বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ছাত্র সংসদ (বাকসু)’র তহবিলের টাকা লোপাট করতে এবার অগণতান্ত্রিক পন্থায় গঠিত হয়েছে অস্থায়ী কর্ম পরিষদ। বিসিসি মেয়র শওকত হোসেন হিরনের চাপে বি এম কলেজের কিছু শিক্ষক অবৈধ এ পন্থায় ছাত্রলীগ নামধারী ক্যাডারদের বাকসু’র নেতৃত্বে বসিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে বিএম কলেজ শাখা ছাত্র লীগের একাংশ ঐ ছাত্র কল্যান পরিষদকে প্রত্যাক্ষান করে গতকাল নগরীর একটি রেস্তোরায় সংবাদ সম্মেলন করেছে । সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য রাখেন যুগ্ম আহ্বায়ক মাছুদুল আলম মাসুদ ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এ কমিটি গঠন করার নেপথ্যে রয়েছে বাকসু’র তহবিলে জমা হওয়া সাড়ে তিন কোটি টাকা। ২০০২ সাল থেকে এ বছর পর্যন্ত বি এম কলেজের ছাত্র সংসদ’র তহবিলে জমা হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা। আর এ বিশাল অংকের টাকা লোপাট করতেই অগণতান্ত্রিক পন্থায় বি এম কলেজের মেয়রপন্থি ছাত্রলীগ নামধারী ক্যাডারদের নিয়ে গঠিত হয়েছে ঐ অস্থায়ী কর্ম পরিষদ। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রনালয় থেকে নেতিবাচক সিদ্ধান্ত আসার পর কোন উপায় না দেখে মেয়র তার প্রভাব খাটিয়ে অধ্যক্ষকে দিয়ে এ কমিটি গঠন করিয়েছেন।
বিএম কলেজের ছাত্র সংসদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যদি কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের পরিস্থিতি না থাকে তাহলে কলেজের নিয়মিত ছাত্রদের দ্বারা অস্থায়ী কর্ম পরিষদ গঠন করা যায়। তবে এক্ষেত্রে কলেজের সকল ছাত্র সংগঠনের অংশগ্রহন নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তেু যে অস্থায়ী কর্ম পরিষদ গঠন করা হয়েছে তাতে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের কোন প্রতিনিধি নেই। এমনকি ছাত্রলীগের একটি অংশও অগনতান্ত্রিক উপায়ে করা ঐ কমিটির কাছে বাকসু’র নেতৃত্ব হস্তান্তরে আপত্তি জানিয়েছে।
অস্থায়ী কর্ম পরিষদ’র ভিপি পদে কট্টর মেয়রপন্থি ছাত্রলীগ ক্যাডার মঈন তুষার ও জিএস পদে নাহিদ সেরনিয়াবাত কে দ্বায়িত্ব দেয়া হয়েছে। মঈন ও নাহিদ ইতিমধ্যে অধ্যক্ষসহ শিক্ষকদের লাঞ্চিত করে ও ক্যাম্পাসে সশস্ত্র মহড়া দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের মাঝে ত্রাস হিসেবে আর্বিভূত হয়েছেন। এছাড়া মঈন তুষার ও নাহিদ সেরনিয়াবাত এদের একজনও বি এম কলেজের নিয়মিত ছাত্র নন বলে অভিযোগ ছাত্রলীগের একাংশের। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আর দু’মাস পরই মঈন ও নাহিদের ছাত্রত্ব শেষ হয়ে যাবে। এরপরও মেয়রের আশির্বাদপুষ্ট হওয়ায় বাকসু’র গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করে তাদেরকে নিয়ে এ কমিটি গঠনকরা হয়েছে। মাত্র দু’মাস যাদের ছাত্রত্ব আছে এবং কলেজের নিয়মিত ছাত্র নন তাদের দিয়ে কিভাবে একটি ছাত্র কল্যান পরিষদ গঠন করা হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাধারন ছাত্ররা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ছাত্রলীগ কর্মী জানান, মুলত মেয়রের প্রতিপক্ষ নেতাকর্মীদের লাঞ্চিত করার পুরষ্কার হিসেবেই এ ক্যাডারা অনিয়মিত ছাত্র হওয়ার পরেও এ পদ দিয়ে বাকসু’র তহবিল লোপাট করার সুযোগ পেয়েছে ।
এ অস্থায়ী কর্ম পরিষদ অগনতান্ত্রিক কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বি এম কলেজের অধ্যক্ষ ড: ননী গোপাল দাস বলেন, ১৯৮৯ সালে এমন একটি অস্থায়ী কর্ম পরিষদ গঠন করা হয়েছিল। আর অনিয়মিত ছাত্রদের নিয়ে অস্থায়ী কর্ম পরিষদ গঠনের ব্যাপারে তিনি বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এদেরকে অনিয়মিত ছাত্র হিসেবে ধরলেও প্রকৃতপক্ষে তারা অনিয়মিত ছাত্র নন। আমরা শুধু আমাদের বিভিন্ন কাজকর্মে সহযোগিতার জন্য তাদেরকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেছি। অস্থায়ী কর্ম পরিষদ গঠন করার বিষয়ে কোন ধরনের চাপ ছিল কিনা এবিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, আমরা নিজে থেকেই এ কমিটি গঠন করছি। চাপে পড়ে এটা করা হয়নি ।