গৌরনদীতে ভন্ড পীড়ের আস্তানায় বিক্ষুদ্ব গ্রামবাসীর হামলা | ভাংচুর আহত ২০

গৌরনদী উপজেলার হাপানিয়া গ্রামে কথিত ভন্ড পীড় মালেক শাহর খাদেম বর্তমানে গদীনিশীন পীর দাবিদার প্রতারক আব্দুল হালিমের আস্তানায় চিকিৎসার নামে প্রতরনা ও অসামাজিক কর্মকান্ডের অভিযোগে গত মঙ্গলবার সন্ধায় বিক্ষুদ্ধ গ্রামবাসী হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর করেছে। এসময় হামলায় গ্রামবাসী সহ ২০ জন আহত হয়। গুরুত্বর আহত ৩জনকে উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
সরজমিনে গিয়ে প্রতক্ষদর্শী গ্রামবাসী ও পুলিশর সাথে কথা বলে জানা গেছে, হাপানিয়া গ্রামের জনৈক মালেক শাহ একটি বীমা কোম্পানীতে চাকুরী করতেন। জীবদ্দশায় স্বাভাবিক জীবন যাপন করতেন। ২০০০ সালে তিনি মারা যান। মৃত্যুর পর একই গ্রামের বাসিন্দা ও মাহিলাড়া কলেজের প্রভাষক অব্দুল হালিম মৃত মালেক শাহকে পীর আখ্যায়িত করে হালিম নিজেকে তার খাদেম হিসেবে পরিচয় দেয়। মালেকের নিজ ইচ্ছা অনুযায়ী বসত ঘরের মধ্যে কবর দেয়ার সিদ্বান্ত নেন। এ সময় মালেকের স্ত্রী রাবেয়া বেগম বাধা দেয়।
এ নিয়ে হালিমের সাথে মালেকের পরিবারের বিরোধ সংঘর্ষে রুপ নেয়। পরিশেষে মালেকের সিদ্বান্ত অনুযায়ীই বসত ঘরে কবর দেয়া হয়। সেই থেকে হালিম ওই বাড়িতে হযরত মালেক শাহ মাজার সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে নিজে খাদেম হিসেবে মাজারের দায়িত্ব নেন। মৃত পীরের খাদেম হিসেবে গত ১০ বছর ধরে মালেক সেখানে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা প্রদানের নামে পানি পড়া, গাছরা, ফু ফক্কর দিয়ে প্রতারনা করে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। স্থানীয়রা জানান, আঃ হালিম চিকিৎসার নামে সাধারন মানুষের সাথে শুধু প্রতারনাই করে না, সেখানে রাতের বেলায় ভক্ত ও আশেকানের নামে চলে অশ্লিল ও অসামাজিক কর্মকান্ড। হাপানিয়া গ্রামের আঃ জব্বার, মোঃ সহিদুল ইসলাম সহ অনেকেই অভিযোগ করেন আঃ হালিম একজন প্রতারক ও ভন্ড। অবিবাহিত হালিম মাজারের নামে সেখানে যুবতী মেয়েদের নিয়ে অশ্লিলতা সহ গাজার আড্ডা বসিয়ে বেহায়পনা চালায়। তারা আরো জানান, এ নিয়ে মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে বিভিন্ন সময় গ্রামবাসী বাধা দিলে বহুবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
২০০৯ সালের ডিসেম্বর মাসে মৃত মালেকের স্ত্রী রাবেয়া বেগম ও মেয়ে আয়শা আক্তার হালিমের অসামাজিক কাজে বাধা দেন। এ নিয়ে বিরোধের পর হালিমকে ঝাড়ু–পেটা করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়। এর পর থেকে মৃত মালেক শাহর কবর স্থান থেকে ২শত গজ দুরে আদ্বুল হালিম নিজ বাড়ির বসত ঘরে মালেক শাহর নতুন মাজার শরীফ তৈরী করেন। সেখানে নিজেকে গদীনশীন পীর আখ্যা দিয়ে কথিত ভক্তদের নিয়ে প্রতারনা ও অপকর্ম চালায়।
গত ১৩ এপ্রিল স্থানীয় আনোয়ার হোসেন, মন্নান ফরাজি, গৌরনদী থানা জামে মসজিদের ইমাম কারী আব্দুল আজিজ ওই আস্তানায় গিয়ে হালিমকে এহন কাজ থেকে বিরত থাকার আহবান জানায়। এতে হালিম খিপ্ত হয়ে তার সমর্থকদের নিয়ে তাদের কে লাঞ্চিত করে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে গত মঙ্গলবার(১৩ এপ্রিল) সন্ধায় ওই আস্তানায় গ্রামবাসি ও বিক্ষুদ্ব জনতা হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর করে। হামলাকারীরা আস্তানার আসন ঘড়, বসত ঘড়, দান বাকস ভেঙ্গে চুর মার করে দেয়। এসময় প্রতারক হালিমের ভক্ত আবুল কাসেম(৬০) সুফিয়া বেগম(৫৫) রজিনা আক্তার (১৬) শওকত খলিফা(৪০) মাইনুদ্দিন(৩০) সেকেন্দার সরদার(৬০) সবুজ মৃধা(২৫) পলাশ আকন(১৫) সিরাজ হাং (২০)সহ ২০ জন আহত হয়।
এ প্রসংঙ্গে ভন্ড পীর হালিমের কাছে জানতে চাইলে তিনি মালেক শাহর দায়িত্বপ্রাপ্ত খাদম ও গদীনশীন দাবী করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে। ভাংচুর ও লুট পাট করে প্রায় ২ লক্ষাধিক মালামাল ও ভক্তদের দেয়া দান বাক্সের ১লক্ষ টাকা লুঠ করে নিয়ে যায়। এ বিষয়ে গৌরনদী থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ নুরুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুনেছি সে মাজারের নামে প্রতারনা করে থাকে। প্রতারকের বিরুদ্বে অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেয় যেত। হামলা ভাংচুরের ঘটনায় মামলা রুজু হয়েছে।