কাগজে প্রকল্প থাকলেও বাস্থবে অস্তিত্ব নাই

অবকাঠামো রক্ষনাবেক্ষন (টি আর নগত টাকা ) কর্মসূচী বিশেষ বরাদ্ব প্রকল্পে বাস্থবায়নে চরম অনিয়ম ও দূর্নীতির প্রমান   মিলেছে। অধিকাংশ প্রকল্প কাগজে থাকলেও বাস্থবে কোন অস্তিত্ব নেই। স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতারা ভূয়া প্রকল্প দাখিল করে প্রকল্পের নামে বরাদ্বকৃত টাকা আত্মসাত করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কোন কোন প্রকল্পের টাকা নামেমাত্র প্রতিষ্ঠানে দিয়ে পুরো টাকা নেতারা হাতিয়ে নিয়েছেন।

সরেজমিনে গিয়ে প্রতিষ্ঠান কর্মকর্তা,স্থানীয় লোকজন, আওয়ামীলীগ নেতা ও সংস্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বরিশালের গৌরনদী উপজেলা ২০১০ -২০১১ইং অর্থ বছরের গ্রামীন অবকাঠামো রক্ষনাবেক্ষন (টি আর নগত টাকা) বিশেষ বরাদ্ব কর্মসূচী প্রকল্পে আওতায় গৌরনদী উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ও পৌর সভার ৯টি ওয়ার্ডে ১৩৬টি প্রকল্প গ্রহন করা হয়। প্রকল্পগুলো  বাস্থবায়নে বরাদ্ব করা হয় ৪৭ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। গত ৯ জুন এসব টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। সরজেমিনে গিয়ে দেখা যায়, গৌরনদী উপজেলার কতিপয় প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব পাওয়া গেলেও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই কাগজে কলমে। যা শুধুমাত্র কাগজে আছে বাস্থবে নাই। ত্রান ও পূর্নবাসন কার্যালয়ে দাখিলকৃত প্রকল্প বাস্থবায়ন কমিটিও ভূয়া।  এবং কমিটির সদস্যদের ভূয়া নাম ও ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। কমিটির ছবি ও নামের লোকজনকে এলাকায় খুজে পাওয়া যায়নি। গত ১৪ জুন মঙ্গরবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,চাদশী ইউনিয়নের বকুল তলা জামে মসজিদের সংস্কারের জন্য ৩০হাজার টাকা বরাদ্ব করা হয়। (প্রকল্প নং-৬১)। মসজিন কমিটির সভাপতি ও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ শওকৎ হোসেন অভিযোগ করেন , এ প্রকল্প বাস্থবায়নের জন্য ৩নং চাদশী ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের সহসভাপতি মোঃ হিরন শরীফ জনৈক মোঃ কামরুল ইসলামকে প্রকল্প চেয়ারম্যান করে ৫সদস্য বিশিষ্ঠ একটি প্রকল্প কমিটি দাখিল করেন। সেখানে কমিটিতে)যাদের নাম ও ছবি ব্যাবহার করা হয়েছে তাও ভূয়া। ওই নামে বা ওই ছবির কোন ব্যাক্তি এই এলাকায় নেই। আওয়ামীলীগ নেতা হিরন প্রকল্পের টাকা তুলে আত্মসাত করেছে। অভিযোগ অস্বীকার করে মোঃ হিরন শরীফ বলেন, আমি জড়িত নই তবে মসজিদে টাকা ফেরত দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। চাদশী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের দঃ নাঠৈ সিদ্দিক খলিফার বাড়ির মসজিদ উন্নয়নের জন্য ৩০ হাজার টাকা বরাদ্ব করা হয়। (প্রকল্প নং-৫৯)। মসজিদ কমিটির সভাপতি মাওলানা মোঃ ইসমাইল হোসেন ও সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন অভিযোগ করেন, ৩নং চাদশী ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ মাহাবুব চোকদার তাদেরকে ১৫ হাজার প্রদান করেছে । এছাড়া পশ্চিম শাওড়া হিতৈষী ক্লাব উন্নয়নে ৩০ হাজার টাকা (প্রকল্প নং- ৬০) বরাদ্ব করা হয়। চাদশী ইউনিয়নরে মোঃ শামছুল হক, মোঃ শাহ আলম ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ হিরন বেপারী জানান, ওই নামে কোন প্রতিষ্ঠান এলাকায় নেই । ত্রান ও পূর্নবাসন অফিসে গিয়ে দেখা যায়, চাদশী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ মাহাবুব চোকদার প্রকল্প চেয়ারম্যান হিসেবে কমিটি দাখিল করে হিতৈষী ক্লাবের টাকা তুলে নেন। অভিযোগের ব্যাপারে তার কাছে জানতে চাইলে এ প্রতিবেদকের পরিচয় দেয়ার পর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরবর্তিতে তিনি আর ফোন   ফোন রিসিপ করেননি । চাদশী ইউনিয়নের উত্তর চাদশী জনকল্যান ক্লাবের উন্নয়নের জন্য ৩০হাজার টাকা ,(প্রকল্প নং- ৫৫) চাদশী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক শান্তি রঞ্জন সোম প্রকল্প চেয়ারম্যান হিসেবে  কমিটি দাখিল করে জনকল্যান ক্লাবের টাকা তুলে আত্মসাত করেন বলে এলাকাবাসি অভিযোগ করেন। এ অভিযোগ প্রসংগে তিনি বলেন, ভূয়া নয়, আমার বাড়িতে এ ক্লাবের কার্যক্রম চলে। তবে তার বাড়িতে গিয়ে এ সংগঠনের  কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। চাদশী মোনাচ্ছেদ সরদারের বাড়ির মসজিদ উন্নয়নে ৩০ হাজার টাকা বরাদ্ব করা হয়। (প্রকল্প নং- ৬২) মোনাচ্ছেদ জানান, আমার বাড়িতে কোন মসজিদ নেই ,আমাকে প্রকল্প চেয়ারম্যান করা হলেও আমি কিছুই জানিনা। কে বা কারা আমার নামে টাকা তুলে আত্মসাত করেছে। গৌরনদী পৌর সভার ৭নং ওয়ার্ডের আশোকাঠী সুর্য্য তরুন সংঘ (প্রকল্প নং ৪৮)ও আশোকাঠী সমাজ সেবা অফিসের (প্রকল্প নং ৪৯)নামে দুটি প্রকল্প দাখিল করে ৭০ হাজার উত্তোলন করা হয়েছে।

এলাকাবাসি জানান, এ নামে এলাকায় কোন প্রতিষ্ঠান নেই। ওই ওয়ার্ডের পৌর কাউন্সিলর ও পৌর যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক এস এম ফিরোজ রহমান জানান, এ ওয়ার্ডে ওই দুটি সংগঠনের কোন অস্তিত্ব নেই। এ প্রসংগে উপজেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ও সাবেক পৌর কাউন্সিলর মোঃ জামাল হোসেন বাচ্চু অভিযোগ করেন, যুবলীগ নেতা হারুন টাকা তুলে আত্মসাত করেছে। হারুন অভিযোগ অস্বীকার করেছে।  খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের ইল্লা বরসষ্টান্ড মুক্তিযোদ্বা প্রজন্ম সংঘ (প্রকল্প নং ৩৩)নামে একটি সংঘঠনের নামে ৩০ হাজার টাকা উত্তোলন করেন খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি প্রনব রঞ্জন দত্ত। স্থানীয় ইউপি সদস্য ও ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি আরজ আলী জানান, এ নামে এখানে কোন দিন কোন সংগঠন ছিল না এবং নেই। ভূয়া প্রকল্প দেখিয়ে বরাদ্বকৃত টাকা আত্মসাত করা হয়েছে। অভিযোগের ব্যাপারে প্রনব রঞ্জন দত্ত বলেন, সংগঠন আছে তবে কোন অফিস নেই। খাঞ্জাপুর কমলাপুর জনসেবা সংঘ (প্রকল্প নং ৪৩)নামে একটি প্রকল্প দাখিল করে স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা মোঃ দিদার বেপারী ৩০হাজার টাকা তুলে নেন। আবুল কালাম ,আব্দুর রাজ্জাক অভিযোগ করেন, এ নামে এখানে কোন সংঘঠন নেই। অভিযোগ প্রসংগে নিজেকে উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা দাবি করে  দিদার বেপারী বলেন, এখনো ক্লাব নেই তবে ভবিষ্যাতে আমরা  ক্লাব করবো। শরীকল ইউনিয়নের হোসনাবাদ টেম্পু ষ্ঠান্ডের মসজিদ উন্নয়নের নামে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা মোঃ গোলাম সরোয়ার ৩০ হাজার টাকা তুলে নেন। মুক্তিযোদ্বা মেজবা উদ্দিনসহ টেম্পুষ্টান্ডের ব্যাবসায়ীরা জানান, এখানে কোন মসজিদ নেই।

অভিযোগের ব্যাপারে সরোয়ারের সাথে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি। মাহিলাড়া ইউনিয়নের শরীফাবাদ গ্রামের শেখ আরিফ শরীফের মাজার মসজিদের ছাদ নির্মান (প্রকল্প নং -৮৬) প্রকল্প চেয়ারম্যান হিসেবে মাহিলাড়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মোঃ আবুল কালাম ৩০ হাজার টাকা তুলেছেন। ওই একই নামে ভিন্ন প্রকল্পে দাখিল করে (প্রকল্প নং -২৪)মাহিলাড়া ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ চান মিয়া প্রকল্প চেয়ারম্যান হিসেবে ৩০ হাজার টাকা  নিয়েছেন। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন,  একই প্রতিষ্ঠানের নামে দুটি প্রকল্প দেখিয়ে দুই নেতা  ৬০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেণ। তারা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ সত্য নয়। দুটি প্রকল্পে প্রাপ্ত টাকার অনেক বেশী টাকা উন্নয়ন কাজে ব্যায় করা হয়েছে। গৌরনদী সভার ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সাবেক সহকারী পুলিশ সুপার শান্তুনু ঘোষের বাড়ির মনোষা মন্দির সংস্কার প্রকল্পে ৩০ হাজার টাকা বরাদ্ব করা হয়। মন্দির কমিটির সভাপতি ও সাবেক সহকারী পুলিশ সুপার শান্তুনু ঘোষ জানান, তার মন্দিরে একটি টাকাও দেয়া হয়নি। আমার নাম ব্যাবহার করে টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। গৌরনদী উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের প্রকল্প এলাকার স্থানীয়রা জানান, প্রতিটি ইউনিয়নেই কাগজে প্রকল্প থাকলেও বাস্থবে অধিকাংশ প্রকল্প নেই।

গৌরনদী উপজেলা ত্রান ও পূর্নবাসন কর্মকর্তা মোঃ কবির উদ্দিনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের কাছে কোন অভিযোগ আসেনি । অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেয়া হবে।

গৌরনদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা  আওয়ামীলীগের  প্রভাবশালী নেতা মোঃ শাহ আলম খানের কাছে অভিযোগ প্রসংগে জানতে চাইলে তিনি বলেন, টি আর নগত টাকার প্রকল্প সম্পর্কে আমি অবহিত নই। তাছাড়া কোন াভিযোগ পাইনি।