বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাংচুর নিয়ে ইউপি নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার

বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাংচুরের ঘটনাকে পুঁজি করে আওয়ামীলীগ নেতা ও চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার ও সাধারণ মানুষকে হয়রানী করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আওয়ামীলীগের ওই নেতা নির্বাচনী ক্যাম্পকে দলীয় কার্যলয় হিসেবে ব্যবহার করে নির্বাচনী আচরণ বিধি লংঘন করলেও দেখার কেউ নেই।

অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি ও কয়ারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী জাকির হোসেন সিকদার নির্বাচন কমিশনের আইন অনুযায়ী ১টি নির্বাচনী ক্যাম্প তৈরী করলেও ময়দানের হাটে একটি আরো দোকানঘর ভাড়া নিয়ে নির্বাচনের কাজে ব্যবহার করছেন। পুরনো কার্যলয় থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান ও প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি এনে এই নির্বাচনী ক্যাম্পে স্যাটিয়ে দলীয় কার্যলয় বলে প্রচার করেন। এখান থেকেই তার নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। ১১জুন সকালে চেয়ারম্যান প্রার্থী নুর মোহাম্মদ মোল্লার সমর্থকরা ময়দানের হাটে ভোট চাইতে গেলে জাকির হোসেন সিকদারের সমর্থকরা ওই কার্যলয় থেকে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলা চালিয়ে ১০জনকে আহত করে ও কয়েকজনকে বিভিন্ন বাড়িতে আটকে রাখে। এই হামলার জের ধরে উভয়পক্ষ উক্ত হাটের দুই প্রান্তে জড়ো হতে থাকে। ওই কার্যলয় তখন তালাবদ্ধ ছিল। খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উভয়পক্ষকে সমর্থকদের নিয়ে চলে যেতে বলে। পুলিশের অনুরোধে ময়দানের হাট ত্যাগ করে কামরুল হাসান নুর মোহাম্মদ মোল্লার সমর্থকরা তালতলা নামক স্থানে ও জাকির চেয়ারম্যানের সমর্থকরা ময়দানের হাটের পশ্চিম পাড়ে জড়ো হয়। বাড়িতে আটকিয়ে রাখাদের উদ্ধার করতে কামরুল হাসান নুর মোহাম্মদ মোল্লার সমর্থকরা বিকাল ৪টার সময় ময়দানের হাট গেলে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয় এবং ১১জনকে গ্রেফতার করে।

উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও চেয়ারম্যান প্রার্থী জাকির হোসেন সিকদার বলেন, আওয়ামীলীগের দলীয় কার্যলয়ে জাতির জনকে ছবি ভাংচুর করায় মামলা দায়ের করেছি। প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ সত্য নয়।

কয়ারিয়া ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক মোল্লা বলেন, ময়দানের হাটে আওয়ামীলীগের দলীয় কার্যলয় নেই তবে জাকির হোসেন সিকদার ঘর ভাড়া নিয়ে নির্বাচনী কাজ করছেন।

ওই কার্যলয়ের ছবি ভাংচুরের ঘটনায় স্থানীয় আওয়ামীলীগের সভাপতি মামলার বাদী না হয়ে জাকির হোসেন সিকদার বাদী হওয়ায় বিভিন্ন মহলে নানা প্রশ্ন উঠেছে। সাধারণ মানুষকে প্রশাষন দিয়ে হয়রানী করা হচ্ছে। এ ঘটনায় এলাকায় তীব্র উত্তেজনা বিড়াজ করছে। পুলিশের ছত্রছায়ায় এই আওয়ামীলীগের নেতা বেপারোয় হয়ে উঠেছে।

দোকানঘর মালিক কবির সরদার বলেন, জাকির হোসেন সিকদার মাসে এক হাজার টাকা করে দিয়ে ঘর ভাড়া নিয়েছে। নির্বাচনের কাজে ২মাস ব্যবহার করা হবে। ১মে থেকে ভাড়া শুরু হয়েছে। তারা নির্বাচনী কাজে না আওয়ামীলেীগর কাজে ঘর ব্যবহার করছে তা আমার দেখার বিষয় না। ২মাস পরে তো ঘর দিয়েই দিবে।

চেয়ারম্যান প্রার্থী কামরুল হাসান নুর মোহাম্মাদ মোল্লা অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার লোকজন পুলিশের ধাওয়ায় ময়দানের হাট যেতেই পারেনি। জাকির হোসেন সিকদারের লোকজন তাদের অফিসের ছবি ভাংচুর করে পুলিশের কাছে দিয়েছে। মার খেলাম আমরা আবার মামলাও হল আমাদের বিরুদ্ধে।’

তিনি বলেন, জাতির জনকের ছবি ভাংচুরের ঘটনা ঘটিয়ে নির্বাচনে ফায়দা হাসিল ও প্রভাব ফেলানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। কারা ছবি ভাংচুর করেছে তা বের করার জন্য গোয়েন্দা সংস্থার তদন্ত দাবী করছি।

আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী কামরুল হাসান মন্টু সিকদার বলেন, নির্বাচনে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতংক ও প্রতিপক্ষকে হয়রানী করার জন্য এই মামলা করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতনামা দিয়ে ৩/৪শ’ এলাকাবাসীকে আসামী করায় সাধারণ মানুষ পুলিশের দ্বারা হয়রানীর শিকার হচ্ছে। এটা একটা কৌশল। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত দাবী করছি।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, নির্বাচনে দলীয় কার্যলয় ব্যবহার আচারণ বিধি লংঘন। কেউ অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।