বরিশালে বন্ধ হচ্ছে না পাসপোর্ট দালালদের দৌরাত্ম্য

কাস্টমার পাঠালাম। আপনি পুলিশী দৌড়টাও ম্যানেজ করে দিবেন। আমার ভাগটা যেন থাকে। গতকাল সোনালী ব্যাংক বরিশাল কর্পোরেট শাখায় এমনিভাবে দর কষাকষি চলছিল পাসপোর্ট দালালদের। মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এম.আর.পি) নামে অত্যাধুনিক পদ্ধতি চালু করা হলেও দালালদের হাত থেকে নিস্তার পাচ্ছে না পাসপোর্ট করতে আসা বরিশালের সাধারন মানুষ। বিভিন্ন অযুহাতে প্রতারক চক্র গ্রাহকদের কাছ থেকে ৩শ’ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছে। বরিশালের ৩টি সেক্টরে এমন এক ডজন প্রতারক কাজ করছে বলে জানা গেছে। এগুলো হলো বরিশাল পাসপোর্ট অফিস, সোনালী ব্যাংক কর্পোরেট শাখা ও পুলিশের গোয়েন্দা শাখা। ডিজিটাল পদ্ধতিতেও বন্ধ হচ্ছে না পাসপোর্ট দালালদের দৌরাত্ম্য। বরিশালে এসব প্রতারক চক্র প্রকাশ্য কার্যক্রম চালাচ্ছে। তারা কৌশলে দুর-দুরান্ত থেকে আসা ভুক্তভোগিদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের অর্থ। অনুসন্ধানে জানা গেছে, পাসপোর্ট অফিসে গ্রাহক সেবা কেন্দ্র না থাকায় এমন সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এ সুযোগ লুফে নিচ্ছে দালালরা। তারা ফরম পূরণের নামে বিদেশে যেতে ইচ্ছুক সহজ সরল মানুষগুলোকে পটিয়ে ঝুটঝামেলায় ফেলে দেয়। গত রবিবার সকাল ১০টায় সোনালী ব্যাংক বরিশাল কর্পোরেট শাখায় গিয়ে দেখা গেলো বেশ কয়েকজন পাসপোর্ট করানোর জন্য টাকা জমা দিতে এসেছে। অবশ্য প্রত্যেক গ্রাহকের সাথে দেন দরবার চালাচ্ছে ২/৩ জন করে দালাল। হাবিবুর রহমান নামে এক গ্রাহক জানান, তার কাছে ৬ হাজার টাকার বিনিময়ে ২১ দিনে পাসপোর্ট করে দেয়ার প্রতিশ্র“তি দিয়েছে এক ব্যাক্তি। জহিরুল ইসলাম নামে অপর একজন বলেন, ৮ হাজার টাকায় ১৫ দিনে পাসপোর্ট করে দেয়া হবে বলে জনৈক ব্যাক্তি টাকা নিয়েছে। কিন্তু ১ মাসেও সেই কাজ শেষ হয়নি।

বরিশাল বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকারী নিয়ম অনুযায়ী জরুরী পাসপোর্ট ৬ হাজার টাকায় ১৫ দিনে এবং সাধারন পাসপোর্ট ৩ হাজার টাকায় ৩০ দিনে দেয়া হয়। সূত্র জানায়, এই নিয়মের আগে কোন পাসপোর্ট দেয়া সম্ভব হয় না। সোনালী ব্যাংক কর্পোরেট শাখায় গতকাল অবস্থানরত নাসির নামে এক দালাল জানায়, তাদের পাসপোর্ট অফিসে লোক আছে। ঝন্টু নামে অপর এক দালাল জানায়, পুলিশী তদন্ত দ্রুত করার জন্যও তাদের পুলিশ বিভাগে লোক রয়েছে। সুমন নামে অপর এক দালাল জানায়, পাসপোর্ট অফিসের আনসার মনিরের মাধ্যমে তাদের ফাইলগুলো দ্রুত ভিতরে চলে যায়। এরাই ম্যানেজ করে কর্মকর্তাদের। সরেজমিনে পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে সেখানেও দেখা মেললো বেশ কয়েকজন দালালের। পাসপোর্ট অফিসে অবস্থানরত সুমন নামে এক ব্যাক্তি জানান, পুলিশী তদন্ত দ্রুত করার জন্য সিটিএসবি ও জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় ৫শ’ থেকে ১ হাজার টাকা কমিশন নেয় পুলিশ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তরা। সোনালী ব্যাংক কর্পোরেট শাখার প্রশাসনিক অফিসার মোঃ ইউসুফ জানান, এমন অভিযোগের সত্যতা থাকলেও আমাদের এটি দেখার বিষয় না। ব্যাংকের ভিতরে প্রকাশ্যে প্রতারনা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি তার পরিচয় গোপন করে টেলিফোন (৬৫১৪৬) রেখে দেন। এ ব্যাপারে বরিশাল বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মোঃ আল আমিন জানিয়েছেন, ফরম ফিলাপ করতে পারে না বিধায় এক শ্রেণীর দালাল সাধারন মানুষকে ভুল বুঝিয়ে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। তিনি জানান, তার অফিসের কেউ এ বিষয়ে জড়িত নয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মনির নামে এক আনসার সদস্য তার দপ্তরে কর্মরত আছেন।