হকার সমিতির নেতারা দক্ষিণাঞ্চলের কোথাও পত্রিকা বিক্রি করতে দেয়নি

দক্ষিণাঞ্চলের কোথাও বিক্রি করতে দেয়া হয়নি। বরিশাল হকার সমিতির কয়েকজন নেতা পত্রিকা বিক্রি ও সরবরাহ করতে হকার এবং এজেন্টদের বাধা প্রদান করেন। দুর্যোগপূর্ন আবহাওয়ার কারণে প্রমত্তা পদ্মা উত্তাল থাকায় ঢাকার পত্রিকাগুলো কেওড়াকান্দি পৌছাতেই সকাল গড়িয়ে যায়। সকাল ১০টার দিকে জাতীয় পত্রিকাবাহী গাড়িগুলো নগরীর প্রবেশদ্বার নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে হকার ইউনিয়নের নেতারা আটকে দেয়। তারা পত্রিকার গাড়ি নগরীতে প্রবেশে বাধা দিতে থাকে। খবর পেয়ে পত্রিকার এজেন্টরা নথুল্লাবাদ গিয়ে গাড়িগুলো মুক্ত করে নিয়ে আসেন। ৪টি এজেন্টের সেন্টারে পত্রিকা নামার সাথে সাথে হকার সমিতির নেতারা তা জোরপূর্বক কেড়ে নিয়ে গুদামে তালাবন্দী করে রাখেন। স্থানীয় ভাবে পত্রিকা বিলি-বন্টন, বিক্রি ও সৌজন্য সংখ্যা প্রদানে বাধার পাশাপাশি বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় পত্রিকা সরবরাহে তারা বাধা প্রদান করে। আলম বুক স্টলের স্বত্ত্বাধিকারী আলম শিকদার অভিযোগ করেন পত্রিকাগুলো গুদামে ঢুকিয়ে তালা মারার পর হকার নেতারা তার দোকানে তালা ঝুলিয়ে দেয়। একই ভাবে এম রহমান নিউজ এজেন্সি ও রকি বুক স্টলের দু’টি সেন্টারে পত্রিকা বিক্রিতে বাধা প্রদান করা হয়। ঐ দু’ এজেন্টের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, র‌্যাব, পুলিশ সহ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পত্রিকাগুলো সরবরাহের জন্য হকার নেতাদের তারা অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু সাড়ে ৭টার পর বরিশালে কোনো জাতীয় পত্রিকা আসলে তা বিক্রি করতে দেয়া হবে না বলে হকাররা এজেন্টদের জানিয়ে দেয়। এজেন্টরা অভিযোগ করেন তারা হকার সমিতির কয়েক নেতার কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। হকারদের এ আচরণে এখানকার এজেন্ট, পাঠক এবং জাতীয় সংবাদকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়েছে।

প্রতিদিন ভোর ৫টা থেকে সকাল ৭টার মধ্যে বরিশালে এসে পৌঁছায় ঢাকা থেকে প্রকাশিত জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলো। কিন্তু দূর্যোগপূর্ন আবহাওয়ার কারনে গত কয়েকদিন ধরে বরিশালে পত্রিকা আসে বিলম্ব করে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের উপর কারো হাত না থাকায় এ ধরণের সিদ্ধান্তকে আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন এজেন্ট ও সাধারণ হকাররা। 

কিছুদিন আগেও কয়েকবার সংবাদপত্র পরিবহন ঠিকাদার, এজেন্ট এবং হকারদের মধ্যে মতবিরোধ হয়েছিল। সর্বশেষ শুক্রবার বরিশালে পত্রিকা পৌঁছে বেলা সাড়ে ১১টায়। এ নিয়ে ঐ দিন পরিবহন ঠিকাদার এবং হকারদের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। হকারররা জানায়, বাকবিতন্ডার জের ধরে ইচ্ছেকৃত ভাবে গতকাল বরিশালে পত্রিকা পৌঁছানো হয়েছে দুপুর ১২টার পর।

এ ব্যাপারে বরিশাল সংবাদপত্র হকার্স ইউনিয়নের সভাপতি মাজাহারুল হক বাদল জানান, শুক্রবার বরিশালে জাতীয় পত্রিকা পৌঁছানো হয় বান্ডিল ভিজিয়ে, তাও আবার বেলা সাড়ে ১১টায়। ঐ দিনই হকাররা তা বিলি করতে অপারগতা প্রকাশ করলেও অনুরোধের পর তারা পত্রিকা বিলি করেন। এ সময় সংবাদপত্র পরিবহন ঠিকাদার আব্দুল হান্নান পরদিন (শনিবার) দুপুর ১টায় পত্রিকা পৌঁছে দেয়ার হুঙ্কার দেয়। এতে অনেক হকার ক্ষুব্ধ হয়। এ নিয়ে মতবিরোধ সৃষ্টি হওয়ায় গতকালের ঘটনা ঘটেছে। বাদলের অভিযোগ শুধুমাত্র পরিবহন ঠিকাদারদের খামখেয়ালীর কারনে বরিশালে পত্রিকা পৌঁছে দেরীতে। আড়িচা পয়েন্টে ছালাম ও রিন্টু এবং পাটুরিয়া পয়েন্টে পরিবহন ঠিকাদার আব্দুল হান্নান সিন্ডিকেট করে মালিকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত সুবিধা আদায় করে। পত্রিকা মালিকের আর্থিক লাভ ও হকারদের ক্ষতি সাধণের বিষয়টি তারা আমলে নেয় না। পরিবহন ঠিকাদার ও এজেন্টদের মধ্যে সখ্যতা থাকায় হকাররা বঞ্চিত হচ্ছে।  আগের মতো একেক পত্রিকা একেক পরিবহনে বরিশালে পৌঁছে দেয়ার জন্য তারা দাবী জানান। অন্যথায় বরিশালে পত্রিকা বিক্রি বন্ধ থাকবে বলে বাদল দাবী করেন।

রকি নিউজ এজেন্সির হুমাউন কবির জানান, ইচ্ছে করে কোন পত্রিকা দেরীতে বরিশালে পৌঁছানো হয় না। হয়তোবা দু’এক ঘন্টা দেরী হতে পারে। তাই বলে বিলি বন্ধ করা অন্যায়। তারা (হকার) স্বৈরাচারী কায়দায় একক সিদ্ধান্তে পত্রিকা বিক্রি ও সরবরাহ বন্ধ করে সকলকে জিম্মি করে ফেলেছে। তারা কথায় কথায় আন্দোলন করে আমাদের ব্যবসায়ীক লোকসান করছে। ঢাকার পত্রিকার মালিকরা এর কোনো প্রতিকার না করলে ব্যবসা করা মুশকিল হয়ে যাবে।

বরিশালের সংবাদপত্র এজেন্ট, পাঠক এবং সংবাদকর্মীরাও হকার নেতাদের কাছে জিম্মি বলে অভিযোগ করেন সংবাদপত্র এজেন্টরা। জাতীয় পত্রিকার সাংবাদিকদের পর্যন্ত গতকাল সৌজন্য সংখ্যা সরবরাহ প্রদানে বাধা দেয় হকার নেতারা। ফলে শত শত বান্ডিল পত্রিকা গুদামে পড়ে থাকলেও কোনো পাঠক তা পড়তে পারেনি।