ফরেন বডি পেটে রেখেই রোগির অপারেশন সম্পন্ন!

পেলেন না ডা. প্রশান্ত। বিভিন্ন সংবাদপত্রে ডা. প্রশান্তর ভুল ও অপচিকিৎসা সম্পর্কে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হলে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রকাশিত সংবাদ উদ্দেশ্য প্রনোদিত ও বানোয়াট দাবি করে গত ২৩ জুন আগৈলঝাড়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সন্মেলন করে নিজের পক্ষে সাফাই স্বাক্ষি দেয়ার একদিন পর ২৪ জুন ভুক্তভোগি রোগি উপজেলার আহুতি বাটরা গ্রামের অসুস্থ জবা মন্ডল নিজ বাড়িতে সাংবাদিকদের ডেকে ডা. প্রশান্তর অপচিকিৎসার লিখিতভ বিস্তারিত বর্ননা তুলে ধরেন।

জবার অভিযোগ মতে, পেটের ব্যাথা নিয়ে জবা এমবিবিএস ডা.প্রশান্তর শরনাপন্ন হলে বিভিন্ন পরিক্ষা নিরীক্ষা করে তাকে এপেনডিসসসাইটিস অপারেশন করার পরামর্শ দেন। সে অনুযায়ী উপজেলার রাজিহার গ্রামের সরকার অননুমোদিত মারিয়া মাদার চাইল্ড কেয়ার ক্লিনিকে অপারেশন করা হয় জবাকে। অপারেশনের পর জবা দির্ঘ দিনেও সুস্থ না হলে পুনরায় একাধিকবার ডা. প্রশান্তর কাছে এলেও তার দেয়া ওষুধে জবা সুস্থ না হওয়ায় তাকে ওভারী অপারেশন করার কথা বলেন ওই ডা. প্রশান্ত। সুস্থ হওয়ার আশায় একই ক্লিনিকে জবার ওভারী অপারেশন করেন প্রশান্ত। এতে জবা সুস্থ না হয়ে বরং আরও অসুস্থ হয়ে অবস্থার চরম অবনতি হয়। পরে বাধ্য হয়ে চলতি বছর ২ মার্চ জবা বরিশাল ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল এর ডা.মনিরুল আহসানকে দেখান। তিনি জবাকে একাধিক পরিক্ষা নিরীক্ষা করিয়ে বলেন, রিপোর্টে কিছু বোঝা যাচ্ছেনা,তবে অপারেশনের যায়গা খুলে দেখতে হবে। পরবর্তীতে ৬ মার্চ বরিশাল সদর হাসপাতালের  সার্জারী বিশেষজ্ঞ ডা. রনজিৎ মল্লিককে দেখান জবা। তিনিও ডা.মনিরুল আহসানের মত একই কথা বলেন। পরে জবাকে নেয়া হয় বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের সার্জারী বিশেষজ্ঞ ডা.সরফুদ্দিন রুবেলের কাছে। তিনি জবার সুস্থতার জন্য পুনরায় চলতি বছরের ২৭ মার্চ  তৃতীয়বারের মত অপারেশন করেন। অপারেশন পরবর্তি সময়ে জবা ও তার স্বজনদের ডা. সরফুদ্দিন জানান, জবার পেটে ফরেন বডি পাওয়া গেছে এবং নাড়ি পেচানো ছিল, যার কারনে নাড়িতে পচন ধরেছিল। গ্রামের একটি ক্লিনিকে অভিজ্ঞ ডাক্তার ও লাইফ সাপোর্ট ছাড়া কিভাবে এরকম একটি অপারেশন করা হল তা নিয়ে বিশ্ময় প্রকাশ করেন শেবাচিমের ডাক্তাররা। দীর্ঘ ৪৪ দিন শেবাচিমে চিকিৎসা শেষে বর্তমানে জবা বাড়িতে অবস্থান করছেন। এদিকে ডা. প্রশান্ত জবার কি চিকিৎসা বা অপারেশন করেছেন তার রোগ নির্নয় ও বিবরণের কোন কাগজপত্র ছাড়পত্র হিসেবে রোগিকে দেননি বলে অভিযোগ করেন তারা। আরও অভিযোগ ভুল চিকিৎসা করেও অন্য কোন ডাক্তারের কাছে জবাকে চিকিৎসা নিতে দেননি ডা. প্রশান্ত।

এদিকে ডা. প্রশান্তর অপচিকিৎসার প্রতিকার চেয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়, সিভিল সার্জন সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছে জবার ছেলে স্কুল শিক্ষক নরেশ মন্ডল। অভিযোগের প্রেক্ষিতে সিভিল সার্জন ডা. অনিল চন্দ্র দত্ত গৌরনদী হাসপাতাল পঃপঃ কর্মকর্তা ডা. রবীন্দ্র নাথ গাইনকে ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। ডা. রবিন ব্যাক্তিগত কারনে মৌখিকভাবে তার দ্বায়ীত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন বলে সিভিল সার্জন সাংবাদিকদের জানিয়ে আরও বলেন, জবার চিকিৎসার কাগজপত্র পর্যালোচনা করে জানান-ডা. প্রশান্ত যে জবার ভুল চিকিৎসা করেছে তার প্রমান শেবাচিমের ডাক্তারদের কাগজে পাওয়া গেছে। তিনি ঘটনা তদন্তেও জন্য ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করেছেন। তাদের রিপোর্টের পর ড. প্রশান্তর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানান। এসময় তিনি আরও জানান, বরিশালে সরকার অনুমোদিত বিভিন্ন ডায়াগনিষ্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকের তালিকা র‌্যাব-৮ তার অফিস থেকে সংগ্রহ করেছে। ভুয়া ক্লিনিক ও  ডায়াগনিষ্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে সহসাই ঝটিকা অভিযান পরিচালিত হবে।