বিএনপি-জামায়াতের হামলার আশংকায় গৌরনদী ও আগৈলঝাড়ার নির্যাতিতরা

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে জোট ক্যাডারদের নির্যাতনের শিকার সংখ্যালঘু ও আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মীদের তথ্য সংগ্রহের জন্য সরকারি ভাবে গঠিত তদন্ত কমিশন আজ রবিবার বরিশাল সার্কিট হাউজে বসে নির্যাতিতদের অভিযোগ শুনবেন।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালের ১ অক্টোবর জাতীয় সংসদ নির্বাচনোত্তর বিএনপি-জামায়াতের চারদলীয় জোটের নেতা-কর্মী ও ক্যাডারদের হাতে বরিশালের গৌরনদী-আগৈলঝাড়া উপজেলার ৫ শতাধিক পরিবার নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। প্রানের ভয়ে তখন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন ও আওয়ামীলীগ সমর্থিত নেতা-কর্মীরা বাড়ি ঘর ছেড়ে গোপালঞ্জের রামশীল ও কালকিনির দর্শনাসহ বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় নিয়েছিল।

গৌরনদী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি, নির্যাতিত কালিয়া দমন গুহ, আওয়ামীলীগ নেতা প্রনব রঞ্জন ওরফে বাবু দত্ত ও গোলাম হেলাল মিয়াসহ একাধিক নেতা-কর্মীরা জানান, ২০০১ সালের ১ অক্টোবর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ৪ দলীয় জোটের নেতা-কর্মী ও ক্যাডাররা গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলার সংখ্যালঘু অধ্যুষিত পতিহার গ্রামের ১০২ টি, বিল্লগ্রাম এলাকার ৯০ টি, ধানডোবা গ্রামের ৩২ টি, মৈস্তারকান্দির ২০ টি, চাঁদশীর ৪০ টি, খাঞ্জাপুরের ৩০ টি, জঙ্গলপট্টির ২৫টি, বার্থী গ্রামের ১০ টি, বাগিশেরপাড়ের ১২ টি, ইল্ল¬া গ্রামের ১০ টি, গেরাকুল গ্রামের ১৫টি পরিবার ও আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহারের ৫০ টি, রামানন্দের আঁক গ্রামের ৩৫ টি, বাহাদুরপুরের ৩২ টি, সুতার বাড়ির ২০ টিসহ ৫ শতাধিক পরিবারের বাড়ি-ঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগসহ দু’উপজেলায় ৭টি হত্যাকান্ড ও অর্ধশত নারীকে ধর্ষণ করে। হামলাকারীরা এ দু’উপজেলার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ঘরের মধ্যে থাকা ঠাকুর মন্দিরের প্রতিমা ভাংচুরসহ লুটপাট করে নিয়ে যায়।

চারদলীয় জোট ক্যাডারদের হামলার ভয়ে ১লা অক্টোবর রাত থেকে সংখ্যালঘু পরিবারের যুবক-যুবতীসহ আওয়ামীলীগ সমর্থক ১০ সহস্রাধিক নেতা-কর্মী, এমনকি এ আসনের আওয়ামীলীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের সাবেক চীফ হুইপ আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহসহ অসংখ্য নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা রাতের আধাঁরে পালিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে যান। এদের মধ্যে অধিকাংশ নেতা-কর্মীরা কোটালীপাড়ার রামশীল, নারিকেল বাড়ি, নৈয়ারবাড়ি, পীরেরবাড়ি, বাঘমারা, কালকিনির শশীকর, দর্শনা, নবগ্রাম, গোপালপুর এলাকায় আশ্রয় নিয়েছিলো। এমনকি অনেকেই ভারতে চলে যান।

যারা বাড়িতে ছিল তারা জোট ক্যাডারদের ধার্যকৃত মোটা অংকের চাঁদা দিয়ে থাকতে হয়েছে। জোট ক্যাডারদের ভয়ে যারা এলাকা ছেড়ে ছিল তাদেরকে চাঁদা দিয়ে বাড়িতে ফিরতে হয়েছিলো। চারদলীয় জোটের ক্যাডারা বার্থী বাজার ও গৌরনদী বাসষ্ট্যান্ড, ভূরঘাটা বাসস্ট্যান্ড, মাহিলাড়া বাসষ্ট্যান্ড, নিমতলা বাসষ্ঠ্যান্ডসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় চেক পোষ্ট বসিয়ে আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীদের যেখানে পেয়েছিল সেখানে বসেই মারধর করেছিল।

মেদাকুল বাজারের চা বিক্রেতা সুবল, বাগিশেরপাড়ের শংকর নন্দি, সুনীল নন্দিসহ অনেকেই জানান, তদন্ত কমিশনে গেলে ভবিষ্যতে হামলাকারীরা পুনরায় তাদের বাড়ি ঘর ভাংচুর, লুটপাটসহ প্রাননাশের ঘটনা ঘটাতে পারে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল জেলার যেকোন এলাকার নির্যাতিতরা আজ রবিবার সকাল নয়টায় বরিশাল সার্কিট হাউসে উপস্থিত হয়ে কমিশনের কাছে তাদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা বর্ণনা করতে পারবেন। কমিশনের সম্মুখে উপস্থিত হয়ে ২০০১ সালের নির্বাচনোত্তর আওয়ামীলীগ সমর্থক নেতা-কর্মী ও সংখ্যালঘু পরিবারের লোকজন চারদলীয় জোট সরকারের সন্ত্রাসীদের হাতে নির্যাতনের ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিতে কমিশনের পক্ষ থেকে ইতিপূর্বেই আহবান করা হয়েছে।

সূত্রমতে, গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলা প্রশাসনকে কমিশনের কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত করা হয়। নির্বাহী কর্মকর্তাদ্বয় কমিশনকে তথ্য দেয়ার জন্য স্ব-স্ব উপজেলার নির্যাতিতদের কমিশন সম্পর্কে অবহিত করতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পরামর্শ দিয়েছেন।

২০০১ সালের নির্বাচনের পর (১৫ অক্টোবর) গৌরনদী ও আগৈলঝাড়ায় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা স্বচক্ষে দেখার জন্য তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী সর্বপ্রথম গৌরনদী-আগৈলঝাড়ায় সফর করেন। ওইসময় তিনি অত্যাচার নির্যাতন বন্ধের জন্য কোন পদক্ষেপ গ্রহন না করে হ্যালিকপ্টার যোগে এলাকা পরিদর্শন করে চলে যান।
হত্যা মামলাসহ ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনায় গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া থানায় একাধিক অভিযোগ দায়ের করা হলেও চারদলীয় জোট সরকারের আমলে থানা থেকে অভিযোগগুলো গায়েব হয়ে যায়।