সাড়ে তিন হাত মাটির বড়ই সংকট

লাশ দাফনে জমির সংকট দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে সাড়ে ৮ একর জমির উপর ৫৫ হাজার লাশ দাফন করা হয়েছে। সময়ের পালাক্রমে ২০ টাকা মূল্যের সাড়ে তিন হাত জায়গার দাম এখন  ৩০ তেকে ৪০  হাজার টাকা হয়েছে। এই টাকায় অনেকেই কবরের জমি ক্রয় করে লাশ দাফনের ক্ষমতা রাখেন না। আবার অনেকে টাকা হলেও পচ্ছন্দের জমি পান না। গোরস্থানের আনাচে কানাচে এখন এ টাকায় জমি কিনে লাশ দাফন করা হচ্ছে।   

৪৫ বর্গ কিলোমিটার এই নগরীতে এখন ৬ লাখ মানুষ বাস করে। এর মধ্যে খ্রীস্টান আছেন ৮/১০ হাজার। তাদের  জন্য  কবর স্থান রয়েছে একটি, হিন্দু সম্প্রদায়ের লক্ষাধিক মানুষের বসবাস রয়েছে। তাদের জন্য রয়েছে  ১টি শশ্মানঘাট। ৫ লাখ মুসুলমানদের জন্য মৃত্যুর পর দাফনের জন্য একমাত্র ভরসা  মুসলিম গোরস্থান।  নগরীর গোরস্থান রোড এলাকায় ১৮৫০ সালে ১২ একর জমি নিয়ে গড়ে ওঠে মুসলিম কমপ্লেক্স। সেখানে রয়েছে মুসলিম মাদ্রাসা, মুসলিম গোরস্থান মসজিদ, আঞ্জুমান অফিস ও মুসলিম কবরস্থান। ঐ সময় শুধুমাত্র ৩ একর জমির উপর সীমাবদ্ধ ছিল মুসলিম কবরস্থানের সীমানা প্রাচীর। বাকী জমিতে মসজিদ,মাদ্রাস আর পুকুর। কবরস্থানের দেখভালের দায়িত্ব ছিল মিউনিসিপালটির । তখন সেখানে  লাশ দাফন করতে কোন টাকা লাগতো না।

১৮৯৩ সালে আঞ্জুমান-ই-হেমায়েত-ই ইসলামের নিকট কবরস্থানটি হস্তান্তর করে মিউনিসিপালিটি। ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত টাকা ছাড়াই সেখানে লাশ দাফন করা হতো। ১৯৬৫ সালে একটি কবরে জন্য নির্দিষ্ট তিন হাত জমির মূল্য নির্ধারণ করা হয় ২০ টাকা। ঐ টাকার বিনিময়ে যারা লাশ দাফন করত শুধুমাত্র তাদের কবরের উপর কোন কবর দেয়া হতো না এই শর্ত প্রযোজ্য ছিল। যারা টাকা ছাড়াই লাশ দাফন করতেন তাদের কবর আর সংরক্ষন করা হতো না। এভাবেই সেখানে কবরে উপর কবর নির্মান হয়েছে অসংখ্য।  ১৯৬৬ সালে ৫ টাকা বাড়িয়ে কবরের জমির মূল্য নির্ধারন করা হয় ২৫ টাকা। ৪৫ বছরের ব্যবধানে সেই জমি বিক্রি হচ্ছে ৩০ হাজার টাকায়। তাও আবার ২০ টাকার জমির মত ভাল পচ্ছন্দের জমি মিলছে না।

আঞ্জুমান-ই- হেমায়েত ইসলাম সূত্র জানায়  প্রতি বছর গড়ে এ মুসলিম গোরস্থানে সাড়ে ৩ শ’ লাশ দাফন করা হয়ে থাকে।  স্থান সংকুলান না হওয়ায় ধীরে ধীরে মুসলিম গোরস্থানের পরিধি বৃদ্ধি করে ৮ একর এলাকা জুড়ে সীমানা নির্ধারন করা হয়েছে।  ১৬০ বছরের ব্যবধানে সেখানে প্রায় ৫৫ হাজার লাশ দাফন করা হয়েছে। এখন আর সেখানে লাশ দাফনের জন্য জমি নেই। আশে পাশে বিশাল অট্রালিকা আর বিলাশ বহুল বাড়ী ঘর নির্মান করায় গোরস্থান সম্প্রসারনের আর কোন উপায় নেই।   আঞ্জুমান-ই-হেমায়েত-ই ইসলাম এর কর্মকর্তারা জানান, আগামী ডিসেম্বর মাসের পর আর এ গোরস্থানে লাশ দাফনের জন্য কোন জায়গা অবশিষ্ট থাকবে না।
নগরীর বিএম স্কুল রোড এলাকায় একটি মুক্তিযোদ্ধা কবরস্থান নির্মানের উদ্যোগ নেয়া হলে তা নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। মুক্তিযোদ্ধাদের বিভক্ত না করার মতামত দিয়ে সিটি মেয়র শওকত হোসেন হিরন সেখানে সিটি কর্পোরেশনের তত্বাবধানে একটি পার্ক নির্মান করেছেন।

নগরী দক্ষিণ পশ্চিম প্রান্তের বাঘিয়ায় কবরস্থানের জন্য দেড় একর জমি ক্রয় করা হয়েছে বলে আঞ্জুমান-ই-হেমায়েত ইসলাম সূত্র জানিয়েছেন। ঐ জমি নীচু হওয়ায় তাতে মাটি ফেলে ভরাট করে কবরের উপযুক্ত করতে আরো  এক বছর সময় প্রয়োজন। নতুন গোড়স্থান প্রস্ততের পূর্বেই লাশ দাফন নিয়ে জটিলতার মুখে পরতে হবে অনেক হতভাগ্য নগর বাসীকে । আবার নগরীর এক প্রান্তের ঐ গোরস্থানের দিকে লাশ দাফনে স্বজনদের আগ্রহ কম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পূর্ব পুরুষের সাথে একই কবরস্থানে লাশ দাফন করতে না পারার মনো বেদনার আশংকা তো রয়েছেই।

এ আশংকা দূর করতে  নগরীর উচ্চবিত্ত পরিবারগুলো আগেই পুরনো মুসলিম গোরস্থানের কবর নির্ধারন করে রাখতে জমি ক্রয় করে রাখছেন।  ফলে অসময়েই ফুরিয়ে যেতে বসেছে কবরস্থানের জমি। মৃত্যুর আগেই বিত্তবানরা জমির স্থান নির্ধারনে ব্যস্ত থাকায় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে জমি। অগ্রিম জমি বিক্রি করা হচ্ছে ৪০ হাজার টাকায়। তবুও ঐতিহ্যবাহী এ কবরস্থানে ঠাই পেতে বিত্তবানরা পুরো পরিবারের জন্য ৪/৬ টি কবরের জমি একত্রে এক জায়গায় কিনে কারুকার্য করে সীমানা দিয়ে রাখছেন।

বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শওকত হোসেন হিরন জানান, কবরস্থানের সংকট নিরসনে  নগরীর আরো ৪টি স্থানে জমি দেখা হচ্ছে।  রূপাতলী এলাকায় ৬ একরের একটি জমি নিয়ে দরদাম চলছে। খুব শিঘ্রই আরো কবরস্থান নির্মানের কাজ শুরু করা হবে।