ্র আত্মা ও ঠকবাজির পলিসিই দায়ী।

সনাতন কায়দায় যে বা যারা চৌর্যবৃত্তি চালিয়ে যাচ্ছে, তাদের কথাই প্রথমে। দলনেতার নাম নাসির। মাত্তর দুই মিনিটে সে জানালার গ্রিল কেটে যে কোনো বাসায় ঢুকে যেতে পারে। সিঁড়ি ব্যবহার না করেই সে বহুতল ভবনের কয়েকতলা পর্যন্ত উঠে যেতে সক্ষম। বঙ্গীয় স্পাইডারম্যান আর কি! এনালগ পদ্ধতিতে কাজকাম করলেও সে হুশিয়ার লোক। কোথাও সিসিটিভি থাকলে সেখানা অচল করে নেয় সর্বাগ্রে। ১০ বছরে শতাধিক চুরি-অভিযানের নেতৃত্ব সে দিয়েছে। টিভি চ্যানেলে কুইজের উত্তর দিয়ে নয়, চুরি করে করে সে বনে গেছে প্রকৃতই কোটিপতি। এলাকায় তার পরিচিতি দানবীর হিসেবে। লে হালুয়া! তার শিষ্য-সাকরেদও আছে বেশ ক’জন। চোরাই কর্মে তাদের সিন্ডিকেট একটি প্রাইভেট কার ব্যবহার করে। মাসিক ভাড়া ৪০ হাজার টাকা। অন্তত পাঁচবার সে ধরা খেয়েছে। কিন্তু বেরিয়ে এসেছে বীরদর্পে। আবার ব্যাপৃত হয়েছে পুরনো পেশায় (একে পেশা বলা কি ঠিক হবে?)। তার আছে দোতলা বাড়ি, মাছের প্রজেক্ট, একাধিক বেবিট্যাক্সি।
অতি সংক্ষেপে ডিজিটাল সায়েবের বর্ণনা এবার। চাটগাঁয়ে ১০ থেকে ১২ সদস্যের তিনটি চক্রের দ্বারা গত ছয় মাসে দুই শতাধিক মোটরসাইকেল গায়েব। একটি চক্রের দলনেতা কাউছারের আছে দেশ-বিদেশের ডিগ্রি। জ্ঞানী চোরই বটে! তার এক সহযোগী মোমিনউদ্দিন খালেদ স্নাতক পাস। এই চোরেরা সম্ভ্রান্ত বংশের ছেলেপুলে বলে জানিয়েছে পুলিশ। খালেদ বলেছে, একটি মোটরসাইকেল চুরি করে ফেলতে তাদের সময় লাগে দুই থেকে পাঁচ মিনিট। তাদের কাছে রয়েছে নয় ধরনের চাবি। এসব চাবি দিয়ে যে কোনো মোটরসাইকেলের তালা খুলে ফেলা সম্ভব। তাদের কবল থেকে পুলিশ তিনখানা মোটরসাইকেল উদ্ধার করে।
কেন এসব তরুণ এমন অ্যাডভেঞ্চারে লিপ্ত? জিজ্ঞাসাবাদের দৃশ্য আমরা কল্পনা করি তো।

—এত কাজ থাকতে কেন তোমরা মোটরসাইকেল চুরি করার মতো জঘন্য অপরাধে লিপ্ত হলে?
—দুই-দুইখান ডিগ্রি নিয়া যখন চাকরি বা ব্যবসা করতে চাচ্ছিলাম, তখন কোনো শালা তো জিজ্ঞাসও করে নাই। সরকার বলেছিল, ঘরে ঘরে চাকরি দিবে। কোথায় সেই প্রতিশ্রুতি? ওই প্রতারণার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়েই না এই কাজে জড়িয়ে পড়া।
—তুমি জানো এর শাস্তি? কী হবে তোমার পরিণাম?
—জানি রে ভাই জানি। আমি জেনেশুনে বিষ করেছি পান…
আইনের ভয় দেখিয়ে কোনো সুবিধা পাবেন না। ঠিকই ফাঁক-ফোকর গলিয়ে বের হয়ে আসব। বার হয়ে আপনার হালুয়া যাতে টাইট হয় সে ব্যবস্থা করব। প্রমিজ।
—বেরুবে ঠিকই। তারপর?

—ফিরে যাব পুরনো পেশায়। আফটার অল এই পেশার প্রতি আমার একটা অঙ্গীকার বা দায়বদ্ধতা আছে না? মায়া মহব্বতও জন্মে গেছে এত্ত বছরে। আমি তো পলিটিশিয়ানদের মতো ফ্রড না। এছাড়া আরও কারণ আছে।
—কী সেই কারণ? খোলাসা করে বাতলাও।

—সেই কারণ হলো, আরও আরও বেকার তরুণদের আমি দীক্ষা দিতে চাই। উদ্বুদ্ধ করতে চাই। যাতে তারা এই পেশায় এসে আমার সাফল্যের ধ্বজা আরও সামনে এগিয়ে নিতে পারে। অহেতুক শেয়ারবাজারে তারা যেন ধরা না খায়! শিক্ষিতরা এলে এটাকে ইন্টারন্যাশনাল ডাইমেনশন দিতে পারবে। শিল্পে উন্নীত হবে চুরিবিদ্যা। শোনেননি, জ্ঞান সম্পর্কে একটা কথা চালু আছে। মহা মূল্যবান সেই কথাটা হলো—যতই করিবে দান তত যাবে বেড়ে।
—কিন্তু তুমি যেটা করছ, সেটা মহা অন্যায়।

—আরে রাখেন অন্যায়। প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকা সাদা করার উমদা সুযোগ রাখা হয়েছে। বিষয়টি নাকি অন্যায় হলেও মন্দের ভালো। কোটি কোটি টাকা সাদা করার লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে। আর, আমাদের মতো চুনোপুঁটিকে নিয়ে বেহুদাই এত ঝুলাঝুলি। রুই-কাতলাদের টিকিটিও তো ছুঁতে পারছেন না। আমাদের মতো ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ করছেন।

—উহ, স্টপ। বাকোয়াজি বন্ধ করো। বড্ড বেশি কথা বলো। রুলের গুঁতা খেলে তড়পানি কমবে। রিমান্ডের রামছ্যাঁচা তো খাওনি এখনও। চৌদ্দপুরুষের নামধাম ভুলিয়ে দেবে। বেশি তেড়িবেড়ি করলেই সোজা ক্রসফায়ার। জন্মের মতো খেল খতম। এলিট ফোর্সের হাওলা করে দিলেই বুঝবে কত ধানে কত চাল!

—আচ্ছা চুপ করলাম। তবে এইটাও জেনে রাখেন ওমুক ভাই আমার গডফাদার। উনি অলরেডি জানেন যে আমি এখানে। উনি ইন্টারভেন করলে, আপনার প্যান্ট ভিজে যাবে। তখন কিন্তু আমাকে দোষারোপ করতে পারবেন না। আগে থেকেই সাবধান হন। ইনস্ট্যান্ট বদলির গাড্ডায় পড়লে হাজার কেন্দে-কেটেও লাভ নাই।