আগৈলঝাড়ার ৫০ বছর পুরাতন কুটিরশিল্প

থেকে পিছিয়ে পরা বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার গ্রামটির নাম মোহনকাঠী হলেও বর্তমানে ওই গ্রামকে সবাই “আগৈলঝাড়ার চাই পল্লী” বা (মাছ মারা ফাঁদ) নামেই পরিচিত। নানাবিধ সমস্যার মধ্যে ওই গ্রামের প্রায় দু’শ পরিবার এখনও বংশ পরস্পরায় চাই তৈরির পেশাকে আকঁড়ে ধরে রেখেছেন। চাই (মাছ মারা ফাঁদ) তৈরির প্রধান উপকরন বাঁশ, বেঁত ও লতার মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকেই অর্থাভাবে মহাজনদের কাছ থেকে দাদন ও বিভিন্ন এনজিও কিংবা গ্রাম্যসুদি মহাজনদের কাছ থেকে টাকা এনে এ ব্যবসা করছেন। এ কুটির শিল্প ‘চাই পল্লী’টিকে টিকিয়ে রাখতে হলে প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। সরকারি ভাবে সহজ শর্তে ঋণ বিতরন করা হলে এ পল্লীর শ্রমজীবিরা তাদের দীর্ঘদিনের পেশাকে টিকিয়ে রেখে পরিবার পরিজন নিয়ে সুখে স্বাচ্ছন্দে বসবাস করতে পারেন। দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে চাই তৈরি করছেন মোহনকাঠী গ্রামের মৃত হরিচন্দ্র হালদারের পুত্র ভবরঞ্জন হালদার (৬০)।

একান্ত আলাপকালে জানান, তার পিতা হরিচন্দ্র হালদার, ঠাকুর দাদা গনেশ চন্দ্র হালদার তার পিতা রায় চাঁন হালদারসহ তাদের পূর্বের ৬ পুরুষ এ চাই তৈরির পেশায় ছিলেন।চাই তৈরির প্রধান উপকরন হচ্ছে তল্লা বাঁশ, বেঁত ও কৈয়া লতা। বতর্মানে বেঁত দুস্পাপ্র হওয়ায় বাঁশ ও লতা দিয়েই চাই তৈরি করা হয়। কুয়াকাটা, চট্টগ্রাম, কাপ্তাইসহ পাহারী অঞ্চল থেকে পাইকাররা কৈয়া লতা ক্রয় করে আনেন। তাদের কাছ থেকে কাফা (এক মুঠ) দুই থেকে আড়াই’শ টাকায় ক্রয় করা হয়। তারা আরো জানান, পানি বৃদ্ধি হলেই চাইয়ের কদর বেড়ে যায়। দুই’শ টাকার তল্লা বাঁশ, দুই’শ টাকার কৈয়ালতা দিয়ে একেকজন শ্রমিক ৫দিনে এককুড়ি (২০টি) চাই তৈরি করতে পারেন। মহাজনদের কাছ থেকে দাদন আনার ফলে তাদের কাছে প্রতি কুড়ি চাই পাইকারী হিসেবে বিক্রি করা হয় ১২ থেকে ১৬’শ টাকায়। বাজারে যার দাম ১৮ থেকে ২২’শ টাকা। মোহনকাঠী গ্রামের তৈরিকৃত চাই স্থানীয় মাহিলাড়া, পয়সারহাট, সাহেবেরহাট, ধামুরাসহ বানারীপাড়া, স্বরূপকাঠী, ভোলা, ঘাঘর, শশীকর, নবগ্রাম, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, খুলনা ও যশোরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার হাট-বাজারে বিক্রি করা হয়। চাই পল্লীর বাসিন্দারা এ হস্তশিল্পটিকে টিকিয়ে রাখতে সরকারি ভাবে সহজ শর্তে ঋণ বিতরন। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের কুটিরশিল্প ‘চাই পল্লী’টিকে টিকিয়ে রাখতে হলে প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা।