বেআইনী প্রকল্প অনুমোদন না দেয়ায় অভিযোগ করা হচ্ছে

প্রোগামের (এলজিএসপি) প্রশিক্ষণ কর্মশালা বুধবার বর্জন করেছে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা। নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্জয় চক্রবর্তীর ‘প্রস্তাবিত প্রকল্প’ বাতিল করায় এডিবি বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। এছাড়াও অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসূচির টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এসব ঘটনার প্রতিবাদে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা গতকাল প্রশিক্ষণ কর্মশালা বর্জন করেন। উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, সচিব ও ইউপি সদস্যসহ ৭০ জন এ প্রশিক্ষণে অংশ গ্রহণ করার কথা থাকলেও শুধু মাত্র একটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও পাঁচটি ইউনিয়নের সচিবরা প্রশিক্ষণে অংশ নেন।

কেন প্রশিক্ষণ কর্মশালা বর্জন করেছেন, এ প্রশ্নের জবাবে কুলকাঠি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এইচএম আখতারুজ্জামান বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নানা অনিয়ম ও দুর্ণীতির প্রতিবাদে আমরা এলজিএসপির প্রশিক্ষণ বর্জন করেছি। প্রয়োজনে আরো কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।’

অভিযোগে জানাযায়, নলছিটিতে এডিবির (এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক) বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে সাজানো প্রকল্প তৈরি করে নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্জয় চক্রবর্তী  লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। নলছিটি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ইউপি সদস্যদের শুধুমাত্র কাগজে কলমে প্রকল্প চেয়ারম্যান দেখানো হয়। কোন কোন ইউপি সদস্যকে দু’বার প্রকল্প চেয়ারম্যান করা হয়েছে। নিয়মানুযায়ী প্রকল্প চেয়ারম্যানরা প্রকল্পের কাজ করবেন এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বিল-ভাউচার জমা দিয়ে টাকা উত্তোলন  করবেন। কিন্তু ওই কর্মকর্তা সাজানো প্রকল্পের চেয়ারম্যানদের অফিসে ডেকে নিয়ে বিল-ভাউচারে স্বাক্ষর রেখে তাদের বিদায় করেন । এসময় কোন কোন প্রকল্প চেয়ারম্যানকে মাত্র ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে বিদায় দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। ওই প্রকল্পের জন্য কি কি মালামাল আর তা কোথা থেকে কেনা হয়েছে  প্রকল্প  চেয়ারম্যানরা তার কিছুই জানেন না।

তারা প্রকল্প চেয়ারম্যান হলেও  বিল ভাউচারে স্বাক্ষর রাখার সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাদের জানান, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইন্টারনেট মডেম ও পেনড্রাইভ সরবরাহের জন্য এ টাকা ব্যয় করা হবে।’

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্জয় চক্রবর্তী সাংবাদিকদের বলেন, ‘এলজিএসপির প্রশিক্ষণে চারটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা উপস্থিত না হলেও মোল্লারহাট ইউপি চেয়ারম্যান আবদুস ছালাম ও ইউনিয়ন পরিষদের সচিব এবং সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।’ ইউপি চেয়ারম্যানদের অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘বেআইনিভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন করিনি বিধায় অনেকে অভিযোগ করতেই পারে। নিয়ম অনুযায়ী এডিবির টাকা দিয়ে ১৬টির বেশি প্রকল্প করা যাবে না, অথচ ১০২টি প্রকল্প করার জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান আমাকে বলেছিলেন, আমি তাতে রাজি হইনি।’

এব্যাপারে নলছিটি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইঞ্জি: অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, ‘২০১০-২০১১ অর্থ বছরের নলছিটিতে এডিবির মোট বরাদ্দ আসে ৫৮ লাখ টাকা এর মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ৮ লাখ ৩৭ হাজার টাকা লুটপাট করে। বাকি টাকা সময়মত প্রকল্প বাস্তবায়ন করে ব্যয় করতে না পারায় প্রকল্পটি বাতিলের পথে। ইতিপূর্বে ইউএনও অনুমোদন ছাড়া ১০টি প্রজেক্ট কমিটি করে এডিবির অর্থ লুটপাট করেছে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়নমের অভিযোগ পাওয়া গেছে।’

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১০-২০১১ অর্থ বছরের এডিবির বরাদ্দ থেকে গত বছরের (২০১০) ৫ ডিসেম্বর কুলকাঠি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য হুমায়ুন কবিরকে প্রকল্প চেয়ারম্যান করে তার নামে সরকারি ভ্যাট বাদ দিয়ে ৬১ হাজার ৮২১ টাকা, একই ইউপির সাবেক সদস্য হাবিব হাওলাদারের নামে ৮১ হাজার ২১৭ টাকা, মোল্ল¬ারহাট ইউপির সাবেক সদস্য নওয়াব আলীর নামে ৮১ হাজার ২১৭ টাকা, একই ইউপির জামাল হোসেনের নামে ৮৫ হাজার ৯৪৪ টাকা, একই বছরের ২৯ ডিসেম্বর দপদপিয়া ইউপি সদস্য মুনছুর খন্দকারের নামে ৮১ হাজার ২৭০ টাকা, চলতি বছরের (২০১১) ৫ জানুয়ারি দপদপিয়া ইউপির সদস্য হাবিব সিকদারের নামে ৮০ হাজার ৪৩৭ টাকা, মোল্ল¬ারহাট ইউপির সাবেক সদস্য মো. শাহ আলমের নামে ৮০ হাজার ৫০ টাকা, ২৪ ফেব্র“য়ারি ফের মোল্লারহাট ইউপির সাবেক সদস্য মো. শাহ আলমের নামে ৮২ হাজার ৫৬০ টাকা, নওয়াব আলীর নামে ৮২ হাজার ৫৬০ টাকা, এছাড়া আরো এক সদস্যর নামে (নাম জানা যায়নি) ৬ জানুয়ারি ৮১ হাজার ২৭০ টাকাসহ রানাপাশা ও সুবিদপুর ইউনিয়নের আরো কয়েকজন ইউপি সদস্যর নামে অনুরূপভাবে টাকা উত্তোলন করে তা রেখে দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। ওই টাকা দিয়ে ৬০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একটি করে ইন্টারনেট মডেম ও পেনড্রাইভ সরবরাহ করা হয়। এতে ব্যয় হয়েছে সর্বোচ্চ দুই লাখ ১৬ হাজার টাকা। বাকি টাকা বিভিন্ন খাতে ব্যয়ের বিল-ভাউচার দেখিয়ে আতœসাৎ করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

এডিবির বরাদ্দের প্রকল্প চেয়ারম্যান মোল্লারহাট ইউপির সাবেক সদস্য নওয়াব আলী বলেন, আমাকে ইউএনও অফিসে ডেকে নিয়ে দু’টি প্রকল্পের বিল-ভাউচারে স্বাক্ষর নেওয়া হয়। যাতায়াত বাবদ আমাকে ৫০০ টাকা দেওয়া হয়। বাকি টাকা কোথায় কিভাবে খরচ করা হয়েছে তা আমি জানি না।’ একই ইউপির জামাল হোসেন বলেন,  ইউএনও স্যার বলেন, ‘এ প্রকল্পে অনেক ব্যয় হবে অপনাকে তেমন কিছু দিতে পারলাম না।’ পরে তাকে ৩০০ টাকা দিয়ে বিদায় করা হয়। কোথায় কিভাবে টাকা ব্যয় হয়েছে তিনি কিছু বলতে পারেননি। শুধু কাগজে স্বাক্ষরই  দিয়ে এসেছেন।’

কুলকাঠি ইউপির সাবেক সদস্য হুমায়ুন কবির জানান, আমি প্রকল্প চেয়ারম্যান হলেও আমাকে কোন টাকা দেওয়া হয়নি। আমি শুধুমাত্র ইউএনও অফিসে গিয়ে স্বাক্ষরই দিয়েছি।’ অন্যান্য প্রকল্প চেয়ারম্যানরাও একই কথা বলেছেন।