দক্ষিনাঞ্চলে শুরু হচ্ছে গুচ্ছগ্রাম কর্মসূচি

উদ্বাস্তুদের স্থায়ী আবাসনের লক্ষে গুচ্ছগ্রাম কর্মসূচী। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে বরিশালে যারা ভূমিহারা ও গৃহহারা হয়েছে তাদেরকে স্বাবলম্বী করে তুলতেই এ সিভিআরপি বা গুচ্ছ গ্রাম প্রকল্প। সম্প্রতি বরিশাল সার্কিট হাউজে বরিশাল জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এবং প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ইউনিট (পিএমইউ) এর আয়োজনে এক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার সন্তোষ রঞ্জন তালুকদার। এছাড়া গুচ্ছগ্রামের এনডিপি হাসান ইমামের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মোঃ মসিউর রহমান। উক্ত সেমিনারে এডিসি রেভিনিউ ইউএনও, এসিল্যান্ড, উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার, পিআইও এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের উপস্থিতিতে গুচ্ছগ্রাম কর্মসূচির বাস্তবায়ন পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দেন গুচ্ছগ্রামের বিভিন্ন প্রজেক্টের পরিচালকবৃন্দ। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। এ সেমিনারের মধ্যে দিয়ে বরিশালের ৮ উপজেলায় কাজ শুরু হবে বলে জানান প্রকল্পের জিপিডি (এইচআরডি) মোঃ নুরুল আমিন। দৈনিক গনকন্ঠকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, বরিশাল অঞ্চলের যে সব মানুষ বন্যা, ঘূর্ণিঝড়সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে গৃহহীন বা নদী ভাঙনে ভূমিহীন হয়ে পথে বসেছেন তাদেরকে স্থায়ী আবাসন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের কাজ বরিশালে বিভিন্ন উপজেলার সরকারী খাসজমিতে কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হবে। এই প্রকল্পের আওতাধীন মানুষদের স্বাবলাম্বী করার জন্য তাদেরকে স্বাস্থ্য, প্লোট্রি ফার্ম, বাড়ির আঙিনায় সবজির চাষ, ছোট-বড় খামার, নার্সারি ও ইলেকট্রনিক্স সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এজন্য জেলা প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা প্রয়োজন বলে জানান গুচ্ছগ্রাম কর্মকর্তাগণ। এসব নির্দিষ্ট স্থানে গণশিক্ষা, ভাল যোগাযোগে ব্যবস্থা, বিশুদ্ধ পানি ও সেনিট্রেশনের ব্যবস্থা করা হবে। প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনে নিচুজমি মাটি দিয়ে ভরাট করা হবে এবং পুকুরের জন্য ভিন্ন স্থান নির্ধারণ করা হবে। এছাড়া এসব এলাকায় ক্ষুদ্র ঋণ এর ব্যবস্থা করা হবে এবং গ্রাম ও শহরের বৈষম্য হ্রাস করা হবে। কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পটি কয়েকটি ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে। খাসজমি নির্ধারণ করে সেখানে শিক্ষা, যোগাযোগ, পানি ও সেনিটেশন, স্বাস্থ্য ইত্যাদি সম্পর্কে টেকনিক্যাল পদ্ধতিতে শিক্ষা দিয়ে তা বাস্তবায়নে সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নারী উন্নয়ন ও শিক্ষার ব্যবস্থা করা ও তাদেরকে হাতের কাজ শিক্ষা দেয়া হবে। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প মনিটরিং করছে প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ইউনিট (পিএমইউ)। এর মধ্যে শুধুমাত্র বরিশাল ও রংপুর জেলা রিজিওনাল প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ইউনিট (আরপিএমইউ) এর আওতাধীন। এরা ফিল্ড লেভেলে দুটি ভাগে কাজ করবে, জেলা পরিচালনা করবে জেলা কৃষি ব্যবস্থাপক গঠিত কমিটি এবং উপজেলা পরিচালনায় উপজেলা ব্যবস্থাপনা কমিটি। জেলা পর্যায়ের কমিটিতে চেয়ারম্যান থাকবেন, জেলা ডেপুটি কমিশনার। এ ছাড়াও সদস্য থাকবেন পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এবং কৃষি কর্মকর্তা। এ দিকে উপজেলা ব্যবস্থাপক কমিটিতে চেয়ারম্যান থাকবেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সদস্য হিসেবে থাকবেন উপজেলা কৃষি অফিসার, পুলিশ ইনচার্জ, উপজেলা বন কর্মকর্তা, ইউনিয়ন চেয়ারম্যানবৃন্দ। বরিশালের বিভিন্ন উপজেলায় শত শত পরিবার গৃহহীন ও ভূমিহীন অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন ত্রাণ কর্মসূচি থেকে তারা বরাবরই উপেক্ষিত থেকে যায়। গুচ্ছগ্রাম কর্মসূচির মাধ্যমে এসব ঠিকানাহীন মানুষদের বাসস্থান হবে। বরিশাল গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের আঞ্চলিক পরিচালক মোঃ আশরাফ আলী জানান, বরিশাল বিভাগে ২০টি প্রকল্পে প্রায় ৮০০ পরিবারের বসবাসের জন্য কাজ শুরু হয়েছে গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প। এর মধ্যে ৭টি প্রকল্প বাদে বাকি সবগুলোতেই পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বরাদ্দ না পাওয়া প্রকল্পগুলো হল বাকেরগঞ্জে ১টি, মেহেন্দিগঞ্জে ৪টি ও বানারীপাড়ায় ২টি। এগুলোরও আগামী বছরের মধ্যেই বরাদ্দ হয়ে যাবে বলে জানান কর্মকর্তা। যে সকল জেলা ও উপজেলায় বরাদ্দ হয়েছে সেগুলো হল ভোলার চরফ্যাশন ২টি, লালমোহন ২টি, তজুমদ্দিন ১টি, পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া ১টি, বরগুনার আমতলী ১টি, পটুয়াখালীর দশমিনার ১টি, গলাচিপা ৪টি ও কলাপাড়া ১টি। এ ছাড়াও আরও বরাদ্দ দেয়া হবে বলে জানান গুচ্ছগ্রাম পরিচালক।