চারণকবি রবি সরকারের জীবনাবাসন

মেডিকেল কলেজে চিকিৎসারত অবস্থায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬:৪৫ মিনিটে চারণকবি রবি সরকার (৮৯) শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে স্ত্রী এক পুত্র চার কন্যা আত্মীয়স্বজন ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে যান। গতকাল শুক্রবার দুপুর ১২ টায় নিজ বাড়িতে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সাতলা গ্রামে সমাধীস্থ করা হয়। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ কবি পরিষদ, বরেন্য কবি প্রশান্ত সরকার মহাদেব সরকার, মীরা সরকার, সপন সরকার, নিশি সরকার, সম্রাট সরকার, সহদেব সরকার, ছন্দ্যা সরকার, অজয় হালদার, শোক প্রকাশ করেন। ১৯৩১ সালে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার দুর্গম সাতলা গ্রামে রবি সরকার জন্মগ্রহণ করেন। পিতা দেবেন্দ্রনাথ বায়েন, মাতা মহামায়ার সাধরন পরিবারে জন্ম নিলেও মাত্র ১০ বছর বয়সে বালক রবি উপমহাদেশের প্রখ্যাত কবিয়াল প্রয়াত বিজয় সরকার ও রাজেন সরকারের নিকট কবিগানে তালিম নেন। দুই বাংলার বিভিন্ন জনপদে রবি সরকার সারাজীবন কবি ও বাউল গান শুনিয়ে মাতোয়ারা করেছেন গ্রাম বাংলার কবি ভক্তদের। বাউল, ভক্তিমূলক, দেশত্ববোধক বহু গানের রচয়িতা ও সুরকার রবি সরকার। ভক্তিমূলক ‘‘দুলর্ভ মানব জনম পেয়ে অভাগার কি ফল’’ ও স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন ‘‘সুজলা সুফলা শ্যামলা সোনার বাংলা নাম- সারাদেশের চাইতে ভাইরে বাংলার বেশি দাম’’ এছারা যুদ্ধকালীন সময় সংগ্রামী গান গেয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস জুগীয়েছেন রবি সরকার। বঙ্গবন্ধু সরকারের মন্ত্রী শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত যুদ্ধকালীন সময় সংগ্রামী গানের জন্যে রবি সরকারকে সনদ প্রদান করেন।   ঝালকাঠীর কবি সম্মেলন পর পর দুইবার শ্রেষ্ট কবির সর্নপদক প্রাপ্ত হন তিনি, এছারা কবি সংগঠন বঙ্গবুলবুল কবিরত্ন উপাধিতে ভূষিত করেন রবি সরকারকে। সাতলা গ্রামের নিজ বাড়ির সামনেই কবিকুঞ্জ নামে একটি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেছেন রবি সরকার। গ্রাম বাংলার মেঠোপথের বটের ছায়ায়, আশ্রম, আঙ্গিনায় বাউল ও কবি শিল্পীদের গানে মাতোয়ারা হাজার হাজার মানুষকে মনের খোরাক যোগালেও কালের আবর্তে বিজ্ঞানের ছোঁয়ায় এখন আর তেমন কবি বা বাউল গানের আসর বসে না। প্রয়াত কবি বিজয় সরকার, রাজেন, রশিক, নকুল, মনোরঞ্জন, লালমোহন, ত্রৈলক্ষ্য পথ ধরে চারণকবি রবি সরকারের চিরবিদায় যেন এক কবি শিল্পীর শূন্যতা।