আগামীকাল কর্মসূচি ঘোষণা-ধীরগতিতে চলার কৌশল বিএনপি

ঘোষণা করবে বিএনপি। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত ২৮ জুন বিকালে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে কর্মসূচি ঘোষণার এ ডেটলাইন ঘোষণা করেন। লাগাতার কর্মসূচিতে কি থাকছে তা তিনি ষ্পষ্ট করে বলেননি। তবে বিক্ষোভ সমাবেশ ও ৪৮ ঘন্টার একটি হরতাল ছাড়া আপাতত বড় ধরনের কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করা হচ্ছেনা তা প্রায় নিশ্চিত। সেক্ষেত্রে ধীর গতিতে চলার কৌশল নিয়েছে বিএনপি।

মির্জা ফখরুলসহ  দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লাগাতার হরতাল, অবরোধ, লংমার্চ ও অসহযোগ আন্দোলনের মতো কর্মসূচির কথা ভাবছে দলটি। তবে তাদের সামনে বড় বাধা বর্ষা মৌসুম ও সামনে রোজার মাস। এ বিবেচনায় কর্মসূচি ঘোষণার আগে তাদেরকে জনমতের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন কৌশল ও ফাঁদে যেন তারা না পরেন সে বিষয়টিও তাদের ভাবতে হচ্ছে।

আগামীকাল রোববার কর্মসূচি ঘোষণার ডেটলাইন থাকলেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কর্মসূচির চুড়ান্ত রুপরেখা প্রনয়ন করা হয়নি। তবে সাম্ভব্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, বিক্ষোভ সমাবেশ ও ৪৮ ঘন্টার একটি হরতাল। সে ক্ষেত্রে আগামী ৪ জুলাই সোমবার বিক্ষোভ সমাবেশ ও ১০-১১ জুলাই রোববার ও সোমবার, কিংবা ১৩-১৪ জুলাই বুধবার ও বৃহস্পতিবার ৪৮ ঘন্টার হরতাল পালনের ঘোষণা দেয়া হতে পারে।  

এরপর দ্বিতীয় পর্যায়ে চারদলীয় জোটের বাইরে সমমনা দল এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করে সংবিধান সংশোধনের বিরুদ্ধে নীতিগতভাবে যেসব দল অবস্থান নিয়েছে তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করে একটি বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার মাধ্যমে আরও কঠোর কর্মসূচি দেয়ার চিন্তা রয়েছে দলটির।
বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ধীরগতিতে আন্দোলন জোরদার করার কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। সেই  কৌশল  থেকেই তাৎক্ষণিকভাবে বড় কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করা যুক্তিযুক্ত বলে মনে করেনি দলের নীতি নির্ধারকরা।

দলের আরেকটি সূত্র জানায়, সংবিধান সংশোধনের বিরুদ্ধে নীতিগতভাবে অবস্থান নিয়েছে যেসব দল তাদের সঙ্গে আলোচনা করবে বিএনপি। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সেসব দলের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা করতে ইতিমধ্যে কয়েকজন সিনিয়র নেতাকে দায়িত্বও দিয়েছেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা চারদলীয় জোটের বাইরে, মুসলিম লীগ, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), বিকল্পধারা বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তি (প্রগশ), প্রগতিশীল ন্যাশনালিষ্ট পার্টি (পিএনপি), লেবার পার্র্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (মতিন), খেলাফত মসলিস, মুসলিম লীগ, ন্যাপ ও এনডিপিসহ কয়েকটি দলের সঙ্গে ইতিমধ্যেই আলোচনা  শুরু করেছেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জনমতকে উপেক্ষা করে একতরফাভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন করে সরকার বিরোধীদলকে আন্দোলনের দিকে ঠেলে দিয়েছে।

তিনি বলেন, জনগণের ভোটের অধিকার ও গণতন্ত্র রক্ষায় আমাদের সামনে আন্দোলনের পথ ছাড়া বিকল্প পথ খালা নই। বর্তমান সরকারের দুরভিসন্ধিমূলক কর্মকা-ের বিরুদ্ধে জনগণ এবং দেশের সকল দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করেই আমাদেরকে রাজপথে নামতে হবে। দেশের গণতন্ত্র, সংবিধান ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হবে। ধাপে ধাপে জনগণের সেই কাক্সিক্ষত আন্দোলন খালেদা জিয়া এগিয়ে নিয়ে যাবেন।

তিনি আরো বলেন, ইতিমধ্যে আমাদের দলের কেন্দ্রীয় নেতারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলসহ সরকারের অগণতান্ত্রিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি করতে দেশের জেলাগুলো সফর করছেন। তাদের সাংগঠনিক সফর শেষ পর্যায়ে। জনগণকে সম্পৃক্ত করেই আমরা বৃহত্তর কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করব।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, তড়িঘড়ি করে সরকারের সংবিধান সংশোধনের এ উদ্যোগ সন্দেহজনক ও ষড়যন্ত্রমূলক। এ বিল পাসের ফলে দেশে নৈরাজ্যকর অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হবে। এরজন্য সরকারই দায়ী থাকবেন।

স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করতে চায়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে তারা দেশকে সংকটের মুখে ঠেলে দিল। এই সংকট মোকাবেলা করা হবে। আগামী দিনের লড়াই হবে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার লড়াই।