খুনী রেজাউলের ক্যাডার কর্তৃক বাদি সুজনকে অপহরনের চেস্টা

রহমান রেজাউল চতুর্থ স্ত্রী অন্তঃস্বত্তা নাদিয়াকে হত্যা করে লাশগুমের সময় ঢাকায় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে। ওই ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার এজাহারভূক্ত দুই আসামি ইতোমধ্যে জামিনে বেরিয়েছে। আগামি ২৬ জুন খুনী সিকদার রেজাউলকে ঢাকার নিন্ম আদালতে জামিনের আবেদন করে হাজির করা হবে। ইতিপূর্বে মামলা উত্তোলনসহ আলোচিত নাদিয়া হত্যার ঘটনাটি মীমাংসার জন্য মামলার বাদি হতভাগ্য কামরুন নাহার নাদিয়ার ভাই সজিব আহম্মেদ শাহ্রিয়ার সুজনকে খুনী রেজাউলের ক্যাডাররা বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতিসহ প্রাননাশের হুমকি দিয়ে আসছিলো। তারই ধারাবাহিকতায় গত ১৪ জুন দুপুরে ঢাকার কোর্ট কমাউন্ড এলাকা থেকে বাদি সুজনকে অপহরনের চেষ্ঠা করে খুনী রেজাউলের ক্যাডাররা। এসময় সুজনের ডাকচিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে আসলে অপহরনকারী সন্ত্রাসীরা দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। এ ঘটনার পর থেকে বাদি সুজন মামলার ভবিষ্যত ও তার জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন হয়ে পরেছেন।

বুধবার (১৫ জুন) মোবাইল ফোনে আলোচিত নাদিয়া হত্যা মামলার বাদি সজিব আহম্মেদ শাহ্রিয়ার সুজন গৌরনদী ডটকমকে জানান, মামলা দায়েরের পর থেকে হাজারীবাগ থানা পুলিশ বিতর্কিত ভূমিকা পালন করে আসছে। গ্রেফতারকালে পুলিশ খুনী সিকদার রেজাউলের কাছ থেকে পিস্তল, পার্সপোর্টসহ অন্যান্য আলামত উদ্ধার করলেও সে সব বিষয়ে মামলার সিজার লিষ্টে উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়াও ঘাতক রেজাউলের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দীও নেয়া সম্ভব হয়নি। জবানবন্দী নিতে পুলিশ খুনী রেজাউলকে আদালতে নিয়ে আসলে সে (রেজাউল) অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাওয়ার ভান করে।

সুজন আরো জানান, হাজারীবাগ থানা পুলিশের বিতর্কিত ভূমিকার কারনে অতিসম্প্রতি মামলাটি ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। অপরদিকে মামলার এজাহারভুক্ত অপর দুই আসামি নুরজাহান বেগম ও সোহেল রানাকে (এজাহারে জুয়েল) পুলিশ গ্রেফতার করতে নানা তালবাহানা করে। এছাড়াও খুনী সিকদার রেজাউলের দেহরক্ষী সালমা তালুকদারের পার্সপোট উদ্ধার করলেও রহস্যজনক কারনে পুলিশ তাকেও গ্রেফতার করেননি। ফলে গত ৩০ মে নুরজাহান বেগম হাইকোর্ট থেকে তিন মাসের আগাম জামিন নেয়। সর্বশেষ গত ১৪ জুন দায়রা জজ আদালত থেকে এজাহারভুক্ত অপর আসামি সোহেল রানাও জামিন নিয়েছে। ওইদিন দুপুরে সে (সুজন) আদালত এলাকা থেকে বেরিয়ে আসার সময় খুনী রেজাউলের ৭/৮ জন ক্যাডাররা তাকে (সুজনকে) একটি মাইক্রোবাসযোগে অপহরনের চেষ্টা করে। এ সময় তার ডাকচিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে আসলে সন্ত্রাসীরা দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। এরপূর্বে সন্ত্রাসীরা আগামি ২৬ জুন রেজাউল সিকদারকে জামিনে বের করে সুজনকে তার বোনের মতো হত্যা করা হবে বলেও হুমকি দিয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে মামলার ভবিষ্যত ও নিজের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে বাদি সুজন এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। শেষ পর্যন্ত আলোচিত নাদিয়া হত্যা মামলার খুনীসহ অপর আসামিরা কি পার পেয়ে যাবে? এ নিয়ে চরম শংকা প্রকাশ করেছে বাদি ও তার স্বজনদের মধ্যে। মামলার বাদি সজিব আহম্মেদ শাহ্রিয়ার সুজন আক্ষেপ করে বলেন, এই মুহুর্তে  রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সহযোগীতা পেলে আমার বোনের খুনীদের ফাঁসি এ দেশের মাটিতেই হবে। বলেই তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পরেন। বর্তমানের মামলার তদন্তকারী অফিসার (ডিবি) ফজলুর রহমান মোবাইল ফোনে গৌরনদী ডটকমকে জানান, মামলার তদন্ত কার্যক্রম যথাযথ ভাবেই চলছে।

উল্লেখ্য, গৌরনদী উপজেলার টরকী বন্দরের ফিরোজ মিয়ার কাপড়ের দোকানের মধ্যে বসে প্রকাশ্যে দিবালোকে ২০০৩ সালের ১ এপ্রিল সন্ত্রাসী রেজাউল সিকদার তার পিতা বার্থী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান ওরফে হাবুল শিকদারকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। এ ঘটনায় নিহত হাবুল সিকদারের দ্বিতীয় স্ত্রী লিনা রহমান বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সন্ত্রাসী রেজাউল সিকদারের বড়ভাই সেনাবাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তা হওয়ায় রহস্যজনক কারনে আলোচিত হাবুল সিকদারের হত্যা মামলাটি দ্রুত নিস্পত্তি হয়ে যায়। পিতৃহত্যার মামলা থেকে  রেহাই পেয়ে রেজাউল হয়ে ওঠে আরো বেপরোয়া। এরইমধ্যে সে আপন দু’বোনসহ তিনটি বিয়ে করেন। সর্বশেষ রেজাউল ঢাকায় বসবাসের সুবাধে তার সাথে পরিচয় হয় বনানী শাখার ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটি কলেজের আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ও বরিশালের কাউনিয়া এলাকার ধনাঢ্য ব্যক্তি মরহুম এডভোকেট রিয়াজ উদ্দিনের কন্যা কামরুন নাহার নাদিয়ার সাথে। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। রেজাউল তার পূর্বের তিনটি বিয়ের কথা গোপন রেখে ছয় মাস পূর্বে নাদিয়াকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকে তারা রায়েরবাজারের ৯১ হাতেমবাগের একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছিলো। এরইমধ্যে নাদিয়া দু’মাসের অন্তঃস্বত্তা হয়ে পড়েন। বিয়ের পর থেকেই নাদিয়ার পিতার অঢেল সম্পত্তির ওপর রেজাউলের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে। হত্যার একমাস পূর্বে রেজাউল তার সহযোগীদের নিয়ে নাদিয়ার পিতার কাউনিয়া এলাকার একটি বিশাল পুকুর দখল করে মাটি ভরাটের কাজ শুরু করে। এনিয়ে নাদিয়ার সাথে রেজাউলের দাম্পত্য কলহ দেখা দেয়। এ ঘটনার জের ধরে গত ২৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় উভয়ের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। একপর্যায়ে রেজাউল নাদিয়াকে শ্বাসরোদ্ধ করে হত্যা করে। পরবর্তীতে নিহত নাদিয়ার লাশ গুমের জন্য রেজাউল ওইদিন রাতে নিজস্ব প্রাইভেটকারযোগে গৌরনদীর উদ্দেশে রওয়ানা হয়। পথিমধ্যে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঢাকার শাহবাগ থানা পুলিশ রাত সাড়ে ৮টার দিকে লাশবাহী প্রাইভেটকারসহ খুনী সিকদার রেজাউলকে গ্রেফতার করে।